Tuesday, June 30, 2015

মোদির বাংলাদেশ নীতি: প্রণববাবুর আলখাল্লা গায়ে সফর গৌতম দাস

মোদির বাংলাদেশ নীতি: প্রণববাবুর আলখাল্লা গায়ে সফর
গৌতম দাস

মোদির সফর শেষ হয়েছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। মোদি নিজে আগাম অনুমান করে বলেছিলেন তাঁর ফেরত যাবার পরে এই সফর নিয়ে চর্চা শুরু হবে। তা তো অবশ্যই হবে, হচ্ছেও। এগুলোর সার কথা হচ্ছ্‌ দেনা পাওনার দিক থেকে। "হিসাব কিতাবে মোদির দিকেই পাল্লাই ভারি"-- এই সফর শেষে এটাই আমরা শুনছি। এটা না হবার কোন কারণ নাই। সাত তারিখ দিন শেষে রাত বারোটায় (আইনত আট তারিখের শুরুতে )সংবাদ পর্যালোচনায় চ্যানেল আই টিভিতে এসেছিলেন ভারতের দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক বাঙলি সাংবাদিক, দেবদ্বীপ পুরোহিত। তিনিও বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছিলেন বাংলাদেশ সবকিছুই দিচ্ছে, এটা একপক্ষীয় লেগেছে তাঁর কাছেও। তিনি বলছিলেন বাণিজ্যিক স্বার্থের দিক থেকে কিছু দেয়া আর বিনিময়ে কিছু পাওয়া এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কিছু তিনি দেখতে পাচ্ছে না। শেষে ব্যাপারটা তিনি ব্যাখ্যা খুজে না পেয়ে বললেন, "শেখ হাসিনা খুবই উদার। মোদি তাঁকে বিনিময়ে কি দিবেন সেদিকে তিনি কিছুই চিন্তা করেন নাই"। বাংলাদেশের কোন সাংবাদিক নাকি তাঁকে বলেছিলেন, "ভারত কিছু চেয়েছে, পেতে আগ্রহ জানিয়েছে অথচ বাংলাদেশ তাকে তা দেয়নি এমন ঘটে নাই!" - দেবদ্বীপ অবলীলায় এসব স্বীকার করছিলেন। ওদিকে প্রতিদিনই মিডিয়া অসম লেনদেনের বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরকে অসমভাবে বেশি সুবিধা দেয়ায় কিছু দেশী ব্যবসায়ী নরম স্বরে কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে আপত্তি জানানো শুরু করেছে। সারকথায় সবাই বলে চাইছে মোদীর সফর ছিল এক বিরাট অসম বিনিময়ের সফর – কূটনৈতিক ইতিহাসে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মধ্যে এই ধরণের অসম বিনিময়ের নজির পাওয়া কঠিন।

আসলে কি তাই? না, অসম বিনিময় হয় নাই। বাংলাদেশের দিক থেকে ১০০ ভাগের বিনিময়ে যদি ভারতের দিক থেকে মাত্র ১ ভাগ দেয়ার চুক্তি হয়ে থাকে তবু এটা অসম নয় এজন্য যে যখন বিনিময়ে কারও ক্ষমতায় থাকার পক্ষে সমর্থন যোগানোর ব্যাপারটা লেনদেনের মধ্যে একটা ইস্যু হিসাবে হাজির হয়ে যায় তখন ভারত বিনিময়ে কিছুই না দিলেও সেটা সম-বিনিময় অবশ্যই। বিনিময় হয়েছে ক্ষমতায় থাকার ন্যায্যতা লাভ।

বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা যেসব রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছেন এর প্রধান বিষয়টা হল, পাবলিক রেটিং বা জনসমর্থনের ঘাটতি। মোদির সফরের ফলে বাংলাদেশের মানুষ যে বার্তা পেল তা হল যে হাসিনার বাংলাদেশকে দিল্লির খুবই দরকার, অন্তত গোয়েন্দা-আমলাদের ভারতের পারসেপশনে। যেসব সুবিধা তারা পাচ্ছে সেটা সহজে দিল্লি ত্যাগ করতে চায় না, করবে কেন! হাসিনা তাদের জন্য "সন্ত্রাসবাদ" মোকাবিলা করে দিচ্ছে, "তারা বাংলাদেশে গনতন্ত্র চায় মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ চায় না" এসব কথার আড়ালে তারা বাংলাদেশকে দিল্লি নিজেদের পক্ষে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ষ্ট্রাটেজিক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। বিনিময়ে হাসিনাকে একক বৈদেশিক সমর্থনের যোগানদাতা হয়ে থাকাটা খুবই যুক্তিসংত পররাষত্র নীতি। এই সুবিধা তারা ছাড়তে চাইবে কেন!

কিন্তু মনে রাখতে হবে ক্ষমতাসীন্দের পক্ষে বৈদেশিক সমর্থন মানে সেটা দেশের জনগণের সমর্থনের প্রকাশ নয়। এতে মানুষ বড় জোর বুঝল যে এই ক্ষমতা যেভাবেই হোক নিজের পক্ষে ভারতীয় সমর্থন যোগাড় করতে পারছে হয়ত কিন্তু সেটা নিজের প্রতি পাবলিক রেটিং বা জনসমর্থন বাড়বার লক্ষণ নয়। অর্থাৎশেখ হাসিনার মুল প্রয়োজন যদি জনসমর্থন হয় সেটা ভারতের সমর্থনের কারণে পুরণ হচ্ছে না, হবার নয়। ব্যাপারটা এমনও নয় যে ভারত হাসিনার পক্ষে প্রবল সমর্থন তৈরি করেছে এতে হাসিনার বিদেশী ক্ষমতার ভিত্তি শক্তিশালী দেখে নত ও ভীত হয়ে হাসিনার প্রতি পাবলিক সমর্থন ঘুরে যাবে। না, এমন ভাবার কোন কারণ নাই। কিছুটা এমন হতেও পারত যদি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভারতের অন্তত কিছুটা সুনাম থাকত। চুক্তি করে ৬৮ বছর ধরে খেলাপী থাকা ভারত রাষ্ট্র এবার সবে সীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন করে বিরাট এক কাজ করেছে বলে দেখাতে চাইছে। আবার যেন এই চুক্তির সুবিধা কেবল বাংলাদেশই পাবে, ফলে বাংলাদেশকেই যেন দয়া করছে দিল্লি – এতেও দিল্লীর প্রতি জনগণের বড় একটি অংশ বিরক্ত হয়েছে। হবু বাংলাদেশি জনগন এর সুবিধা ভোগ করবে তাই যেন ভারত এই চুক্তি সম্পন্ন করে একতরফা এক বিরাট অনুগ্রহ বা ফেবার বাংলাদেশকে করল।এই মিথ্যা ইমেজ থেকে আমাদের সকলের মুক্ত থাকা দরকার। এই চুক্তির আসল ভোক্তা যারা ভারতের হবু নাগরিক হতে চায় তারাও। ফলে এটা বাংলাদেশকে একতরফা দেয়া ভারতের কোন অনুগ্রহ একেবারেই নয়। আর এটা বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গে পড়ার সাথে তুলনা দেয়া শুধু অতিকথন নয়, ডাহা অর্থহীন। কারণ কাঁটা তারের বেড়া এতে উঠে যায় নি, সীমান্তে বাংলাদেশিরা নিয়মিত মরছেই। এই লেখা যখন লেখা হচ্ছে তার আগের দিনও ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বাংলাদেশীদের হত্যা করেছে।

লাইন অব ক্রেডিট

হাসিনার প্রথম রাজভেট দেবার ভারত সফর ছিল ২০১০ সালে। সেবারই সফর শেষে দেশে ফিরে এসে তিনি ভারত থেকে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ এনেছেন - এটাই তাঁর পক্ষে সবচেয়ে বড় বিশাল অর্জন বলে দাবি করেছিলেন। তখনকার প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ভারত সফরের বিরাট অর্জন হল ঋণ প্রাপ্তির কথাটাকে নিজের মিডিয়া হাইলাইট ও মটিভেশনের প্রধান ইস্যু করেছিলেন। তখন থেকেই জানা যায় লাইন অফ ক্রেডিটের রহস্য। সবাই জানি, ভারতের অর্থনীতি এমন স্তরে পৌছায় নাই যে বাংলাদেশকে বিলিয়ন ডলার ঋণ সাধতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে কনশেসনাল সুদ হারে ঋণ দিবার চেয়ে বরং পেলে ভারতই এমন ঋণ নিতে আগ্রহী। তাহলে এই লাইন অব ক্রেডিট ব্যাপারটা কি?

