Wednesday, August 28, 2013

আর্থিক ঘাটতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিল ফিচ, ডিজেলের এককালীন দাম বাড়ানোর দাবি

আর্থিক ঘাটতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিল ফিচ, ডিজেলের এককালীন দাম বাড়ানোর দাবি
আর্থিক ঘাটতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিল ফিচ, ডিজেলের এককালীন দাম বাড়ানোর দাবি
নয়াদিল্লি: গত চার মাসে ডলারের নিরিখে টাকার বিনিময় দর ১২ শতাংশ পড়েছে৷ এর ফলে তেল আমদানির খরচ বেড়ে গেছে দেশের তেল বিপণন সংস্থাগুলির৷ কিন্ত্ত, সরকারের নির্ধারিত দামে বাজারে ডিজেল, কেরোসিন এবং এলপিজি বিক্রি করতে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ তাদের ক্রমেই বাড়ছে৷ এই ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ডিজেলের এককালীন দাম বাড়ানোর দাবি জানাল দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি৷

ভর্তুকি পুরোপুরি না ওঠা পর্যন্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলি প্রতি মাসে ৫০ পয়সা করে ডিজেলের দাম বাড়াবে বলে জানুয়ারি মাসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ সেইমতো, ধাপে ধাপে ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩.৭৫ টাকা৷ এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ ডিজেলে লিটার প্রতি ভর্তুকির পরিমাণ নেমে এসেছিল ৩ টাকায়৷ কিন্ত্ত, মে মাসের গোড়া থেকে এখনও পর্যন্ত ডলার সাপেক্ষে টাকার দাম ১২ শতাংশ পড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে এবং প্রতি লিটার ডিজেলে ভর্তুকির পরিমাণ ফের ১০.২২ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে৷ ডিজেল ছাড়াও প্রতি লিটার কেরোসিনে তেল ও রান্নার গ্যাস (১৪.২ কেজির সিলিন্ডার) বিক্রিতে তেল সংস্থাগুলির যথাক্রমে ৩৩.৫৪ টাকা এবং ৪১২ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে৷

রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের ডিরেক্টর (ফিনান্স) পি কে গোয়েল বলেন, 'ডিজেলের এককালীন দাম বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি৷ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে৷' গোয়েল বলেন, 'ডিজেল, রান্নার গ্যাস (১৪.২ কেজির সিলিন্ডার) ও কেরোসিনের জন্য চলতি অর্থবর্ষে সরকারকে ৮০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে বলে প্রাথমিক অনুমান করা হয়েছিল৷ এখন ওই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৪০,০০০ কোটি টাকায়৷' ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময় দর ১ শতাংশ পড়লে তেল সংস্থাগুলিকে দেয় ভর্তুকির পরিমাণ ৮,০০০ কোটি টাকা বেড়ে যায়৷

টাকার দরে পতনের কারণে ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মতো তেল সংস্থাগুলি চায় ডিজেলের এককালীন দাম প্রতি মাসে আরেকটু বাড়ানো হোক৷ কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি কয়েকদিন আগেই জানিয়েছিলেন ডিজেলের এককালীন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে, তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ মইলি অবশ্য জানিয়েছিলেন, 'এলপিজি এবং কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই৷'

সরকারের নির্ধারিত দামে সস্তায় ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিন বিক্রি করার জন্য ভর্তুকি বাবদ তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাকে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৮,০০০ কোটি টাকা দেবে সরকার৷ ওই টাকা দেওয়া হবে ১৭ সেপ্টেম্বর৷ আইওসি পাবে ৪,২৬১.২৯ কোটি টাকা, বিপিসিএল পাবে ১,৯১৬.৫৭ কোটি টাকা, এইচপিসিএল পাবে ১,৮২২.১৪ কোটি টাকা৷

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম (এইচপিসিএল) ও ভারত পেট্রোলিয়ামের (বিপিসিএল) লোকসান হয়েছে ২৫,৫৭৯ কোটি টাকা৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ৮,০০০ কোটি টাকা বাদে, তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে ওএনজিসি দেবে ১২,৬২১.৭৮ কোটি টাকা, অয়েল ইন্ডিয়া দেবে ১,৯৮২.০৬ কোটি টাকা এবং গেইল দেবে ৭০০ কোটি টাকা৷ এর থেকে আইওসি পাবে ৮,১৫১.৭৭ কোটি টাকা, বিপিসিএল ৩,৬৬৬.৩৬ কোটি টাকা এবং এইচপিসিএল পাবে ৩৪৮৫.৭১ কোটি টাকা৷

তেল আমদানি বাবদ এবং তেলের ভর্তুকি বাবদ সরকারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে চলতি খাতে ঘাটতি জাতীয় উত্‍পাদনের ৪.৮ শতাংশে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ভারতের সরকার নিয়েছে তা পূরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে রেটিং সংস্থা ফিচ৷ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমছে৷ সেই কারণেই আর্থিক ঘাটতি বাড়তে পারে বলে মনে করে ফিচ৷ সংস্থাটি জানিয়েছে, আর্থিক ঘাটতি নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে না রাখতে পারলে তারা ভারতের 'ক্রেডিট রেটিং' কমাতে পারে৷ ভারতের জাতীয় উত্‍পাদন বৃদ্ধির হার, মূল্যবৃদ্ধি, চলতি খাতে ঘাটতি প্রভৃতির উপরেও তাদের নজর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিচের বিশ্লেষক আর্ট উ৷ এই মুহূর্তে ভারতের ঋণযোগ্যতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বলেই জানিয়েছে সংস্থাটি৷ কিন্ত্ত, সরকার বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে ঋণযোগ্যতা কমিয়ে দেবে বলে সতর্ক করেছে ফিচ৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Census 2010

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors