Thursday, April 2, 2015

ঠাকুর্দার ঝুলি.....

ঠাকুর্দার ঝুলি.....
=======
# "... রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা, দ্বারকানাথ ঠাকুরের তেতাল্লিশটা বেশ্যালয় ছিল কলকাতাতেই। এত উপার্জন করেও দ্বারকানাথ ঠাকুরের আশা মেটেনি। মদের ব্যবসা শুরু করলেন। প্রচুর অর্থ কামিয়েছিলেন তাতে। আবার নতুন ব্যবসা শুরু করলেন আফিমের্। আফিমে নেশাগ্রস্ত হয়ে দেশের লোকের সর্বনাশ হলেও তাতে কিছু এসে যেতনা তার। আর একটি রোজগারের বড় উৎস ছিল বিপদগ্রস্ত লোকদের হিতাকাঙ্খী সেজে মামলা মোকদ্দমার তদবির করা। চব্বিশ পর্গণার সল্ট এজেন্টও ছিলেন তিনি। তাতেও ভালো আয় হয় তার। তারপর হয়েছিলেন সেরেস্তাদার এবং পদোন্নতির ফলে হন দেওয়ান। এসবই ছিল তার সংসারে আর্থিক মধুবর্ষণ॥"     ( আনন্দবাজার - ২৮ শে কার্তিক, ১৪০৬)
# "... ধর্মমন্দিরে ধর্মালোচনা আর আর বাহিরে আসিয়া মনুষ্য শরীরে পাদুকা প্রহার - একথা আর গোপন করিতে পারিনা। ইত্যাদি নানা প্রকার অত্যাচার দেখিয়া বোধ হইল পুষ্করিনী প্রভৃতি জলাশয়স্থ মৎস্যের যেমন মা বাপ নাই, পশুপক্ষী ও মানুষ যে জন্তু যে প্রকারে পারে মৎস্য ধরিয়া ভক্ষণ করে, তদ্রুপ প্রজার স্বত্ত্ব হরণ করিতে সাধারণ মনুষ্য দূরে থাকুক যাহারা যোগী ঋষি ও মহা বৈষ্ঞ্চব বলিয়া সংবাদপত্র ও সভাসমিতিতে প্রসিদ্ধ, তাহারাও ক্ষুৎক্ষামোদর॥" 
(কাঙাল হরিনাথের "অপ্রকাশিত ডায়েরী")
# "... মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের এতগুলো ছেলেমেয়ের মধ্যে জমিদার হিসেবে তিনি নির্বাচন করলেন চোদ্দ নম্বর সন্তান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। এও এক বিস্ময়। অত্যাচার, শোষণ, শাসন, চাবুক, চাতুরী প্রতারণা কলাকৌশলে কি রবীন্দ্রনাথই কি যোগ্যতম ছিলেন তার পিতার বিবেচনায়? অনেকের মতে তার পিতৃদেব ভুল করেননি। প্রচন্ড বুদ্ধিমান ও প্রতিভাবান রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতা বহু বিষয়েই অনস্বীকার্য॥" (শ্রী স্বপন বসু / গণঅসন্তোষ ও উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ)
# "... কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ তার 'মিঠেকড়া'তে পরিষ্কার বলেই দিয়েছিলেন যে, "রবীন্দ্রনাথ মোটেই লিখতে জানতেন না, স্রেফ টাকার জোরে ওর লেখার আদর হয়। কিন্তু বরাবর এতো নির্বোধের মতো লিখলে চলে কখনো? 'গীতাঞ্জলি' নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর জনরবের কি ধূম - রবীন্দ্রনাথ কোন বাউলের খাতা চুরি করে ছেপে দিয়েছেন। শেষে অবশ্যি নামও জানা গেল - স্বয়ং লালন ফকির মহাশয়ের বাউল গানের খাতা চুরি করেই রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। আজ অবিশ্বাস্য্য শোনালেও একথা কিন্তু সত্যি, সেদিন বহু ব্যক্তি শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন কর্তাকে বলেছেন এবং লিখেছেন - রবিবাবু বড় কবি স্বীকার করি। যাকগে, তা গীতাঞ্জলির খাতাটা এবার উনি ফিরিয়ে দিন। প্রাইজ তো পেয়েই গেছেন, অনেক টাকাও হাতে এসে গেছে, ওতো আর কেউ নিতে যাচ্ছে না, তা গান লেখা খাতাটা উনি দিয়ে দিন।"
পাঁচকড়ি বাবু সত্যিই বিশ্বাস করতেন যে, রবীন্দ্রনাথের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা একটা হুজুগ মাত্র। কারণ রবীন্দ্র সাহিত্য অনুরাগ বিশুদ্ধ ন্যাকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। পাঁচকড়ির বাবু একথাও বহুবার স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন - রবীন্দ্রনাথের প্রায় যাবতীয় সৃষ্টিই নকল। বিদেশ থেকে ঋণ স্বীকার না করে অপহরণ॥" ( সুজিত কুমার সেনগুপ্ত / জ্যোতির্ময় রবি ও কালো মেঘের দল)