এককথায় বললে, ভারতের কিছু পণ্য বিশেষত সেই পণ্য ভারতীয় ইস্পাত যার কাঁচামাল -- যেমন রেল লাইন, বগি, বাস ট্রাক ইত্যাদি – সেই সকল উৎপাদিনের বিরাট অংশ প্রতি বছর অবিক্রিত থেকে যায়। এসব অবিক্রিত মালামালের দায় থেকে পরিত্রাণ পেতে একটা ফান্ড তৈরি করা হয়েছে যা পরিচালিত হয় সরকারি বিশেষ ব্যাংক "এক্সিম ব্যাংক" এর মাধ্যমে আর Export-Import Bank of India Act 1981 এর অধীনে। এই ব্যাংকের কাজ হল, সম্ভাব্য ক্রেতাকে লাইন অব ক্রেডিট এর আওতায় লোন দিয়ে এসব অবিক্রিত মালামাল বিক্রির ব্যবস্থা করা যাতে বছর শেষে বিক্রি না হবার লোকসান কমে আসে। সারকথায়, এই ব্যাংকের উদ্দেশ্য হল, ভারতের নিজেদের অবিক্রিত মালামাল লোনে বিক্রির ব্যবস্থা করা, যাতে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো চালু থাকে, প্রায় ৫০ হাজার কর্মচারি যেন বেকার না হয়।

সেজন্য এই আইনের কিছু মূলশর্ত আছে। যেমন এই লোনের খাতক বাংলাদেশকে কিছু শর্ত মানতে হবে। যেমন,

১. যেসব ভারতীয় পণ্য (ভারতীয় ইস্পাত যার কাঁচামাল যেমন রেল লাইন, বগি, বাস ট্রাক ইত্যাদি) এই আইনে ঋণে বিক্রিযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে কেবল তাই কিনতে হবে।

২. এই ঋণের টাকায় অন্তত ৭৫% মামামাল ও সার্ভিস অবশ্যই ভারতীয় উৎস থেকে কিনতে হবে। ৩. পারফরমেন্স গ্যারান্টি বলে আরও একটা ক্লস আছে যার সুদ বাংলাদেশের বেলায় আরও আড়াই পার্সেন্ট যেটার কথা এখানে আড়ালে রেখে কেবল ১% সুদের বিষয়টাই উল্লেখ করা হচ্ছে। (আগ্রহিরা দেখুন Export-Import Bank of India – Role, Functions and Facilities, clause 1.2.5 Guarantee Facilities)

৩. বিশ্বব্যাংকের লোন পরিশোধের সময় ৪০ বছর প্লাস শুরুতে ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ড মানে পরিশোধের হিসাব শুরু হবে। এর তুলনায় এখানে ২০ বছর প্লাস ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড। ৫. এটা বিক্রেতার দেয়া ঋণে ক্রয় বলে, মালামালের দাম কত নিবে তা বাজার যাচাই করে কিনার সুযোগ নাই। বিক্রেতার দামই শেষ কথা।

যেহেতু এই ঋণের উদ্দেশ্য মালামাল উতপাদক ভারতীয় কোম্পানীকে অবিক্রিত মালামালের লোকসানের হাত থেকে বাচানো ফলে, মালামালের ক্রেতা দেশটির স্বার্থ দেখা এই ঋণের উদ্দেশ্যই নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশকে এই ঋণের খাতক বানানো মানে ভারতীয় উৎপাদক কোম্পানীর স্বার্থ পরিপুরণই এখানে প্রধান। এই শর্তগুলো মেনে নিয়েই বাংলাদেশ নিজেকে জড়িত করছে। ভারতীয় কোম্পানীর স্বার্থকে প্রাধ্যন্যে মেনে নিয়ে নিজেকে ঐ কোম্পানীর অবিক্রিত মালামালের খাতক বানানো। এই হল লাইন অব ক্রেডিট। এর সম্ভাব্য ক্রেতা সার্ক দেশ, এই হিসাবে ৬ বিলিয়ন ডলারের একটা ফান্ড তৈরি করা আছে এক্সিম ব্যাংকে।

বিশেষজ্ঞ বা সিপিডির দুর্দশা

হাসিনার সাথে মোদিও বলছেন, "কানেকটিভিটি (যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা) শুধু দুই দেশের জন্য নয়,এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ"। কানেকটিভিটি নিশ্চিত করার মানে কি? বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারবে কিনা, পছন্দের নেতা নির্বাচিত করতে পারবে কি না – এসব রাজনৈতিক মৌলিক বিষয় বাধাগ্রস্থ রেখে কানেকটিভিটি নিশ্চিত করা? এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া কার্যকর হতে না দিয়ে "কানেকটিভিটিকে এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ" বলে মনে করা খুবই বিপদজনক। প্রিন্ট পত্রিকায় যতগুলো আলোচনা বের হয়েছে এতে বিশেষজ্ঞ বা সিপিডির দুর্দশা দেখার মত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রশ্ন সংকটগুলোকে উহ্য বা লুকিয়ে রেখে এই সফর শেষ হয়েছে কিন্তু কেউ তা নিয়ে কথা তুলতে চাচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো বাদে অর্থনীতিক বাণিজ্যিক মূল্যায়প্ন বা বিচারেও কি হাসিনা-মোদির স্বাক্ষরিত এই ২২ চুক্তি ঠিক আছে? প্রথম আলো বলছে "ভারতের সুবিধা বেশি, সুযোগ আছে বাংলাদেশেরও"। বলার এই ধরণটাই বলছে অর্থনীতিক বাণিজ্যিক বিচারেও এই চুক্তি ঠিক নাই।

সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিগুলো খুবই ইতিবাচক। কিন্তু এগুলোর আলোকে পরিকল্পিত বিনিয়োগ করতে হবে, প্রকল্প ঠিক করতে হবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, "সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিগুলো খুবই ইতিবাচক। কিন্তু এগুলোর আলোকে পরিকল্পিত বিনিয়োগ করতে হবে, প্রকল্প ঠিক করতে হবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, 'বাংলাদেশের বন্দর, সড়ক, নৌপথ বা অন্য কোনো সুবিধা ব্যবহারের জন্য মাশুলের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য হার রয়েছে। সেই অনুযায়ী মাশুল নিতে পারলে আমরা লাভবান হব।' – প্রথম আলো ০৯ জুন ২০১৫। অর্থাৎ মোস্তাফিজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চান যে ট্রানজিটে বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনার কোন খবর নাই। ট্রানজিটের মাসুল প্রদান পরিকল্পনারও কোন খবর নাই। অথচ যেটাকে মাসুল প্রদান পরিকল্পনা বলছি ওটাই ট্রানজিট অবকাঠামোর জন্য বিদেশি বিনিয়োগ নিলে তারই পরিশোধের উপায় বা পরিকল্পনার বিষয় হতে পারে। মোদি-হাসিনা স্বাক্ষরিত "সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিগুলোর" মধ্যে এগুলো মারাত্মক নেতিবাচক দিক। কিন্তু তিনি ইতিবাচকভাব ধরে কথাটা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। সারকথায় বললে, তিনি আসলে বলছেন, "সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিগুলো খুবই ইতিবাচক। কিন্তু এগুলোর আলোকে বিনিয়োগ পরিকল্পনা নাই বলে এগুলো নেতিবাচক। কে না জানে, মাসুল প্রদান বা আদায় পরিকল্পনার উপর নির্ভর করছে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা, বিনিয়োগ পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না। আপাতত ভারতের দিক থেকে বিনা বিনিয়োগে পারলে বিনা মাশুলে যা পাওয়া যায় তাই আদায়ের চেষ্টা আছে -এই স্তরে আছি আমরা। অথচ কথা তো পরিস্কার যে মাসুল আদায় পরিকল্পনা এবং তা এমন পরিমাণ হতে হবে যেন তা ট্রানজিট অবকাঠামো বিনিয়োগ পরিশোধের সামর্থের হয় – এই প্রসঙ্গটা ছাড়া ট্রানজিট বা কানেকটিভিটি নিয়ে বাংলাদেশের কারও ভারতের সাথে গলায় গলা মিলিয়ে কথা বলা মানে নিজের সাথে প্রতারণা করা। কারণ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ কেমন করে যোগাড় করা হবে সে কথা তোলা ও চিন্তা না করার মানে হল, বাংলাদেশের নিজ অর্জিত রাজস্ব আয় ব্যয় করে গড়ে তোলা উপস্থিত ট্রানজিট অবকাঠামো ভারতের বাণিজ্য পেতে খরচ হতে দেওয়া। আর দুএক বছরের মধ্যে উপস্থিত ও সীমিত অবকাঠামো অতি ব্যবহারে ভেঙ্গেচুরে পড়ার পর ঐ সমস্ত পথে বাংলাদেশের নিজেরও অর্থনীতিকে অবকাঠামোর অভাবকে সংকটে স্থবির করে ফেলা। সোজা কথা, বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, প্রতিশ্রুতি ও বাজার ব্যবস্থার হিসাব কষে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ উঠে আসা ও লাভের মুখ দেখার হিসাব নিকাশ পরিচ্ছন্ন না করে ট্রানজিট চুক্তি করা মানে বাংলাদেশের নিজের অর্থনীতিকেই মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঢুকিয়ে দেয়া। অর্থনৈতিক যুক্তির দিকে থেকে বলা সহজ ভারতকে ট্রানজিট অবশ্যই দেয়া সম্ভব কিন্তু এর প্রথম শর্ত হল, ট্রানজিটের রাস্তাঘাট অবকাঠামো বিনিয়োগ মাসুল ইত্যাদি শুরু থেকেই পরিকল্পনার মধ্যে রাখা এবং এই বিনিয়োগে দুই দেশের জনগ লাভবান হবে তার অর্থনৈতিক হিসাবনিকাশ স্পষ্টভাবে করা । মোদি-হাসিনা যে চুক্তি সম্পন্ন হল তাতে এমন পরিকল্পনা একেবারে অনুপস্থিত। এই বিষয়ে আলোচনার কেন্দ্রিয় বিষয় - অবকাঠামো বিনিয়োগ – মাসুল। এটা মোস্তাফিজ অস্বীকার করতে পারছেন না। তাই প্রথম আলোর বেলায় বলেছিলেন – যদি অবকাঠামো বিনিয়োগ – মাসুল ইত্যাদি পরিকল্পনা থাকে তবে "সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিগুলো খুবই ইতিবাচক"। মোস্তাফিজ ভাল মতই জানেন এসব পরিকল্পনার খবর নাই। বলাবাহুল্য আমরা অর্থনৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকে কথা বলছি। রাজনৈতিক বিতর্ক – বিশেষত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নটি ভিন্ন একটি গুরুতর রাজনৈতিক বিষয়।

কিন্তু সমকাল পত্রিকার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মোস্তাফিজ এবার আর বুদ্ধিমান থাকলেন না, নিজেকে সারেন্ডার করলেন। সমকাল পত্রিকার বেলায় এসে আরও বড় ধরণের মিথায় মাতলেন, যাকে তথ্যগত জোচ্চুরি বলা যায়। "সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন", সমকাল জানাচ্ছে, "বর্তমানে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ৯০ ভাগই হয় স্থলপথে। উপকূলীয় বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়ন হলে সমুদ্রপথে বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বলেন, ভারত কিংবা এ অঞ্চলের সঙ্গে 'কানেক্টিভিটি' প্রশ্নে বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের দরকার হবে। ভারত নতুন যে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা দিয়ে রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা যাবে"। শেষ বাক্যটা ডাহা মিথ্যা কথা, মিথ্যা প্রলোভনের প্রলাপ।

