Tuesday, July 30, 2013

মমতার মুখে গণতন্ত্রের উত্‍সব

মমতার মুখে গণতন্ত্রের উত্‍সব

মমতার মুখে গণতন্ত্রের উত্‍সব
তখনও সব গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি৷ কিন্ত্ত ট্রেন্ড পরিষ্কার, পাঁচ দফার ভোটে গ্রামবাংলায় সবুজের অভিযান হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর তথা তৃণমূল নেত্রীর কথাতেও যেন উঠে এল সেই অভিযানের কথাই৷ সোমবার সন্ধ্যায় মহাকরণ ছাড়ার মুহূর্তে তাঁর নিজের কথাতেই, 'কংগ্রেস-সিপিএম আর কতগুলি রাজনৈতিক দল অঘোষিত ভাবে জোট গড়ে লড়েছিল৷ আর, মানুষের মহাজোট ছিল তৃণমূল কংগ্রেস৷ মানুষই শেষ হাসি হেসেছে৷ আজ গণতন্ত্রের উত্‍সব৷' এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যে, বিরোধীদের অঘোষিত জোটে সামিল হয়েছিল কেন্দ্র, নানাবিধ সাংবিধানিক শক্তি (ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই শব্দচয়নের অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, আদালত, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ) ও বিদেশি শক্তিও৷ অবশ্যই জয়ের বাতাবরণের মধ্যে বিতর্কের ছোঁয়াচ এড়াতে তিনি এটাও জানিয়েছেন, সাংবিধানিক সংস্থাগুলির প্রতি তিনি গভীর ভাবে শ্রদ্ধাশীল৷ 



ওদিকে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দপ্তরের পরিবেশ তখন রীতিমতো থমথমে৷ হার স্বীকার করে নিয়েও তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই কারণ হিসাবে তুলে ধরতে ব্যস্ত রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু৷ তাঁর মতে, 'যেখানে সন্ত্রাস, সেখানেই তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে৷ এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা৷ তাই গ্রাম বাংলার মানুষের স্বাভাবিক মত প্রতিফলিত হতে পারল না৷' যদিও দলের একাংশ বলছে, মানুষ মুখ ফিরিয়ে রাখাতেই এই ফল৷ ২০১১-তে ক্ষমতা হারানোর পর এই প্রথম কোনও সাধারণ নির্বাচনেও জোর ধাক্কা খেল সিপিএম৷ মাঝে হাওড়া লোকসভার উপনির্বাচনে তিন শতাংশ ভোট বাড়াতে পেরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, ভোট ব্যাংকে ধস আটকে দেওয়া গিয়েছে৷ কিন্ত্ত পঞ্চায়েতের ফলাফল অন্য কথাই বলছে৷ বামেদের সামগ্রিক ক্ষতির মধ্যে আলাদা করে ধরা পড়েছে আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআইয়ের মতো শরিক দলগুলির দুর্দশা৷ 



তাদের ছাড়া তৃণমূলের চলবে না, লোকসভা ভোটের আগে পঞ্চায়েতের ফলাফলে এই রাজনৈতির সমীকরণ হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের৷ গ্রাম তাদেরও বিমুখ করেছে৷ কিন্ত্ত সিপিএমের সুরেই সন্ত্রাসের অভিযোগকে হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, '২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এ সব চলবে না৷ সেই পরিণতির জন্য যেন তৈরি থাকে তৃণমূল কংগ্রেস৷' এদিনের ঘোষিত ফলাফল সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী মমতার ঘোষণা, 'এই মুহূর্তে যা প্রবণতা, তাতে অন্তত ১৩টিতে আমরা জেলা পরিষদ গড়ছি৷ মালদা ও উত্তর দিনাজপুরে ত্রিশঙ্কু হাল৷' কিন্ত্ত, রাজনীতির দীর্ঘদৌড়ের হিসাব কষতে ত্রিশঙ্কু সমীকরণেও রুপোলি রেখার আঁচড় কাটতে ও ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেছেন, 'ওই সব জেলাতেও যারা জিতেছে, তারা আমাদের সঙ্গে আসতেই পারে৷' ফলে, সে অর্থে জয়ের মুহূর্তেও 'একলা চলো'র জয়গান তিনি গাইতে নারাজ৷ যদিও, দৃশ্যত খুশি মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন,'বিধানসভা ভোটের পর তো এ বার আলাদা ভাবে লড়লাম৷ সিপিএম-কংগ্রেস ও অন্যান্য দল যা ভোট পেয়েছে, তার তুলনায় আমরা অনেক বেশি ভোট পেয়েছি৷ ভোটের শতাংশে ৭৪-৭৫ শতাংশ৷ জঙ্গলমহলে দারুণ ফল করেছি৷ ২৯০টা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৭৫টা পেয়েছি৷ আগে যেসব আসনে সি পি এম জিতেছিল, সেগুলোতে আমরা জিতেছি৷' 



তবে, সংবাদমাধ্যমের সামনে হাহাকার করলেও, সাংগঠনিক স্তরে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব এই ফলাফলের মধ্যেও কিছু ইতিবাচক দিক দেখতে পেয়েছেন৷ যেমন, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়ার মতো জেলায় কিছু পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ভালো ফল করেছে ফ্রন্ট৷ প্রদত্ত ভোটের মধ্যে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের শতাংশও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে বলে আলিমুদ্দিন সূত্রের দাবি৷ তবে জঙ্গলমহল, বর্ধমানের মতো জেলায় তৃণমূল বড় ধাক্কা দিয়েছে বলে মানছেন বাম নেতারা৷ অন্য দিকে মুর্শিদাবাদ ছাড়া রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস৷ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির জেলা রায়গঞ্জে তৃণমূল তেমন সুবিধা করতে না পারলেও জেলা দখলের লড়াইয়ে প্রিয়জায়াকে ছাপিয়ে গিয়েছে বামফ্রন্ট৷ ঠিক তেমনি উত্তর ২৪ পরগনায় ২০০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র দু'টি পেয়েছে কংগ্রেস৷ মালদাতেও বামেদের 'নবজাগরণ' চিন্তায় ফেলেছে খান চৌধুরি পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Census 2010

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors