৩রা সেপ্টেম্বর, সোমবারঃআই চুক নি সিয়ারি বদল ও ভারতীয় দলিত সাহিত্য একাডেমীর উদ্যোগে কবি মন্ত্রী অনিল সরকারের ৭৪তম জন্ম বার্ষিকী উদ্যাপন হয় সোমবার সুকান্ত একাডেমীর প্রেক্ষাগৃহে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক অগ্নি কুমার আচার্য্য, বি বি এম কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল মনী দাস, অধ্যাপক ডাঃ নিত্যা নন্দ দাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনিল সরকার বলেন এটা নিছক সরকারী জন্মের দিন। আসলে আমাদের জন্মের কোন হিসেব থাকেনা। আমি মৎস্য পরিবারে জন্মেছি। বহু কষ্টে মা-বাবা পড়াশুনা করিয়ে আমাকে একটা জায়গা করে দিয়েছে। আমার বংশের আর কেউ শিক্ষিত ছিল না, আই চুক নি সিয়ারি বদল পাহাড়ে ট্রাইবেলদের এই ব্যান্ড পাহাড়ের সন্ত্রাস বাদকে নির্মুল করেছে সাংস্কৃতির মাধ্যমে। এটা একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব। আবেগ দিয়ে উত্থানের মাধ্যমে আমার গাড়ির চালক সমীর দেববর্মা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আমরা একটা সময় পাহাড়ে পতাকা নিয়েও ঢুকতে পারিনি। সমীর এই ব্যান্ড দিয়ে সাংস্কৃতির ভাব এনে উপজাতিদের মধ্যে মুক্তাঞ্চল করেছে। কবি মন্ত্রীর এই জন্ম বার্ষিকীতে সুকান্ত একাডেমীর প্রেক্ষাগৃহ ছিল বাঙালী উপজাতিদের ভীরে ঠাঁসা।
রিকশাচালক থেকে রাজসভার অতিথি নিরন্তর সাধনায় সাধারণও অনেক সময় অনন্য সাধারণ হয়ে ওঠেন। সে সত্যটি নতুন করে আবারও প্রমাণ করলেন ভারতের আসাম রাজ্যের রিকশাওয়ালা কবি বলভদ্র দাস। ভারতের আসামের রাজধানী গুয়াহাটি শহরে সংসার চালাতে টানা ২০ বছর রিকশা চালাচ্ছেন বলভদ্র। সেই সঙ্গে নীরবে-নিভৃতেই চলছিল তার কবিতা আর সংগীতচর্চা। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার প্রকাশ করেছে কবি বলভদ্রের 'কবি' স্বীকৃতি লাভের ইতিবৃত্ত। দরিদ্র ঘরের সন্তান বলভদ্র অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়ালেখার সুযোগ পাননি। সংসারের হাল ধরতে প্রায় ২০ বছর আগে গ্রামের বাড়ি বরপেটা থেকে গুয়াহাটি শহরে পাড়ি জমান। সম্মানজনক কোনো কাজ জোগাড় করতে না পেরে রিকশা চালানোর কাজ বেছে নেন। জীবিকার সংস্থানে রিকশা চালনা, কাব্যচর্চা আর ভূপেন হাজারিকার মানবতাবাদী সংগীত চর্চা সমানতালে চলতে থাকে। নিজ জীবনের হতাশা, দুঃখ আর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সমাজের নানা ঘটনা উপজীব্য হয়ে ওঠে বলভদ্রের কবিতায়। রিকশাচালকের বাইরে বলভদ্রের অন্য পরিচয় অন্তরালেই থেকে যেত। রেডিও আকাশবাণীর গীতিকার-অভিনেতা দিলীপ ফুকন একদিন বলভদ্রের রিকশায় চড়েন। এরপরই ঘুরে যায় প্রেক্ষাপট। বলভদ্রের গানে, আবৃত্তিতে মন্ত্রমুগ্ধ দিলীপ ফুকন তাকে নিয়ে যান নিজ বাড়িতে। সেখানেই সাহিত্যসভার উপ-সভাপতি পদুমী গগৈ ও অভিনেত্রী চেতনা দাসের উৎসাহে বলভদ্র বই বের করার সুযোগ লাভ করেন। লেখক-প্রকাশক সৌমেন ভারতীয়া প্রকাশ করেন বলভদ্রের ৫০টি কবিতার সঙ্কলন 'সরু পথিক, দুখর পথিক' (তুচ্ছ পথিক, দুঃখের পথিক)। গত ডিসেম্বরে রিকশাওয়ালা কবির বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন, সাহিত্যিক হোমেন বরগোহাঞ্চি ও ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী অনিল সরকার। কবিতার প্রতি বলভদ্রের অনুরাগ ও তার কণ্ঠে ভূপেন হাজারিকার গান শুনে মন্ত্রী অনিল সরকার তার বক্তব্যে আগরতলা বইমেলায় কবি বলভদ্রকে সংবর্ধিত করার ঘোষণা দেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩০তম আগরতলা বইমেলায় বিশেষ সরকারি অতিথি হয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন কবি বলভদ্র। মন্ত্রী, আমলা, বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সঙ্গে একমঞ্চে বসতে পারার বিরল সম্মানে অভিভূত কবি তার বক্তব্যে আবেগ তাড়িত ভাষায় বলেন, 'এই স্বীকৃতি, এত সম্মান পাব, সত্যিই ভাবিনি'। একই সঙ্গে ঘোষণা করলেন, 'শত প্রতিকূলতায়ও কবিতা লেখা যেমন ছাড়িনি, তেমনি ছাড়ব না রিকশার হাতলও। কারণ পরিচিতি, সম্মান, প্রথম বিমানে চড়া_ সবই তো এই রিকশার বদৌলতেই!' |
অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মশতবর্ষ উদযাপন
....আমাদের সময়-তিতাস যৌথ আয়োজন...
___জাহাঙ্গীর সুর__
প্রথম অদ্বৈতমেলা
ইংরেজি ২০১৩ নববর্ষের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও সূর্যকে ঢেকে রেখেছিল ঘন কুয়াশা। তবে অন্য এক সূর্যের আলোয় আলোকিত ছিল সেদিন জেলা শহরটি। ভাটিবাংলার কথাসাহিত্যের সূর্য অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে তিন দিন্যবাপী সাংস্কৃতিক আয়োজনের প্রথম দিন ছিল সেদিন। আয়োজক— আমাদের সময় ও তিতাস আবৃত্তি সংগঠন।
কালজয়ী কথাসাহিত্যক অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এই একটাই মেলা আয়োজন করল বাংলাদেশ। ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লেখক ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। অদ্বৈত মল্লবর্মণের সৃষ্টি বিশ্বসাহিত্যে সম্মানের আসন করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কালজয়ী এই লেখক কেবল তিতাস পারের মানুষ নন, না শুধু বাংলাদেশের— সমগ্র বাঙালির প্রাণের পুরুষ তিনি। তাই প্রথম দিনের প্রথম আসরে বিশেষ অতিথির আসনে দেখা গেল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধায়ক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী পবিত্র করকে। তিনি বলেন, 'সমাজের নীচু শ্রেণীতে জন্ম নিয়েও নিজ সৃষ্টি দিয়ে জগত্খ্যাতি পেয়েছেন অদ্বৈত। তার সমপ্রদায়ের মানুষের চাঁদায় পড়াশোনা করে গোবরে পদ্মফুলের মতো ফুটে আছেন তিনি।' মঞ্চে না থেকেও ছিলেন ত্রিপুরা সরকারের উচ্চশিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী কবি অনিল সরকার। তার পাঠানো শুভেচ্ছা বাণী পাঠ করে দর্শক-শ্রোতাদের শোনানো হয়। স্থানীয় শিল্পীরা পরিবেশন করেন দেশের গান ও মঙ্গল আবৃত্তি। শহর প্রদক্ষিণ করে স্মারক শোভাযাত্রা। দুপুরে অদ্বৈতর জন্মভিটায় তার আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। মেলার প্রথম সন্ধ্যায় লোকগানের আসর জমে ওঠে ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষামঞ্চে। দিনশেষের কর্মসূচিতে ছিল অদ্বৈত মল্লবর্মণের অমর রচনা 'তিতাস একটি নদীর নাম' অবলম্বনে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী।
সেদিন সারাদিন কবিতার শহরে ওরা ১১ জন। শিশু বাচিকশিল্পী। পরনে শাদা পোশাক, লাল ওড়না। ২-৩-১-৩-২ : কী সুন্দর সুবিন্যস্ত দাঁড়ানো ধীরেন্দয় অগ্নিতিলকের কুসুম ছোঁয়া ঠিকরে পড়ছে শিশুশিল্পীদের গালে। ওইদিন ছিল বুধবার, ২ জানুয়ারি। আলোর দেবতা সূর্য সেদিন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে ছিল। শুধু তাই নয়, সেদিন কবিতার সূর্যও ছিল শিশুদের কাছাকাছি। কণ্ঠে যাদের 'মাটির খাতায় বীরের গাথা' তারা সেদিন একই মঞ্চে একই সময়ে কাছে পেল তাদের প্রিয় কবি আবু হাসান শাহরিয়ারকে। দিনটি সারা দিন ছিল কবিতার দিন। তিতাসপাড়ের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেদিন হয়ে উঠেছিল কবিতার শহর।
দিনভর কবিতার ওড়াউড়ি। দলীয়, একক, স্বরচিত— সারাদিন কবি ও বাচিকশিল্পীদের কণ্ঠে ছিল আবেগের উচ্চারণ। সকালের আসরে মধ্যমণি ছিলেন আমাদের সময় এর সম্পাদক কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের ১১ শিশু বাচিকশিল্পী আবৃত্তি করল কবির লেখা 'মাটির খাতায় বীরের গাথা।' কবি নিজেও ছোটদের উদ্দেশে নিজের লেখা কবিতা 'বহুদূরে' আবৃত্তি করলেন। কবির কবিতা 'হায় কৃষ্ণ কোথায়' পুঁথির সুরে পাঠ করে শোনান তিতাসের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ভজনা রানী দাস। অদ্বৈত মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মো. মনির হোসেন ভরাট কণ্ঠে আবৃত্তি করেন কবির 'তোমাদের কাঁচের শহরে'। সকালের অধিবেশনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল 'প্রিয় কবির অটোগ্রাফ' পর্বটি। এ সময় শতাধিক শিশু-কিশোরকে অটোগ্রাফ দেন আবু হাসান শাহরিয়ার।
বৈকালিক আসরে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনান দেশবরেণ্য কবিরা। ছিলেন কবি অসীম সাহা। বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি মোহাম্মদ আশরাফ। আরও ছিলেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগাঠনিক সম্পাদক কাজী মাহতাব সুমন, রাশেদ হাসান, আবৃত্তিশিল্পী গুলজার আহমেদ ও আরিফ কাদেরী। কবিতা আবৃত্তি করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসলাম সানী, কবি অঞ্জন সাহা, কবি হাফিজ রশিদ খান, কবি মনিরুল মনির, কবি ইসহাক সিদ্দিকী, কবি দীপ্র আজাদ কাজল ও কবি দিলদার হোসেন। অদ্বৈতমেলার আয়োজনে সহযোগী হওয়ার জন্য আমাদের সময়ের প্রধান সমন্বয়ক শফিকুল ইসলামকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। সবশেষে ছিল নৃত্যশিল্পী পূজা দেব রায়ের পরিচালনায় ঊষা নৃত্যালয়ের শিল্পীদের লোকনৃত্য পরিবেশনা।
দিন শেষে সূর্য হারিয়ে গেল পশ্চিম পারে। কিন্তু কবিতার সুর জেগে রইল ঠিকই। এক সাংস্কৃতিক আবহে ডুবে রইল পুরো শহর।
প্রথম অদ্বৈত সম্মাননা
অদ্বৈতমেলার শেষ দিনে প্রথম অদ্বৈত সম্মাননা-২০১৩ তুলে দেওয়া হয় অধ্যাপক শান্তনু কায়সারকে। অদ্বৈতচর্চা ও গবেষণার জন্য তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হলেন। পুরস্কার গ্রহণকালে শান্তনু কায়সার বলেন, 'অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মশতবর্ষে নতুন করে শুরু হল অদ্বৈতচর্চা। নিজেদের শনাক্ত করার জন্যই অদ্বৈতচর্চা করতে হবে।' এছাড়া অদ্বৈত স্মৃতিরক্ষায় অবদান রাখার জন্য বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক জেলা প্রশাসক (বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক) মো. আবদুল মান্নানকে।
এইদিন আয়োজন করা হয় ছবি আঁকা, রচনা লিখন, কবিতা আবৃত্তি ও লোক সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। এতে শহরের কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় সেরাদের পুরস্কার তুলে দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন। এর আগে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় লোক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুনামগঞ্জের শিল্পী তুলিকা ঘোষ, দেবদাস চৌধুরী, ঢাকার আব্দুস সালাম খান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় শিল্পীরা। তুলিকা ঘোষ গান গাওয়ার সময় বলেন, 'এমন মেলায় গান গাইতে পেয়ে আমি আনন্দিত। এ জনপদের মানুষ গানও ভীষণ ভালোবাসে।'
গুণীজনের চোখে অদ্বৈত মল্লবর্মণ
'অদ্বৈত মল্লবর্মণ শুধু তিতাসপাড়ের মানুষই নন, সমগ্র বাংলাভাষীর গর্ব।'
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
'তিতাসের পলির উর্বতরার শ্রেষ্ঠসন্তান অদ্বৈত মল্লবর্মণ।'
পবিত্র কর, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধায়ক
'অদ্বৈত মল্লবর্মণ কালজয়ী সাহিত্যপুরুষ। জন্মশতবর্ষে তাকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।'
প্রতীতি দেবী, ভারত থেকে মুঠোফোনে 'তিতাস একটি নদীর নাম' চলচ্চিত্রের পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের যমজ বোন
প্রতিবছর অদ্বৈত মেলা উদযাপনের ডাক
অদ্বৈত জন্মশতবর্ষ উদযাপনের প্রথম দিন বিশেষ অতিথির ভাষণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধায়ক পবিত্র কর বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানান, প্রতিবছরই যেন অদ্বৈতমেলার আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, 'যদি অদ্বৈতমেলা করা হয়, প্রতিবছরই ত্রিপুরা সরকার সে মেলায় অংশ নিবে।' মেলার দ্বিতীয় দিনে আমন্ত্রিত কবিরাও একই আহ্বান জানান। মেলার সদস্য সচিব মো. মনির হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, প্রতি বছরই আমরা অদ্বৈতমেলার আয়োজন করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।' মেলায় সহযোগী হওয়ার জন্য আমাদের সময়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আশা করি, আগামীতেও আমরা অদ্বৈতমেলা আয়োজনে আমাদের সময়কে পাশে পাব।' সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ারও আশা করেন তিনি।
ত্রিপুরা
ত্রিপুরা | |||
---|---|---|---|
— রাজ্য — | |||
| |||
রাজধানী | আগরতলা | ||
বৃহত্তম শহর | আগরতলা | ||
দেশ | ভারত | ||
অঞ্চল | উত্তর-পূর্ব ভারত | ||
জেলা | ৮টি | ||
প্রতিষ্ঠা | ২১ জানুয়ারি, ১৯৭২ | ||
বিধানসভা | ৬০ | ||
সরকার | |||
• রাজ্যপাল | জ্ঞানদেব যশোবন্তরাও পাটিল | ||
• মুখ্যমন্ত্রী | মানিক সরকার | ||
আয়তন | |||
• মোট | [. | ||
জনসংখ্যা (২০০১) | |||
• মোট | ৩১,৯৯,২০৩ | ||
• ঘনত্ব | ৭ | ||
সময় অঞ্চল | ভারতীয় সময় (ইউটিসি+৫.৩০) | ||
PIN | ৭৯৯ xxx | ||
সরকারি ভাষা | বাংলা, ককবরক | ||
ওয়েবসাইট | ত্রিপুরা সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি ক্ষুদ্রকায় রাজ্য। এই রাজ্যের আয়তন ১০,৪৯১.৬৯ বর্গকিলোমিটার।[১] ত্রিপুরা উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কর্তৃক বেষ্টিত; রাজ্যের পূর্বভাগে ভারতের অপর দুই রাজ্য অসম ও মিজোরাম অবস্থিত। এই রাজ্যের রাজধানীআগরতলা। রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ককবরক। পূর্বে ত্রিপুরা ছিল একটি স্বাধীন করদ রাজ্য।[২] ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর ত্রিপুরা অন্তর্ভুক্তি চুক্তি অনুসারে এই রাজ্য সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্তভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনকালে এই রাজ্য পার্বত্য ত্রিপুরা (Hill Tippera) নামে পরিচিতি ছিল।[৩][৪]
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা]নামের ব্যুৎপত্তি
- ত্রিপুরা নামটির উদ্ভব হয় ত্রিপুরার পৌরাণিক রাজা ত্রিপুরের নামানুসারে। ত্রিপুর ছিলেনযযাতির বংশধর দ্রুহ্যের ৩৯ তম উত্তরপুরুষ।
- অপর এক ব্যাখ্যা অনুসারে ত্রিপুরা নামটির উৎস হল হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত দশমহাবিদ্যারএকতম ত্রিপুরাসুন্দরী।
তাছাড়া ত্রিপুরা শব্দটির উৎপত্তি রাজ্যের আদিবাসীদের অন্যতম ভাষা ককবরক থেকেও এসেছ বলে অনেকে মনে করেন। ককবরক ভাষায় 'তৈ' হল জল। 'প্রা' হল নিকটে। জলের নিকটবর্তী স্থান তৈ-প্রা থেকে ধীরে ধীরে তেপ্রা, তিপ্রা এবং শেষে বাঙালি উচ্চারণে ত্রিপুরা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
[সম্পাদনা]ইতিহাস
- মূল নিবন্ধ: ত্রিপুরার ইতিহাস
সুপ্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে এবং পুরাণে ত্রিপুরা নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এরপর ১৪শ শতকে রচিত রাজমালাতেও ত্রিপুরার উল্লেখ পাওয়া গেছে। এটি ছিল ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনী। মাণিক্য রাজবংশ ১৯৪৭ সালে ত্রিপুরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বাবধি অঞ্চলটি ধারাবাহিকভাবে শাসন করে। কথিত আছে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে ১৮৬জন রাজা এই অঞ্চলটি শাসন করেছেন। [৫] ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে ত্রিপুরা ছিল একটি স্বাধীনকরদ রাজ্য। দক্ষিণ ত্রিপুরায় অবস্থিত উদয়পুর ছিল ভূতপূর্ব স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ত্রিপুরার রাজধানী। খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকে মহারাজ কৃষ্ণ মাণিক্য পুরাতন আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং পরবর্তীকালে খ্রিস্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজধানী অধুনা আগরতলায় স্থানান্তরিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীকে ত্রিপুরার আধুনিক যুগের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে কারণ এই সময় মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার অনুকরণে তাঁর প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করেন এবং বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন।
১৯৪৯ সালে গণমুক্তি আন্দোলনের ফলে ত্রিপুরা অসম রাজ্যের অংশ হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের ফলে ত্রিপুরার জনপরিসংখ্যান ভীষণভাবে পরিবর্তিত হয় এবং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি শরণার্থীরাই ত্রিপুরার জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ হয়ে ওঠে। ১ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে ত্রিপুরা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয় এবং ২১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়।
[সম্পাদনা]ভূগোল ও জলবায়ু
ত্রিপুরা হল উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি ভূ-বেষ্টিত পার্বত্য রাজ্য এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৫ থেকে ৯৪০ মিটার। এতদ্সত্ত্বেও ত্রিপুরার অধিকাংশ মানুষ সমতলে বসবাস করেন। এটি একটি ভূ-বেষ্টিত রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও এটি মানু নদীর মত বিভিন্ন নদীর উৎসভূমি।[৬] ত্রিপুরা উত্তরে, দক্ষিণে ও পশ্চিমে বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত এবং অসমের করিমগঞ্জ জেলা ও মিজোরামের আইজল জেলার দ্বারা এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত। ত্রিপুরা রাজ্যটি অক্ষাংশ ২২°৫৬'উঃ থেকে ২৪°৩২'উঃ এবং দ্রাঘিমাংশ ৯০°০৯'পূঃ থেকে ৯২°১০'পূঃ পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজ্যটির মোট আয়তন হল ১০৪৯১.৬৯ বর্গ কিমি এবং এটি ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য।
[সম্পাদনা]অর্থনীতি
মোট রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বর্তমান মূল্যে (১৯৯৯-২০০০ ভিত্তি)[৭] ভারতীয় টাকায় মিলিয়নের অঙ্কে | |
বছর | মোট রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন |
---|---|
১৯৮০ | ২,৮৬০ |
১৯৮৫ | ৫,২৪০ |
১৯৯০ | ১০,৩১০ |
১৯৯৫ | ২২,৯৬০ |
২০০০ | ৫২,৭০০ |
২০০৪ সালে ত্রিপুরার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন নির্ধারিত হয়েছে বর্তমান মূল্যে ২১০ কোটি মার্কিন ডলার। ত্রিপুরার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী এবং ত্রিপুরার জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশই কৃষির সাথে যুক্ত। পণ্যফসলের তুলনায় ত্রিপুরায় খাদ্যফসল উৎপাদনের পরিমাণই অধিক। ত্রিপুরায় উৎপন্ন প্রধান খাদ্যফসলগুলি হল ধান,তৈলবীজ, ডাল, আলু এবং আখ। চা ও রাবার হল রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যফসল। ত্রিপুরা হল "ভারতীয় রাবার বোর্ড" দ্বারা ঘোষিত দেশের দ্বিতীয়রাবার রাজধানী এবং এর স্থান কেরলের পরেই। ত্রিপুরার হস্তশিল্পও অত্যন্ত বিখ্যাত। ২০০০-২০০১ আর্থিক বছরে এ রাজ্যের মাথাপিছু আয় বর্তমান মূল্যে হল ১০,৯৩১ টাকা এবং স্থায়ী মূল্যে হল ৬,৮১৩ টাকা।
শাল, গর্জন এবং টিক সহ কিছু উৎকৃষ্ট মানের কাঠ ত্রিপুরার বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এছাড়া ত্রিপুরা খনিজ সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ না হলেও এখানে ভাল প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন হয়। তবে শিল্পক্ষেত্রে ত্রিপুরা এখনও অনগ্রসর।
[সম্পাদনা]সরকার ও রাজনীতি
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতই ত্রিপুরাতেও সংসদীয়প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার পরিচালিত হয়। সরকার ব্যবস্থা তিনটি শাখায় বিভক্ত যথা, আইনসভা, বিচারবিভাগ এবং প্রশাসন। ত্রিপুরার আইনসভা হল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপুরা বিধানসভা। বিধানসভার অধ্যক্ষ এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষ সভার কার্যাবলিতে পৌরোহিত্য করে থাকেন। ত্রিপুরার বিচারবিভাগের প্রধান হল গুয়াহাটি উচ্চন্যায়ালয় (আগরতলা বেঞ্চ)। এছাড়াও বিভিন্ন নিম্ন আদালতের দ্বারা বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হয়। ত্রিপুরা রাজ্যে প্রশাসনের সাংবিধানিক প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত রাজ্যপাল। কিন্তু মূল প্রশাসনিক ভার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার উপরে ন্যস্ত। বিধানসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্ত রাজনৈতিক দল অথবা রাজনৈতিক জোটের নেতা অথবা নেত্রীকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য আহ্বান জানান। এরপর রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মনোনীত করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যারা তাঁদের কার্যাবলির বিবরণ বিধানসভায় পেশ করে থাকেন। ত্রিপুরা বিধানসভা হল ৬০ সদস্য বিশিষ্ট একটি এককক্ষীয় আইনসভা।[৮] একটি নির্বাচিত বিধানসভার পূর্ণ মেয়াদ হল পাঁচ বছর কিন্তু সরকার নির্ধারিত মেয়াদের আগেই বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারেন। ত্রিপুরা থেকেলোকসভায় দু'জন সদস্য এবং রাজ্যসভায় একজন সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও গ্রামীণ পরিচালন সংস্থা পঞ্চায়েতে নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ত্রিপুরার প্রধান রাজনৈতিক জোট ও দলগুলি হল বামফ্রন্ট এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। বর্তমানে ত্রিপুরা সরকারে ক্ষমতাসীন রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। ১৯৭৭ সালের পূর্বাবধি ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ ত্রিপুরা সরকার পরিচালিত হয় বামফ্রন্টের নেতৃত্বাধীনে এবং ১৯৯৩ সাল থেকে আবার তারা ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ত্রিপুরা উপজাতি যুব সমিতির জোট সরকার পরিচালনা করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ত্রিপুরার সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে ৬০টি আসনের ৪৯টি তে জয়লাভ করে বামফ্রন্ট ক্ষমতাসীন হয় এবং এর মধ্যে ৪৬ আসন ছিল সিপিআই(এম)-এর।
[সম্পাদনা]প্রশাসনিক বিভাগসমূহ
প্রশাসনিক স্বার্থে ত্রিপুরাকে ৪টি জেলা,(বর্তমানে ৮ টি জেলা) ১৭টি উপবিভাগ এবং ৪০টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে।
জেলা | জেলাসদর | জনসংখ্যা | আয়তন (বর্গ কিমি) |
---|---|---|---|
ধলাই | আম্বাসা | ৩০৭৪১৭ | ২৩১২ |
উত্তর ত্রিপুরা | কৈলাসহর | ৫৯০৬৫৫ | ২৪৭০ |
দক্ষিণ ত্রিপুরা | উদয়পুর | ৭৬২৫৬৫ | ২৬২৪ |
পশ্চিম ত্রিপুরা | আগরতলা | ১৫৩০৫৩১ | ৩৫৪৪ |
রাজ্যের প্রধান শহরগুলি হল আগরতলা, বিশালগড়, যোগেন্দ্রনগর, ধর্মনগর, সোনামুড়া, অমরপুর, প্রতাপগড়, উদয়পুর, কৈলাসহর, তেলিয়ামুড়া,ইন্দ্রনগর, খোয়াই ও বেলোনিয়া। বাঁধারঘাট, যোগেন্দ্রনগর এবং ইন্দ্রনগর বর্তমানে আগরতলা পুরসভার অন্তর্গত।
[সম্পাদনা]পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে ত্রিপুরা সংযুক্ত হয়েছে অসমের মধ্যে দিয়ে লুমডিং এবং শিলচর পর্যন্ত বিস্তৃত ব্রডগেজ রেলওয়ে লাইন দ্বারা। ত্রিপুরার প্রধান রেল স্টেশনগুলি হল আগরতলা, ধর্মনগর এবংকুমারঘাট। এছাড়া ৪৪ জাতীয় সড়কও ত্রিপুরাকে অসম সহ সমগ্র ভারতের সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করেছে।
আগরতলা বিমানবন্দর হল এ রাজ্যের প্রধান বিমানবন্দর এবং এখান থেকে কলকাতা, গুয়াহাটি,বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি এবং শিলচরের উদ্দেশে নিয়মিত উড়ান রওনা দেয়।
ভারতের প্রধান টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলির অধিকাংশই ত্রিপুরা রাজ্যে উপস্থিত এবং এগুলি রাজধানী সহ রাজ্যের অন্যান্য অংশে দূরভাষ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে।
[সম্পাদনা]জনপরিসংখ্যান
[দেখাও]জনসংখ্যা বৃদ্ধি |
---|
ত্রিপুরা হল অসমের পরেই উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় জনবহুল রাজ্য।২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে রাজ্যের মোট জনসংখ্যা হল ৩,১৯৯,২০৩ এবং জনঘনত্ব হল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩০৫ জন। সারা দেশে জনসংখ্যার বিচারে ত্রিপুরার স্থান ২২ তম। সমগ্র ভারতের জনসংখ্যার ০.৩১% এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যার ৮.১৮% ত্রিপুরায় বসবাস করে। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে ত্রিপুরার জনসংখ্যার ৭০% বাঙালি এবং বাকি ৩০% বিভিন্ন উপজাতি ও জনজাতীয় সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত। জনজাতীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে বিভিন্ন ভাষাভাষী উপজাতি রয়েছে এবং এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলককবরকভাষী ত্রিপুরি সম্প্রদায়। এছাড়াও রয়েছে জামাতিয়া, রিয়াং, নোয়াতিয়া অন্যান্য সম্প্রদায়। আদিবাসী অঞ্জলগুলিতে বাঙালি ও আদিবাসীদের মধ্যে কিছু উত্তেজনা বিরাজমান।
১৯৯১ সালের সূত্র অনুযায়ী মানব উন্নয়ন সূচকে সারা দেশে ত্রিপুরার স্থান ২২তম এবং দারিদ্র সূচকে ২৪তম। ত্রিপুরায় স্বাক্ষরতার হার ৭৩.২%, যা স্বাক্ষরতার জাতীয় হার ৬৫.২০%-এর অধিক।
ত্রিপুরার ধর্মবিশ্বাস[১০] | ||||
---|---|---|---|---|
ধর্ম | শতকরা হার | |||
হিন্দুধর্ম | 85.6% | |||
ইসলাম | 8.0% | |||
খ্রিস্ট ধর্ম | 3.2% | |||
বৌদ্ধ ধর্ম | 3.1% | |||
ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায় হল হিন্দু (মোট জনসংখ্যার ৮৫.৬%)।[১০] সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মুসলিম (৮.০%), খ্রিস্টান (৩.২%) এবং বৌদ্ধ (৩.১%)।[১০]
ত্রিপুরার বিভিন্ন জনগোষ্ঠী | ||
সম্প্রদায় | ভাষা | ভাষাগোষ্ঠী |
---|---|---|
বাঙালি | বাংলা | ইন্দো-ইউরোপীয় |
ত্রিপুরি | ককবরক | চিনা-তিব্বতি |
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি | বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি | ইন্দো-ইউরোপীয় |
মণিপুরি | মৈতৈ | চিনা-তিব্বতি |
চাকমা | চাকমা | ইন্দো-ইউরোপীয় |
কুকি | কুকি | চিনা-তিব্বতি |
মিজো | মিজো | চিনা-তিব্বতি |
আরাকানিজ় | আরাকানিজ় | তিব্বতি-বর্মী |
এই পরিসংখ্যান সময়ের সাথে সাথে ত্রিপুরার বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপাতের একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে। ১৯৪১ সালে ত্রিপুরার জনসংখ্যায় হিন্দু ছিল ৭০%, মুসলিম ছিল ২৩% এবং ৬% ছিল বিভিন্ন উপজাতি ধর্মাবলম্বী।[১১]এটিও বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে ১৯৫১সালে ত্রিপুরার জনসংখ্যা ছিল ৬৪৯৯৩০, যা ১৯৪১ সালে ছিল আরও স্বল্প কারণ তখনওপূর্ববঙ্গ থেকে শতাধিক শরণার্থীর আগমন ঘটেনি। যদিও এই শরণার্থীর আগমনও ত্রিপুরার জনপরিসংখ্যানে ১৯৭০-এর দশকের আগে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি।
[সম্পাদনা]হিন্দুধর্ম
বাঙালি এবং উপজাতি মিলিয়ে ত্রিপুরার অধিকাংশ হিন্দুধর্মাবলম্বীই শাক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত। রাজতান্ত্রিক আমলে হিন্দুধর্মই ছিল ত্রিপুরার রাজধর্ম। সমাজে পূজারী ব্রাহ্মণদের স্থান ছিল অত্যন্ত উঁচুতে। ত্রিপুরার হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উপাস্য প্রধান দেবদেবীগণ হলেন শিব এবং দেবী শক্তির অপর রূপ দেবী ত্রিপুরেশ্বরী।
ত্রিপুরায় হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলি হল দুর্গাপূজা, নবরাত্রি, কালীপূজা, ইত্যাদি। এছাড়াও ত্রিপুরায় পালিত হয় গঙ্গা উৎসব, যাতে ত্রিপুরার উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ দেবী গঙ্গার উপাসনা করে থাকে।[১২]
[সম্পাদনা]ইসলাম
ভারতের অন্যান্য অংশের মতই ত্রিপুরাতেও দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় হল মুসলিম সম্প্রদায়।[১০] ত্রিপুরার অধিকাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষইবাংলাভাষী এবং ইসলামের সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত।
[সম্পাদনা]খ্রিস্টধর্ম
২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে ত্রিপুরায় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১০২৪৮৯। রাজ্যের অধিকাংশ খ্রিস্টধর্মাবলম্বীই ত্রিপুরি এবং অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত।