প্রথম কথা হল, ট্রানজিটের অবকাঠামো খাতে ব্যবহারের জন্য ভারত আমাদের ঋণ অফার করে নাই। দ্বিতীয়ত, ট্রানজিট বাংলাদেশ অবকাঠামোতে বিনিয়োগের দায় ভারত নিবে কি না তা আমরা কেউই জানি না। আলোচনার টেবিলে বিষয়টি এখনও ইস্যু হতে পারে নাই। এছাড়া ভারত আদৌ মাসুল দিবে কিনা – দিলেও সেটা নাম কা ওয়াস্তেফবে নাকি এর পরিমাণ বিদেশি অবকাঠামোগত বিনিয়োগ পরিশোধের মত পরিমাণের হবে কি না – তা আমরা কেউ এখনও পর্যন্ত কিছুই জানি না।

এই পরিস্থিতিতে মোস্তাফিজ খামোখা দাবি করে বলছেন, "ভারত নতুন যে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা দিয়ে রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা যাবে"। তাঁর এই দাবির ভিত্তি কি আমরা জানি না। বরং আমরা ইতোমধ্যেই এটা জানি যে, ভারতের লোনের প্রতিশ্রুতি ভারতের অবিক্রিত ইস্পাত মালামাল বিক্রিকে প্রমোট করার জন্য – এটার এর মুল ঘোষিত উদ্দেশ্য।

এসব নিয়ে মোস্তাফিজকে চ্যালেঞ্জ করে অনেক কথা বলা যায়। সেসব তর্ক-বিতর্ক নিজে না তুলে মোস্তাফিজেরই সিনিয়র, তাঁর সংগঠন সিপিডির প্রধান নির্বাহী দেবব্রত ভট্টাচার্যের মুখ থেকে শোনা যাক।

প্রথম আলোকে দেবপ্রিয় বলছেন, "২০০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে রূপান্তরিত করে বহুপক্ষীয় যোগাযোগের জন্য অনুদান হিসেবে দেওয়াটাই উত্তম বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন,১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতুতে অনুদান দেওয়া ছাড়া বাকি ঋণের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়"।

অতএব দেবপ্রিয় আমাদের পরিস্কার করছেন, নিজের রিডিং আমাদের বলছেন,

১। এবারের মোদি সফরের লাইন অব ক্রেডিটে ২০০ কোটি বা ২ বিলিয়ন লোন এটা ট্রানজিটের (বহুপক্ষীয় যোগাযোগের) জন্য দেয়া নয়, দেবপ্রিয় আশা করেন এটা হওয়া উচিত।

২। এই অর্থ বাংলাদেশকে বিনা সুদে ও বিনা আসল ফেরতে অনুদান হিসাবে দেয়া উচিত।

৩। ২০১০ সালে হাসিনার ভারত সফরে তিনি প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন ১০০ কোটি ডলারের। দেবপ্রিয় না খুলে সংক্ষেপে এবং ভদ্রলোকের ষ্টাইলে ও ভাষায় বলছেন, ঐ "ঋণের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়"।

অর্থাৎ "ভারত নতুন যে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে" - মোস্তাফিজুর রহমানের এই মিথ্যা দাবি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যই বিরোধীতা করছেন, সঠিক মনে করছেন না। আমরা আর সিপিডির বাইরের থেকে আর বাড়তি কি যোগ করব।

দক্ষ ও ভোকাল প্রাক্তন আমলা্দের মধ্যে একমাত্র আকবর আলি খানকেই দেখা যায় সরাসরি ট্রানজিট নিয়ে কথা বলছেন। ট্রানজিট প্রসঙ্গে তাঁর অবস্থান হল, (এবং এটাই সঠিক অবস্থান) ভারত ট্রানজিট পেতে চাইলে এবং বাংলাদেশ নিজের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের দিক থেকে যদি ট্রানজিট দেওয়া ইতিবাচক মনে করে থাকে ততাহলে ট্রানজিট অবকাঠামোর সমস্ত খরচ ভারতের বাংলাদেশকে বিনা সুদে বিনিয়োগ হিসাবে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ বিনা সুদে বিনিয়োগ জোগাড়ের দায়িত্ব ভারতকে নিতে হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিশোধ করতে হয় এমন পরিমাণের মাসুল দিতে ভারতকে প্রস্তুত হতে হবে। আকবর আলির বক্তব্যের যুক্তি হোল, যেহেতু বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ নিজেই বিনিয়োগ করে করে ফেলেছে এবং ব্যবহার করছে। ফলে ভারত নিজের জন্য যে অবকাঠামো ব্যবহার করবে বিনা সুদে তার বিনিয়োগ বাংলাদেশকে যোগাড় করে দেবার দায়দায়িত্ব একান্তই ভারতের। এবং স্বভাবতই ঐ অবকাঠামো ব্যবহারের মাসুল এমন হতে হবে যেন তা থেকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিশোধ করতে সমর্থ হয়।