# "... রবীন্দ্রনাথের অখ্যাত দাদাদের মধ্যে সবচেয়ে গুণী সোমেন্দ্রনাথ। তিনি ছোটবেলায় ছোটভাইয়ের কবিতার সমঝদার বের করার জন্য আমলাদের মাঝখানে ঘুরে বেড়াতেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেই লিখেছেন - 'আমার দাদা এই সকল রচনায় গর্ব অনুভব করিয়া শ্রোতা সংগ্রহের উৎসাহে সংসারকে একেবারে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিলেন।'
রবীন্দ্রনাথ যেবার নোবেল প্রাইজ পেলেন সোমেন্দ্রনাথের কী আনন্দ। সারা বাড়িতে দৌড়ে বেড়ান আর চিৎকার করেন - 'রবি প্রাইজ পেয়েছে, রবি প্রাইজ পেয়েছে।' আবার নাতিরা যখন তার কাছে যায় তিনি ঘরের ভেতর ডেকে এনে ফিসফিস করে বলেন, 'জানিস তো গীতাঞ্জলির সবকটি কবিতা কিন্তু আমার লেখা। রবি আমার কাছ থেকেই তো নিয়েছে।' এই কথা শুনে নাতিরা যখন বলেন, 'তাহলে তুমি এত আনন্দ করছ কেন', সোমেন্দ্রনাথ তখন খেপে যান, চেঁচিয়ে বাড়ি মাৎ করে বলেন, 'তোদের এত হিংসে কেন রে, আমার ছোটভাই নোবেল প্রাইজ পেয়েছে, আমি আনন্দ করব না তো কে করবে? কার লেখা তাতে কী?'
অন্যদিকে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর মনে হয় রবীন্দ্রনাথের উপর তিনি ক্ষুব্ধও হয়েছিলেন। সোমেন্দ্রনাথ পিছনে তাকে কেরাণী বলে তিরস্কার করতেন। তার অর্থ এও হতে পারে যে তার লেখাগুলোই কেরাণীর মত লিখে দিয়ে পেয়ে গেলেন নোবেল প্রাইজ। কিছুদিন এমন হযেছিল যে বাড়িতে কোন অতিথি এলেই তাকে নিয়ে গিয়ে বলতেন, 'চল আমার সঙ্গে। আমার বাড়ীতে একজন কেরাণী আছে। তাকে দেখবে চল।' তারপর আঙূল বাড়িয়ে দেখিয়ে বলতেন, 'ঐ দেখ কেরাণী, কলম পিষছে তো পিষছেই।' তার ধারনা ছিল তিনি যদি ঠিকমত লিখতেন, তাহলে ছোটভাইয়ের চেয়ে অনেক বড় লেখক হতে পারতেন॥"                                  (অমিতাভ চৌধুরী / ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ)
# "... রবীন্দ্রনাথের বই অনেক সময় বিক্রী করতে হযেছে অর্ধেক দামেও। তা নিয়ে সেকালে কম ঠাট্টা বিদ্রুপ হয়নি। ১৯০০ সালে কবির বন্ধু প্রিয়নাথ সেনকে তিনি লিখেছিলেন - 'ভাই, একটা কাজের ভার দেব? আমার গ্রন্থাবলী ও ক্ষণিকা পর্যন্ত সমস্ত কাব্যের কপিরাইট কোন ব্যক্তিকে ৬০০০ টাকায় কেনাতে পারো? শেষের বইগুলি বাজারে আছে, সে আমি সিকিমূল্যে তার কাছে বিক্রি করব - গ্রন্থাবলী যা আছে, সে এক তৃতীয়াংশ দামে দিতে পারব (কারণ এটাতে সত্যের অধিকার আছে, আমি স্বাধীন নই)। আমার নিজের দৃঢ় বিশ্বাস, যে লোক কিনবে সে ঠকবে না। আমার প্রস্তাবতা কি তোমার কাছে দু:সাধ্য ঠেকছে? যদি মনে কর ছোটগল্প এবং বউঠাকুরাণীর হাট ও রাজর্ষি কাব্য গ্রন্থাবলীর চেয়ে খরিদ্দারের কাছে বেশি সুবিধাজনক বলে প্রতিভাত হয় তাহলে তাতেও প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমার বিশ্বাস কাব্য গ্রন্থগুলোই লাভজনক।'
এইভাবে নানারকম ঝামেলার মধ্যে কবির বই প্রকাশ করতে হযেছে। পরে প্রকাশনার ভার নিল এলাহাবাদের ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস। পরে প্রকাশনার দায়িত্ব এসে পড়ে বিশ্ব ভারতীর ওপর ১৯২৩ সালে॥"                                              (অমিতাভ চৌধুরী / ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ)
তথ্যসূত্র : গোলাম আহমাদ মোর্তজা / এ এক অন্য ইতিহাস ॥ [ বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন, কলকাতা - ডিসেম্বর, ২০০০ । পৃ: ১৪২ - ১৮১ ]

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Census 2010

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors