Sunday, May 5, 2013

চিটফান্ড ইস্যুতে যুযুধান শাসক-বিরোধী

চিটফান্ড ইস্যুতে যুযুধান শাসক-বিরোধী

চিটফান্ড ইস্যুতে মুখোমুখি শাসক ও বিরোধী দল। চ্যালেঞ্জ, পাল্টা চ্যালেঞ্জের জেরে রীতমতো সরগরম রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি, বাড়াবাড়ি করলে চিটফান্ড কর্তাদের সঙ্গে বামেদের যোযাযোগ ফাঁস করে দেবেন তিনি। পারলে তাঁদের গ্রেফতার করুন মুখ্যমন্ত্রী, পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন গৌতম দেব। 

মুখ্যমন্ত্রী রীতিমত হুমকির সুরে বিরোধীদের উদ্দ্যেশে বলেছেন `বেশি চিত্কার করলে পোস্টার করে দেব।`

অন্যদিকে সিপিআইএম নেতা গৌতম দেব চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন `পারলে আমাকে ধরুণ, বুদ্ধকে ধরুণ।` 

পানিহাটির পৌনে দুঘন্টার বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত স্বীকার করে নিলেন নির্বাচনী প্রচারে তাঁর দল চিটফান্ডের টাকা নিয়েছে। গৌতম দেবের পাল্টা তোপ তৃণমূলকে সার্চ করলেই চিটফান্ডের বেশিরভাগ টাকা উদ্ধার হয়ে যাবে। 

সিবিআই তদন্তের প্রশ্নেও একে অপরের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌতম দেব। গৌতম দেব দাবি করেছেন সিবিআই তদন্ত করলেই প্রকাশ্যে আসবে তৃণমূলের সঙ্গে সারদার যোগসাজোশ। 

অন্যদিকে, এর জবাবে মমতা ব্যানার্জী জানিয়েছেন সিবিআই তদন্ত করে তাঁকে ধমকানো চমকানো যাবে না


চিটফান্ড বিরোধী নতুন বিলে সই করলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণ। রবিবার দিল্লি বিমানবন্দরে গিয়ে  বিলে রাজ্যপালের সই করিয়ে আনেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর সঙ্গে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব। আগামিকালই এই বিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন অমিত মিত্র। খুব শিগগিরি যাতে বিলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুমোদন পাওয়া যায় সেজন্য সরকার সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। 


ফেরার হওয়ার আগে তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং মুকুল রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। ৬ এপ্রিল সকাল দশটায় এই বৈঠক হয়েছিল। জেরার মুখে এমনই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি সুদীপ্ত সেনের। 

টানা জেরায় আরও ভেঙে পড়েছেন সুদীপ্ত সেন। যাদের এতদিন হিতাকাঙ্কী বলে জানতাম আজ তারাই ছুরি মারছে। যারা নিয়মিত টাকা নিয়ে গিয়েছেন, তাদেরই এখন উল্টোসুর। পুলিসি জেরায় হতাশা বেরিয়ে এসেছে।





সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে শাসকদল তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের আরও তথ্য সামনে এল।  সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে  মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে একাধিকবার দেখা গিয়েছিল সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে। শতাব্দী রায়ের নির্বাচনী প্রচারে দেখা গিয়েছিল সারদা গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তকে। এবার সেই সোমনাথ দত্তকেই নিজের ভালো বন্ধু বলে পরিচয় দিতে দেখা গেল খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। গত বছর সেপ্টম্বর মাসে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার একটি অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও সোমনাথ দত্ত। 

সারদা কাণ্ডের পর থেকেই সংস্থার ঘনিষ্ট হিসেবে উঠে এসেছে একের পর এক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের নাম। কখনও মদন মিত্র তো,  কখনও আবার শতাব্দী রায়। 

এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। খোদ মন্ত্রীর দাবি সারদা গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্ত তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু। মন্ত্রীর কথায় যে সত্যতা আছে তারও প্রমাণ রয়েছে। দুহাজার বারো সালের নয়ই সেপ্টেম্বর  উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবরার একটি অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে দেখা যায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং সোমনাথ দত্তকে। 

এই ঘটনায় সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূলের নেতা এবং মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টি আরও একবার স্পষ্ট হল খোদ মন্ত্রীর কথাতেই। 



শুধুমাত্র বিরোধীরাই নয়, রাজ্যে চিটফান্ডের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রও। তিনি বলেন, ২০১১ সালে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। এবং বিষয়টি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। ২৪ ঘণ্টাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্‍কারে এমনই চাঞ্চল্যকর কথা বললেন ডায়মন্ডহারবারের এই তৃণূল সাংসদ। সোমেনের এহেন চাঞ্চল্যকর সাক্ষাত্‍করের পর রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য পড়ে যায়। 

সারদাগোষ্ঠীর প্রতারণার জাল এত বিস্তৃত যে এই পরিস্থিতিতে ঘটনার সিবিআই তদন্তই দরকার। এমনই মনে করেন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র। 


চিটফান্ড কেলেঙ্কারিকে রাজ্যের `বৃহত্তম বিপদ` মন্তব্য করে সিবিআই তদন্তের পক্ষেই জোরাল সওয়াল করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, "চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সিবিআই ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতেই হবে।" গরীব মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। 

সারদার চিটফান্ড কেলেঙ্কারির কথা সবটাই জানতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই দাবি বুদ্ধদেব ভাট্টাচার্যের। ভোটের আগে তৃণমূল আর চিটফান্ড এক হয়ে গিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। মুখ্যমন্ত্রীর `পয়লা বৈশাখ` তত্ত্বে সায় দিতে রাজি নন বুদ্ধবাবু। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করে প্রাক্তনের বক্তব্য, ``চিটফান্ডের সংবাদমাধ্যমকে লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার।" বাম আমলে চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে আইন আনা হলেও তা কেন্দ্রের উদাসীনতায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ দিনের চ্যালেঞ্জের জনসভায় তৃণমূল কংগ্রেসকে `দুর্নীতিগ্রস্ত` বলেও কটাক্ষ করেন বুদ্ধদেব। তিনি আরও বলেন, সমাজবিরোধীদের ভাষাই জানেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্যের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি, আইন শৃঙ্খলা একে একে সবই এসেছে আজকের ভাষণে। এড়িয়ে যায়নি এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও। বুদ্ধবাবুর কথায়, ``নতুন সরকার আসায় কর্মসংস্থান শুধু হয়েছে চিটফান্ডে।" প্রেসিডেন্সি কলেজে হামলা থেকে শিলিগুড়ির দলীয় কার্যালয় থেকে অশোক ভট্টাচার্যের মতো নেতাদের গ্রেফতার। সাম্প্রতিক ঘটানার নিরিখে বুদ্ধদেব ভাট্টাচার্যের জবাব, ``সময় আসছে সবকিছুর হিসাব নিকাশ করে নিতে হবে।" 

এদিনের জনসভায় মুখ খোলেন গৌতম দেবও। তাঁর দাবি, তিন মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনও। রাত ১২টায় সুদীপ্ত সেন ও রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে আলোচনা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমনটাই অভিযোগ গৌতম বাবুর। এমনকী মুকুল রায় ও তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

No comments:

Post a Comment