যেমন নৌট্রানজিট , -- যেটা এবার চুক্তি হয়েছে -- সেটা একেবারেই অসম ও মাঙনায় করা হয়েছে, উপরের এই ন্যূনতম নীতিও মানা হয় নাই। শেখ মুজিবের আমলের এই চুক্তিতে লামসাম মাসুল অর্থ বছরে পাঁচ কোটি টাকা ধরা ছিল। এখন এটাকে আবার লামসাম হাঁকার পরিমাণ ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। অনেকের মনে হতে পারে নৌট্রানজিটে দিতে আবার অবকাঠামোগত খরচ কি? কাষ্টমস অফিস আর ষ্টাফ ছাড়া কোন খরচ এখানে নাই। ধারণাটা একেবারেই ভিত্তিহীন। নৌচলাচল উপযোগী রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং করা গুরুত্বপুর্ণ নইলে ঐপথ চলাচলের অনুপযোগী হবে। ইতোমধ্যেই ভারতের তাগিদে ড্রেজিং করা হচ্ছে। আর ভারতের দেয়া লোনে ভারতের নির্ধারিত দামেই ভারতীয় ড্রেজার কিনতে হচ্ছে। এছাড়া নৌট্রানজিট মাসুল বাণিজ্যিকভাবে নির্ধারিত হয় নাই। ঠক আছে আপনারা চা খাইয়েন – জাতীয় এক লামসাম পরিমাণ সেখানে আছে। তাও সে চা খাওয়ার পয়সাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয় না, কয়েক বছরের বাকি পড়ে আছে।

যাই হোক, দ্বিতীয় পয়েন্টে দেবপ্রিয় সম্ভবত আকবর আলি খানের অবস্থানটাই নিতে চাইছেন। কিন্তু দেবপ্রিয়ের একটা শব্দের অর্থে গড়মিল আছে - অনুদান। অনুদান শব্দটা দেবপ্রিয় ব্যবহার করেছেন যেটা ইংরাজি গ্রান্ট শব্দের বাংলা। অর্থ হল, কাউকে কিছু একটা করতে যেমন একটা স্কুল গড়তে এককালীন অর্থ গ্রান্ট দিয়ে সাহায্য করা। স্বভাবতই দিয়ে দেওয়া এই অর্থের আসল এবং সুদ ফেরত দেবার বালাই নাই। বিদেশি দাতাদের আমাদের সরকারকে দেয়া grant aid শব্দটার অর্থ এটাই। কিন্তু দেবপ্রিয় সুদ দিতে হবে না তবে আসল ফেরত দিতে হবে এই অর্থে 'অনুদান' শব্দটা ব্যবহার করেছেন। দেবপ্রিয়ের জন্য সঠিক শব্দ হত "বিনা সুদের ঋণ" – অনুদান নয়।