ত্রিপুরার খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রধান উল্লেখযোগ্য শাখা হল ত্রিপুরা ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টান ইউনিয়ন নামক সংগঠনের অধীনস্থ ব্যাপ্টিস্ট সম্প্রদায়। সারা রাজ্যে এই সংগঠনের ৮০০০০ সদস্য এবং প্রায় ৫০০ গির্জা রয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় হল রোমান ক্যাথলিক গির্জা এবং এই সম্প্রদায়ের ২৫০০০ সদস্য রয়েছেন।
[সম্পাদনা]সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]জীবজগৎ
[সম্পাদনা]শিক্ষা
[সম্পাদনা]ক্রীড়া
- ক্রিকেট
- ফুটবল
[সম্পাদনা]সাধারণ জ্ঞাতব্য বিষয়
ত্রিপুরার উত্তরাংশে অরণ্যাবৃত পাহাড় ও উপত্যকা, আর দক্ষিণে গহীন জঙ্গল। প্রতি বছর এখানে ৪,০০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এখানে প্রায় ৩১ লক্ষ লোকের বাস। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৩০৪ জন বসবাস করেন। এখানকার প্রায় ৯০% লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তবে স্বল্প সংখ্যক মুসলমান ও খ্রিস্টানও বাস করেন। বাংলা ভাষা ও ককবরক ভাষা এখানকার সরকারী ভাষা। মণিপুরী বা মৈতৈ ভাষাও প্রচলিত।
আগরতলাতে ১৯৮৭ সালে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কৃষিকাজ এখানকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। এদের মধ্যে চা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল। এছাড়াও এখানে পাট, তুলা, ফলমূল, গম, আলু এবং আখের চাষ হয়। কৃষিকাজের কারণে বনাঞ্চলের কিয়দংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের চাপেও ইদানিং গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। তবে এত কিছু সত্ত্বেও অঙ্গরাজ্যটির প্রায় অর্ধেক এখনও বনে আবৃত। এখানকার শিল্পকারখানাগুলির ছোট আকারের। এদের মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র তৈরির কারখানা, করাত কল, তাঁতশিল্প উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি রবারের প্ল্যান্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ত্রিপুরাতে সড়ক ও মহাসড়ক ব্যবস্থা আছে। আগরতলাতে একটি বিমানবন্দরও আছে।
ত্রিপুরা থেকে ভারতের জাতীয় আইনসভাতে তিনজন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন। একজন উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এবং বাকী দুইজন নিম্নকক্ষ লোকসভায় যান। ত্রিপুরাতে চারটি জেলা আছে। ১৯৯৩ সালে উপজাতীয় গেরিলা বিপ্লবের প্রেক্ষিতে এখানে রাষ্ট্রপতির শাসন প্রযুক্ত হয়।
১৪শ শতকে রচিত রাজমালাতে ত্রিপুরার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। এটি ছিল ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনী। মাণিক্য রাজবংশ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত, ত্রিপুরা ভারতের অংশ হবার আগ পর্যন্ত অঞ্চলটি ধারাবাহিকভাবে শাসন করে। কথিত আছে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে ১৮৬জন রাজা এই অঞ্চলটি শাসন করেছেন। [১৩] ১৯৫৬ সালে ত্রিপুরা একটি ইউনিয়ন টেরিটরি এবং ১৯৭২ সালে একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়।
ত্রিপুরার প্রায় ৭০% লোক বাঙালি। বাকী ৩০% বিভিন্ন আদিবাসী জাতির লোক। এদের মধ্যে ককবরক ভাষায় কথা বলা ত্রিপুরি জাতি, জামাতিয়া জাতি, রেয়াং জাতি এবং নোয়াতিয়া জাতির লোক বৃহত্তম সম্প্রদায়। আদিবাসী এলাকাগুলিতে বাঙালি ও আদিবাসীদের মধ্যে কিছু উত্তেজনা বিরাজমান।
ত্রিপুরায় সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৩%, যা ভারতের গড় সাক্ষরতার হারের চেয়ে বেশি।
[সম্পাদনা]ত্রিপুরার দর্শনীয় স্থানসমূহ
[সম্পাদনা]নীরমহল
নীরমহল ত্রিপুরার একটি দর্শনীয় স্থান। নীর অর্থাৎ জলের মাঝে মহলটি স্থাপিত বলে এর নামকরণ করা হয় নীরমহল। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের আমলে নীরমহল তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য, ভারতেরই আরেক প্রদেশ রাজস্থানের উদয়পুরে ঠিক একই রকম একটি প্রাসাদ রয়েছে। ইংল্যান্ডের মার্টিন অ্যান্ড বার্ন কোম্পানি ১৯৩০ সালে এর কাজ শুরু করে এবং ১৯৩৮ সালে ভবনটির উদ্বোধন করা হয়।
ত্রিপুরার একটি ছোট এলাকা মেলাঘরে নীরমহল অবস্থিত। রাজধানী আগরতলা থেকে এর দূরত্ব ৫৩ কিলোমিটার।
নীরমহল বাজারের পাশে রুদ্রসাগর নামে বিশাল একটি জলাশয় আছে। এর আয়তন প্রায় পাঁচ দশমিক তিন বর্গকিলোমিটার। রুদ্রসাগরের ঠিক মাঝখানে ত্রিপুরার রাজার গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন অবকাশ যাপনের জন্য এই মহলটি নির্মাণ করা হয়। ভবনটি একাধারে যেমন রাজার সৌন্দর্যপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়, তেমনিহিন্দু ও মোঘল সংস্কৃতি মিশিয়ে তিনি একটি দর্শনীয় কিছু করতে চেয়েছিলেন, সেই ধারণারও প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রাসাদের দুটি অংশ। মূল অংশ রয়েছে পশ্চিম পাশে এবং পূর্ব পাশে রয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীর জন্য দুর্গ। মূল অংশকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- বাইরের কক্ষ এবং অন্দরমহল। বাইরের কক্ষগুলোর মধ্যে বিশ্রামঘর, খাজাঞ্চিখানা ও নাচঘর উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের পাঁচটি কক্ষ সেখানে রয়েছে। এছাড়া দাবা খেলার জন্যও একটি আলাদা কক্ষ রয়েছে। রাণী ও অন্যদের জন্য অন্দরমহলে রয়েছে বিশাল ছয়টি কক্ষ। এছাড়া রান্না ঘর, রাজার সভাঘর, আড্ডাঘর ইত্যাদি তো রয়েছেই। বর্তমানে মহলের ভিতর একটি জাদুঘরও রয়েছে।
অন্দরমহলটি এমনভাবে সাজানো ছিলো যাতে রাজা-রাণী নৌকাভ্রমণ সেরে অন্দরমহলের সিঁড়িতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া প্রাসাদের ভেতরের অংশে একটি বিরাট বাগানও রয়েছে। রাজা-রাণীর বেড়ানোর জন্য ঘাটে সবসময় মোটরচালিত নৌকা থাকত।
বাইরের দিকে দুটি ঘাট রয়েছে। সেখানে কর্মচারীরা গোসল করতো এবং ঘাটগুলো তাদের যাতায়াতের জন্যও ব্যবহার করা হতো।
তবে মহারাজা অনেক অর্থ খরচ করে এই প্রাসাদ নির্মাণ করলেও খুব বেশি দিন তিনি ভোগ করতে পারেননি। মাত্র সাত বছর তিনি এই প্রাসাদ ব্যবহার করেছে। কারণ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
মহারাজা মারা যাওয়ার পর বহুদিন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। এ সময় আস্তে আস্তে এটি ঔজ্জ্বল্য হারাতে থাকে। অবশেষে ১৯৭৮ সালে ত্রিপুরার তথ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এর দায়িত্ব নেয় এবং ভবনটি রক্ষায় সচেষ্ট হয়। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ভবনটিতে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়। বর্তমানে এটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতি শীতের সময়ে লাইট অ্যান্ড লেজার শোর মাধ্যমে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি এই প্রাসাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে রুদ্রসাগর লেকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
নীরমহলে থাকা-খাওয়া-যাওয়া
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বাসে সরাসরি মেলাঘর যাওয়া যায়। এছাড়া জিপ ও অন্যান্য গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যাওয়া যাবে। বাস ভাড়া ২২ টাকা। সময় লাগে দুই ঘণ্টা। মেলাঘর বাসস্ট্যান্ডে সাগরমহল ট্যুরিস্ট লজে রিকশা দিয়ে যেতে হবে। ভাড়া ১০ টাকা।
সাগরমহল ট্যুরিস্ট লজটি ত্রিপুরার তথ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এতে আধুনিক সুযোগসুবিধাসহ মোট ৪৪টি সিট রয়েছে। এসি ও নন-এসি দু'ধরনের সুবিধাই রয়েছে রুমগুলোতে।
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]গ্যালারি
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ Tripura History
- ↑ Govt. of Tripura
- ↑ Hill Tippera - History The Imperial Gazetteer of India, 1909, v. 13, p. 118.
- ↑ Hill Tippera, from Encyclopædia Britannica Eleventh Edition.
- ↑ Tripura History
- ↑ Manu River. প্রকাশক: banglapedia। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-07-07.
- ↑ Gross State Domestic Product at Current Prices (1999–2000 Bae. National Accounts Division: Press release & Statements. প্রকাশক: Ministry of Statistics and Programme Implementation, Government of India। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-03-07.
- ↑ Tripura Legislative Assembly. Legislative Bodies in India. প্রকাশক: National Informatics Centre। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-04-21.
- ↑ Census Population (PDF). Census of India. প্রকাশক: Ministry of Finance India। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-12-18.
- ↑ ১০.০ ১০.১ ১০.২ ১০.৩ Indian Census
- ↑ Columbia-Lippincott Gazeteer. p. 1947
- ↑ "Tribals of Tripura celebrate Ganga festival"
- ↑ Tripura History
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
- ত্রিপুরা সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট
- Tripura from the 1911 Encyclopedia Britannica
- Introduction to Tripura by Indira Gandhi National Centre for Arts (IGNCA)
- ত্রিপুরা সোসাইটির ওয়েবসাইট
- Profile of Twipra (Tripura)
- Tripuri Peoples' Website
- A Cyber Joint for Tripura University Alumni
- ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ভারতীয় রেলওয়ের ইতিহাস
- Biggest News and Information Portal of Tripura
No comments:
Post a Comment