মোদি দক্ষ সেলসম্যান

মোদির সফর নিয়ে কংগ্রেস প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন নাকি বলেছেন মোদি তার চেয়ে বেশি দক্ষ সেলসম্যান। কারণ তিনি কোন প্রতিশ্রুতিই পূরণ না করেই ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে ট্রানজিট নিতে এসেছিলেন, পারেন নাই। কিন্তু মোদি সেই একই প্রতিশ্রুতি না মিটানোর বান্ডিল নিয়েই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন কিন্তু ট্রানজিট হাসিল করে নিয়ে গিয়েছেন। মালামাল না দিবার লিষ্ট ভিন্নভাবে প্যাকেজ করার জন্যই নাকি মোদির এই সফলতা। বিষয়টা সত্যিকারের খবর নাকি কংগ্রেসের মিডিয়ার জল্পনা-কল্পনা ছাপিয়ে দেওয়া খবর নিশ্চিত নাই। কিন্তু ইস্যুটা যেহেতু উঠেছে ওর সারকথা হল, হাসিনা ২০১১ সালে দেন নাই ভেবেছিলেন কাকাবাবু প্রণব প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন, তাকে বাংলাদেশের মানুষের সামনে বেইজ্জতি করছেন তাই তিনি থমকে দাঁড়িয়েছিলেন। আর তিনি তখন তাঁর বৈধ সরকারের ক্ষমতাকালের মাঝমাঝি, ফলে বৈধতার সংকটে ছিলেন না। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন, হাসিনার নিজেরই গরজ বড় প্রবল। আভ্যন্তরীণ পাবলিক রেটিং, রাজনৈতিক সংকটের তীব্রতা ভারতের সমর্থন দিয়ে পুরণ হবার বিষয় নয় জেনেও যতটা যা পাওয়া যায় তাই পুরনের কোশেশে লেগে পড়েছেন। এটাই মনমোহনের পুরান প্রতিশ্রুতি বা পুরানা মালামাল মোদির হাত থেকে সাদরে কিনবার জন্য হাসিনার আগ্রহ বলে দাবি করা হচ্ছে। স্বভাবতই এটা পুরাপুরি মিথ্যা পাঠ।

তবে এবারের সফর থেকে উঠে আসা এক তাৎপর্যপুর্ণ দিক হল, আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমের হাহুতাশ আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষত পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুতপ্লান্ট তৈরির কাজ ভারতের কোম্পানী রিলায়েন্স ও আদানির লুটে নেওয়ায়। এপর্যন্ত শুধু এই ইস্যুতে প্রথম আলো দশটা রিপোর্ট করে ফেলেছে। এথেকে বোঝা যায় পশ্চিমা ও তাদের সমর্থক সুশীল রাজনীতি গ্রুপের হতাশা কত তীব্র ও গভীর। তবু আকবর আলি খানের মন্তব্য সঠিক। আমাদের চলতি রাজনৈতিক সংকটের উত্তরণে মোদির এই সফরের কোন ভুমিকা নাই। হাসিনার জন্য এটা কোন লিভারেজ নয় এটা।

ষ্টেজ যেভাবে সাজানো ছিল, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১১ সালে যা অভিনীত হবার কথা ছিল তা পিছিয়ে যায়। অঙ্ক কিছুটা স্থগিত হয়ে যায়। ইতোমধ্যে একালে এসে রাজাই খোদ বদল হয়ে যায়। তবু পুরান সেই অভিনয়টা যেহেতু এবার শেষ করতে হবে, তাই মোদি এবারের সফরটা হল, প্রণবের প্রম্পটে বহু আগেই নির্ধারিত প্রধানমন্ত্রীর ভুমিকায় অভিনয় করতে আসা; যেন মোদি এখন নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েও মোদির ভুমিকায় নন, পুরান প্রধানমন্ত্রীর পেন্ডিং ভুমিকায় – তারই হয়ে পুরানা আলখাল্লার ভাড়া খেটে গেলেন। এই অর্থে মোদির এবারকার সফর তাঁর আমলা-গোয়েন্দার প্রম্পটের অধীনতার সফর। এটা মোদির নয়, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী পদটার কিছু পুরানা দায় বহন করা। আগামি ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে মোদি নিজের নতুন বাংলাদেশ নীতি দেখাতে না পারলে বুঝতে হবে তার বিকাশের রাজনীতি, সবকা বিকাশ সবকা সাথ – এসবই ভুয়া বলে প্রমাণিত হবে।
- See more at:

মোদির সফর শেষ হয়েছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। মোদি নিজে আগাম অনুমান করে বলেছিলেন তাঁর ফেরত যাবার পরে এই সফর নিয়ে চর্চা শুরু হবে। তা তো অবশ্যই হবে, হচ্ছেও। এগুলোর সার কথা হচ্ছ্‌ দেনা পাওনার দিক থেকে। "হিসাব কিতাবে মোদির দিকেই
Like · Comment · 

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Census 2010

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors