প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মনোনীতদের আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক প্রদান করবেন।
বৃহস্পতিবার রাতে সরকারি তথ্য বিবরণীতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজয় সরকার
কবিয়াল বিজয় সরকার [১] (ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯০৩ - ১৯৮৫) একজন বাউল কণ্ঠলিল্পী[২], গীতিকার এবং সুরকার, যিনি বাংলাদেশের[৩] (তৎকালীনবাংলা) নড়াইলের ডুমদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম বিজয় অধিকারী।[৪] কবি তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে 'পাগল বিজয়' হিসেবে সমধিক পরিচিত। তার বহু জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে/ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে এবংতুমি জানো না রে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা অন্যতম।
তাঁর পিতার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতার নাম হিমালয় অধিকারী। তিনি তাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি স্থানীয় আদালতে ভাড়া সংগ্রাহকের কাজ করতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে মঞ্চে পল্লীগীতি পরিবেশন করতেন। ১৯২৫ সালে, তিনি গোপালগঞ্জের কবিয়াল মনহর সরকার এবং রাজেন্দ্রনাথ সরকারের সংস্পর্ষে আসেন।
১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজের একটি গানের দল করেন এবং কবিয়াল হিসেবে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি গানের কথা এবং সুর করতেন। ভাটিয়ালী সুরের উপর ভিত্তি করে তার ধুইয়া গানের জন্য তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান। তিনি কাজী নজরুন ইসলাম, জসিমুদ্দিন, এবংআব্বাসউদ্দীন আহমদের কাছের মানুষ ছিলেন।
বিজয় সরকার প্রায় ৪০০ সখি সংবাদ এবং ধুইয়া গান রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু কাজ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, এবং রেডিও-টেলিভিশনেও কবিগান পরিবেশন করেন।
২০১৩ সালের একুশে পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের মধ্যে ভাষা আন্দোলন মরণোত্তর পদক পেয়েছেন এম এ ওয়াদুদ, অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ ও অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান।
ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এনামূল হক মোস্তফা শহীদ, সমাজসেবায় মরণোত্তর পদক দেওয়া হচ্ছে নূরজাহান মুরশিদ, স্যামসন এইচ চৌধুরীকে। ভাষা ও সাহিত্যে কবি রফিক আজাদ, আসাদ চৌধুরী, শিল্পকলায় কাদেরী কিবরিয়া, জামালউদ্দিন হোসেন এবং শিল্পকলায় (মরণোত্তর) এ পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী (চারন কবি বিজয় সরকার)।
এছাড়া বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী শিল্পকলায় একুশে পদকের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
মনোনীত প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ করে টাকা, একটি করে স্বর্ণপদক ও একটি করে সম্মাননাপত্র দেবে সরকার।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো একুশে পদক চালু করা হয়।
কবিয়াল বিজয় সরকার | স্বকণ্ঠে ১১টি গান।
Read more: http://www.lalongeeti.com/products/1011/
-
Bijoy Stage_-_House of Bijoy Sarkar in Narail-2 - YouTube
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১ - rezowan আপলোড করেছেনএ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে", " তুমি জানোনারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা"সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা কবিয়াল বিজয় সরকার। কিশোর বয়স থেকেই গান রচনা এবং পরিবেশন করতেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে ... Bijoy Stage_-_House of Bijoy Sarkar in Narail - YouTube
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১ - rezowan আপলোড করেছেনএ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে", " তুমি জানোনারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা"সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা কবিয়াল বিজয় সরকার। কিশোর বয়স থেকেই গান রচনা এবং পরিবেশন করতেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে ...- কবিয়াল বিজয় সরকার »-এর জন্য আরো ভিডিও
ডিসেম্বর ৩, ২০১২ তে ৩:৩০ পিএম |
সংরণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বিজয়গীতি
সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল : বাংলা সাহিত্যে কবিগানের উৎকর্ষ সাধনে যাদের অবদান রয়েছে চারণকবি বিজয় সরকার তদের অন্যতম। মাটি ও মানুষের হৃদয়ের বাসনাকে সুরের ব্যঞ্জনায় গভীরভাবে ফুটিয়ে সাধারন মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কবি। মরমী কৃতকর্মের জন্য তিনি পেয়েছিলেন সরকার উপাধি। প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সঙ্গীত সাধক মঞ্চে বসে তাৎণিকভাবে গান লিখে ও সুর করে তা পরিবেশন করতেন। তার এসব গান পরবর্তীতে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তবে সঠিক সংরণের অভাবে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে বিজয়গীতি। আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে বিকৃত সূরে বিজয়গীতি পরিবেশন করা হচ্ছে ইদানিং। এতে ুব্ধ বিজয়ভক্তরা। কবিয়াল বিজয় সরকার ভক্তদের কাছে পাগল বিজয় হিসেবে সমধিক পরিচিত। স্ব-রচিত গানের মধ্যে বিজয়ও নিজেকে পাগল হিসেবে উপস্থাপন করেন।
চারণ কবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার প্রত্যন্ত ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয় অধিকারী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। বাল্যকাল থেকে কবিয়াল বিজয় ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। লেখাপড়ায় মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরোলেও কিশোর বয়স থেকেই গান রচনা করে নিজে পরিবেশন করতেন। ১৯২৯ সালে তিনি কবি গানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে কবিয়াল বিজয় সরকারের গানের আসরে উপস্থিত ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদসহ গুণিজনরা। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার " ভারতীয় ভাষা পরিষদ" তাকে সংবর্ধিত করেন। এ অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্্রাচার্য উপস্থিত থেকে বিজয়ের গুণকীর্তন করেন।
চারণকবি বিজয় সরকার প্রায় দুই হাজার বিজয়গীতি রচনা করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগীতি, ইসলামীগান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান ইত্যাদি। তবে সংরণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বিজয়গীতি। আবার কেউ কেউ গানগুলো বিকৃতভাবে পরিবেশন করছে বলে ইদানিং ব্যাপক অভিযোগ ওঠেছে। সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে ডুমদি গ্রামে অবস্থিত বিজয় সরকারের বাড়িটি। জেলা পরিষদের উদ্যোগে সেখানে একটি বিজয়মঞ্চ নির্মাণ করা হলেও তাতে ফাটল ধরেছে। জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিঃমিটার দূরে ডুমদি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তারপরও দূর-দুরান্ত থেকে আঁকা বাকা মেঠো দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিনিয়ত বিজয় ভক্তরা আসেন বিজয় সরকারের বাড়িতে। শিার আলো জ্বালাতে এ গ্রামে নেই কোন স্কুল। নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। দুর্গম হওয়ায় এখনও কোন এনজিওই এ গ্রামে কোন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করতে আসেনি। ফলে অনগ্রসর রয়ে গেছে এলাকাটি। এলাকাবাসী ও বিজয় ভক্তরা বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের পথ পাকাকরণসহ আগামিতে সরকারিভাবে বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপনের দাবি জানিয়েছেন।
-
Bijoy Stage_-_House of Bijoy Sarkar in Narail-3 - YouTube
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১ - rezowan আপলোড করেছেনUploaded on Sep 9, 2011. তুমি জানোনা জানোনারে প্রিয় তুম মোর জীবনের সাধনা, তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি মনে আপন মেনেছি" " এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে" - বিখ্যাত এই মরমী গানের স্রষ্টা ... - কবিয়াল বিজয় সরকার »-এর জন্য আরো ভিডিও
এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে
8072012এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে
তোমার নগদ তলব তাগিদ পত্র এসে পরবে যবে
মোহ ঘুমে যে দিন আমার মুদিরে দুই চোখ
পাড়াপড়শী প্রতিবেশী পাবে কিছু শোক
তখন আমি যে এই পৃথিবীর লোক ভুলে যাবে সবে
যত বড় হউকনা কেন রাজা জমিদার
পাকা বাড়ি জুড়ি গাড়ি ট্রানজিস্টার
তখন থাকবে না কোন অধিকার বিষয় ও বৈভবে
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা আকাশ বাতাস জল
যেমন আছে তেমনি ঠিক রইবে অবিকল
মাত্র আমি আর থাকবোনা কেবল জনপূর্ণ ভবে
শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ বন্ধ হলো যেন
এই পৃথিবীর অস্বস্তি বোধ থাকবেনা আর হেন
পাগল বিজয় বলে সেই দিন যেন এসে পড়ে কবে।
Comments : Leave a Comment »
Tags: কবিয়াল, গান, বাউল, বাউল গান, বিজয় সরকার, baul, bijoy sarker, Boul, Lyrics, Song
Categories : বিজয় সরকার
তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা
8072012তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা
তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি মনে আপন মেনেছি
তুমি বন্ধু আমার বেদন বুঝো না
ফাল্গুন দোল পূর্ণিমায় মধুর মৃদু বায়ু বয়
ফুলবনে পুলকের আল্পনা
মাধুয়া মাধুবী রাতে বঁধুয়া তোমারি সাথে
করেছিনু সে যামিনী যাপনা
চলে গেলে আমায় ফেলে কি আগুন মোর বুকে জ্বেলে
একদিনও ফিরে এসে দেখলে না
যদি পেতাম দুঃখিনীর কুটিরে দেখাইতাম বক্ষ চিঁড়ে
বুকের ব্যথা মুখে বলা চলে না
কাষ্ঠ-নলে দাবানল পোড়ায় কত বন জঙ্গল
মন পোড়ানোর আগুন বন্ধু তাহা নয়
কত বিরহীনির অন্তর তলে
বিনা কাষ্ঠে আগুন জ্বলে
জলে গেলে জ্বলে দ্বিগুণ
নিভে না– না নিভে না
জনমে জনমে ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ ব্যোমে
খুঁজে ফিরি তোমারই ঠিকানা
পাগল বিজয় বলে চিত্ত চোর
আসবে কি জীবনে মোর
বুকে রইলো ব্যথা ভরা বাসনা।
Comments : Leave a Comment »
Tags: কবিয়াল, গান, বাউল, বাউল গান, বিজয় সরকার, baul, bijoy sarker, Boul, Lyrics, Song
Categories : বিজয় সরকার
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি
8072012জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি
আমরা বহুনামে ধরাধামে কত রকমে ডাকি
কেউ তোমায় বলে ভগবান আর গড কেউ করে আহ্বান
কেউ খোদা কেউ জিহুদা কেউ কয় পাপীয়ান
গাইলাম জনম ভরে মুখস্থ গান মুখ বুলা টিয়াপাখী
সর্বশাস্ত্রে শুনিতে যে পাই তোমার নাকি পিতামাতা নাই
তবে তোমার নামকরন কে করলে সাঁই বসে ভাবি তাই
তুমি নামি কি অনামি হে সাঁই আমরা তার বুঝি বা কি
কেহ পিতা কেহ পুত্র কয় আবার বন্ধু বলে কেউ দেয় পরিচয়
তুমি সকলেরই সকল আবার কারো কেহ নয়
তোমার যে আসল পরিচয় কে জানে তা কি না কি
বিজয় বলে মনের কথা কই আমি খাঁটি ভাবের পাগল নই
আমার গোল বেঁধেছে মনের মাঝে কাজেই পাগল হই
আমার বুকে যা নাই মুখে তা কই কাঁটা কান চুলে ঢাকি।
Comments : Leave a Comment »
Tags: কবিয়াল, গান, বাউল, বাউল গান, বিজয় সরকার, baul, bijoy sarker, Boul, Lyrics, Song
Categories : বিজয় সরকার
Bijoy Sarkar
Narail
পারিবারিক পরিচিতি:
"এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে"- বিখ্যাত এই মরমী গানের স্রষ্টা বিজয়কৃষ্ণ অধিকারী ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী মাসে নড়াইল জেলার সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সংগীত অনুরাগী পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী এবং মাতা হিমালয় কুমারী বৈরাগী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। বিজয়কৃষ্ণ পিতৃপ্রদত্ত খেতাব বৈরাগী পরিবর্তন করে অধিকারী খেতাবই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
বিজয় সরকারের শিক্ষাজীবন শুরু হয় জ্যাঠাতুত ভাই অভয় চন্দ্রের বাড়ীতে। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়ার পর তাঁর পিতা নবকৃষ্ণ তাঁকে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। পাঠশালায় অধ্যয়ন শেষ করে বিজয় ভর্তি হন হোগলাডাঙ্গা ইউ, পি, স্কুলে এবং পরবর্তীতে বাঁশগ্রাম এম. ই. স্কুলে। এখানে কিছুদিন পড়াশোনার পর তিনি ভর্তি হন সিংগাশোলপুর কে. পি. ইন্সটিটিউশনে এবং সেখান থেকেই ১৯২৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন।
টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তাঁর পেশাগতজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি কিছুদিন গোপালপুর কাচারীর নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন।
সঙ্গীতজীবন :
বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুলজীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন। পাঠশালার শিক্ষক নেপাল বাবুর কণ্ঠও ছিল অতিশয় মধুময়। তাঁরই উৎসাহ ও প্রশিক্ষণেই বিজয় সরকারের সংগীত জীবনের ভিত্তি রচিত হয়। শিশুকাল থেকে তার প্রতিভা বিমোহিত হয়ে তৎকালীন সময়ে বিখ্যাত লোককবি মনোহর সরকার মুগ্ধ হন। কিশোর বিজয় সংগীত চর্চার পাশাপাশি গ্রামে মঞ্চস্থ বিভিন্ন যাত্রায়ও অংশগ্রহণ করতেন।
১৯৩৩ সালে বিজয় সরকার ফরিদপুরের দুর্গাপুর গ্রামের মানোহর সরকারের বাড়ীতে কবিগানের দীক্ষাগ্রহণের জন্য যান এবং সেখানে দীর্ঘ দুই বছর শিক্ষালাভ করেন। তিনি খুলনার রাজেন সরকারের নিকটও বছর খানেক কবি গানের শিক্ষালাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কবি গানের দল গঠন করে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রানত্মরের মানুষকে গান শুনিয়ে তাদের মন জয় করেন। অর্ধ শতাব্দীব্যাপী উদাত্ত মধুর সুরেলাকণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করে মাতিয়ে রেখেছিলেন পল্লী বাংলার মানুষের মনকে। বিজয় সরকার বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে কবি গান পরিবেশন করে ব্যাপক খ্যাতি ও প্রচুর অর্থ অর্জন করেন।
বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য। গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারণ মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন।
প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষনিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন। বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছেন," মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।" দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগান, ইসলামীগান, আধ্যাত্নিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম, শ্রেণী সংগ্রাম ইত্যাদি।
এই যশস্বী শিল্পীর দরাজ কণ্ঠের কবি গান শুনে অনেক গুণীজন মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি একাধিকবার কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারম্ন শিল্পী এস.এম, সুলতানসহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন।
১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিজয় সরকারের গান শুনে মুদ্ধ হয় এবং আর্শীবাদ করেন।
১৯৩৭ সালে কলকাতার বিধান স্ট্রীটের রামকৃষ্ণ বাগচী লেনের এক দ্বিতল বাড়ীতে কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসীম উদ্দিন ও গায়ক আব্বাস উদ্দীনের সাক্ষাৎ লাভ করেন। বিজয় সরকার এই স্মরণীয় মুহুর্তে এই বিচ্ছেদ গানটি পরিবেশন করে তাঁদেরকে অভিভূত করে দিয়েছিলেন। গানটির কিছু অংশ :
সজনী ছুঁসনে আমারে
গৌররূপে নয়ন দিয়ে আমার জাত গিয়েছে
আমাকে স্পর্শ করিসনে যার কুল মানের ডর আছে।
১৯৮৩ সালে কলকাতা থেকে বিজয় সরকার রচিত ২৭০টি গান নিয়ে বিজয় সরকারের গানের সংকলন প্রকাশিত হয়।
সম্মাননা:
১৯৩৭ সালে ১ অক্টোবর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে কবিয়াল বিজয় সরকার কবি গান পরিবেশন করে খ্যাতিমান ছয় জন বরেণ্য পন্ডিতের যুক্ত সনদ লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী কলকাতার "ভারতীয় ভাষা পরিষদ" তাকে সংবর্ধিত করে। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
পরোলোক গমন :
দীর্ঘকাল মানুষকে গান শুনিয়ে বার্ধক্যজীবনে বিজয় সরকার পশ্চিম বাংলার কেউটিয়ায় নিজগৃহে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরম্ন করেন। শেষ জীবনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধত্বের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেন। এই দেশ বরেণ্য চারণ কবি, কবিগান গায়ক বিজয় সরকার ১৯৮৫ সালে ৪ ডিসেম্বর বুধবার ৮১ বছর বয়সে বন্যা কানন বিশ্বাসের বেলুড়ের বিধান পল্লীস্থ বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন।
কবিয়াল বিজয়ের কয়েকটি অসম্ভব জনপ্রিয় গান হলো:
১. পোষাপাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে
২. এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে
৩. কালার প্রেমে এতো জ্বালা হারে আমি আগে জানি নাই
৪. আল্লাহ রসুল বল মোমিন আল্লাহ রসুল বল
৫. নকশি কাঁথার মাঠেরে আজও কাঁদে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি
৬. শুধু পাষাণ নয় এই তাজমহলের পাথর
৭. আমি কৃঞ্চ বলিয়া ত্যাজিব পরাণ যমুনার তীরে
৮. আমায় পাগল পাগল করেছে কালার বাঁশিতে
৯. তুমি জানোনা'রে প্রিয়
১০. সুন্দর এই পৃথিবী
১১. কি সাপে কামড়াইলো
১২. জানিতে চাই দয়াল
১৩. পরবাসি হইয়া
তথ্য সূত্র:
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক : কাজী শওকত শাহী
/
মাহাবুবুর রশিদ লাভলু
সাংবাদিক, দিগন্ত টেলিভিশন, নড়াইল
/
গুণীজন.কম ওয়েবসাইট
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
ছবি:
সরদার ফরিদ আহমেদ
সর্বশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১
goonijon.com
somewhereinblog.net
(৭টি গান ডাউনলোড করুন)
wikipedia.org
somoynews.tv
amarblog.com
shobdoneer.com
bangladeshnews24x7.com
কবিয়াল বিজয় সরকারের গান
ক্যাটেগরি:
কবিয়াল বিজয় সরকারের জন্ম নড়াইলে। তিনি দক্ষিণবঙ্গে প্রবাদতুল্য কবিয়াল। মতুয়া সম্প্রদায় তাঁর গান গেয়ে পথ চলে। মতুয়া সম্প্রদায় হল নমশুদ্রদের একটি সহজিয়া মত। লাল নিশান নিয়ে তারা বারুনীতে যায়। পদব্রজে ওড়াকান্দিতে। বানী শুধু হরিব্বোল। মতুয়াদের গুরু হরি ঠাকুর। তাকে নিয়ে রাইরসরাজ কবি হরিলীলামৃত রচনা করেছেন বহুবছর আগে। এটা নমশুদ্রদের একটি ইতিহাস। ছোট বেলায় আমিও এই মতুয়াদের সঙ্গী হয়েছি।
বিজয় সরকারের আটটি গান পেলাম।
১.
পোষা পাখী উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে
সে আমারে ভুলবে কেমনে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে
খেলতো পাখী সোনালী খাঁচায়
কতো কি বলিতো আমায়
বসে রূপালী আড়ায়
স্ফটিকের বাতি ভরে খাবার দিতাম থরে থরে
নিঠুর পাখী আমার খেলতো আনমনে
জংলি পাখী করলো সর্বনাশ
শুধু করি হাই হুতাস
কোথায় করবো তারে তালাশ
বনের পাখী বনে গেল
দিল আমার বুকে শেল
নিঠুর পাখী আমার গেল কোন বনে
আমি পাখীর মায়া ভুলবো কেমনে
পাখীর মায়ায় পড়ে কতো লোক
তারা পেল আমার মত শোক
তাদের জল ভরা দুই চোখ
অসীম গহীন বনের পাখী
(তারে) আপন বলে কেন ডাকি
পাগল বিজয় কান্দে পাখীর সন্ধানে
পাগল বিজয় কান্দে বসে বিজনে
২.
দরদীয়া রে কোন দেশে যাবো
তোর লাগিয়া রে
আমার জীবনে মরনে সুখ নাই
ঐ মুখ না দেখিয়া রে
ঝিল্লিমুখর ঘর-বাড়ি সব রজনী নিঝুম
একা একা বসে আছি চোখে নাইরে ঘুম
কাঁদে আমার সাথে বনের কুসুম
রজনী জাগিয়া রে
আধ ফালি এক চাঁদের হাসি
শেফালী বনে
———————- ?
আছি প্রতীক্ষায় এই শূণ্য ভুবনে
মিলন
তটিনী চলেছে ঢেয়ে
সে কার তল্লাসিয়া রে
৩.
তুমি জানো নারে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা
তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি
মনে আপন মেনেছি
তুমি বন্ধু আমার বেদন বুঝো না
ফাল্গুন দোল পূর্ণিমায়
মৃদু মৃদু বায়ু বয়
ফুলবনে পুলকের আল্পনা
মাধুয়া মাধুবী রাতে বঁধুয়া তোমারি সাথে
করেছিনু যামিনী যাপনা
(তুমি) আমায় ফেলে চলে গেলে
কি আগুন মোর বুকে জ্বেলে
একদিনও দেখতে তুমি এলে না
যদি পেতাম দুঃখিনীর কুটিরে
দেখাইতাম অন্তর চিঁড়ে
বুকের ব্যথা মুখে বলা চলে না
কাষ্ঠ-নলে দাবানল
পুড়ে যায় বন জঙ্গল
মন পোড়া পিরিত বন্ধু তাহা নয়
কত বিরহীনির তুমি অন্তর তলে
বিনা কাষ্ঠে আগুন জ্বলে
জলে গেলে জ্বলে দ্বিগুণ
নিভে না– না নিভে না
খুঁজিলাম জনম জনম
ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ ব্যোম
কোনখানে পাইনে তোমার ঠিকানা
পাগল বিজয় বলে চিত্ত চোর
ফিরবে কি জীবনে মোর
মনে রইলে ব্যথা ভরা বাসনা
৪.
কোন দেশেতে যাব গুরু
যাব আমি তোমার সন্ধানে
জনম আমার গেল বিফলে
আমায় মানবকুঞ্জে কনে বা পাঠালে
বহুজনম করিয়ে এমন তবুও হলনা স্মরণ
শুধু মায়ারই কারণ
আমার এ জনম বিফলে গেল
কৃষ্ণ সেবায় না লাগিল
আমার এ দুঃখ কি যাবে মরিলে
ভাই-বন্ধু-পুত্র পরিজন
তারা ভাবে না কখন
আমি ভাবি সর্বক্ষণ
যাবে ভাবিলে হয় চির শান্তি
জীবনে কেটে যায়রে মোহশান্তি
তারে পুজলেম না দুই নয়নের জলে
সাধু গুরুর চরণ ধৌত জল
শুনি সর্ব তীর্থের ফল
কবে করিব সম্বল
শুধু এ করিও দান বন্ধু
নয়নে আসে যেন জল একবিন্দু
সে জলে দেব আমি
সাধু গুরুর চরণ যুগলে
আমার বৃথা এই জনমে
পাগল বিজয় বলে মন ইন্দ্রিয়রে
তুই রইলি মোহ অন্ধকারে
সাধু গুরুর কৃপা হলে
কত প্রেম ফল ফলে
৫.
এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে
যখন নগদ তলব তাকিত পত্র নেবে আসবে যবে
মোহ ঘুমে যে দিন আমার মুদিরে দুই চোখ
পাড়াপড়শী প্রতিবেশী পাবে কিছু শোক
তখন আমি যে এই পৃথিবীর লোক ভুলে যাবে সবে
যতো বড় হউকনা কেন রাজা জমিদার
পাকা বাড়ি জুড়ি গাড়ি ট্রানজিস্টার
তখন থাকবে না কোন অধিকার বিষয় ও বৈভবে
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা আকাশ বাতাস জল
যেমন আছে তেমনি ঠিক রইবে অবিকল
মাত্র আমি আর থাকবোনা কেবল জনপূর্ণ ভবে
শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ বন্ধ হলো যেন
এই পৃথিবীর অস্বস্তি বোধ থাকবেনা আর হেন
পাগল বিজয় বলে সেই দিন যেন এসে পড়ে কবে
৬.
আমি জানিতে চাই দয়াল তোমার
আসল নামটি কি
আমরা বহুনামে ধরাধামে
কত রকমে ডাকি
কেউ তোমায় বলে ভগবান
আর গড কেউ করে আহ্বান
কেউ খোদা কেউ জিহুদা
কেউ কয় পাপীয়ান
গাইলাম জনম ভরে মুখস্থ গান
মুখ বুলা টিয়াপাখী
সর্বশাস্ত্রে শুনিতে যে পাই
দয়াল তোমার নাকি মাতাপিতা নাই
তবে তোমার নামকরন কে করলে সাঁই
বসে ভাবি তাই
তুমি নামি কি অনামি সে সাঁই
আমরা তার বুঝি বা কি
কেহ পিতা কেহ পুত্র কয়
আবার বন্ধু বলে কেউ দেয় পরিচয়
তুমি সকলেরই সকল আবার
কারো কেহ নয়
তোমার দেওয়া আসল পরিচয়
কে জানে তা কি না কি
বিজয় বলে মনের কথা কই
আমি খাঁটি ভাবের পাগল নই
আমার গোল বেঁধেছে মনের মাঝে
তাতেই পাগল হই
আমার বুকে যা আই মুখে তা কই
কাঁটা কান চুলে ঢাকি
৭.
আমার দুই নয়নে বহে ধারা গো
আমি মুছব কত অঞ্চলে
প্রাণজ্বলে সে আর আসিবে গো
কলংকিনি না মরিলে
নিশিতে সাজাইলাম রে বন্ধু
ফুলের বাসর ঘর
দেখতে অতি মহোহর বন্ধু
আমার ফুলের মালা হইলো বাসী
মালা দিব কার গলে
প্রাণ জ্বলে
আসবে বলে প্রাণের বন্ধু (আমার)
রইলাম চেয়ে
আমার বন্ধু বিনোদিয়া বন্ধুরে
আমার বন্ধু বিনে সোনার যৌবন
মরিব সই অকালে
প্রাণ জ্বলে
আমি বন্ধুর তালাশে যাব
প্রতি ঘরে ঘরে
বন্ধু রইল কার বাসরে
বন্ধুরে
পাগল ফকির ভানু কেন্দে বলে
আর কি পাব তাহারে
৮.
একটা চিঠি লিখি তোমার কাছে ব্যাথার কাজলে
আশা করি পরান বন্ধু আছো কুশলে
আগে নিও ভালোবাসা অবলার না বলা ভাষা
আমার যত গোপন আশা ভিজাইয়া দেই নয়ন জলে
প্রথম যেদিন এসে তুমি মিলাইলে হাত
ফুটিল মনের বনে প্রেম পারিজাত
সেই বাসরে শুণ্যহিয়া আমি থাকি তবু পথ চাহিয়া
কান্দে আমার মন পাপিয়া গুঞ্জরিয়া বুকের তলে
যে বকুলের তলায় বসে শুনেছিলাম বাঁশী
সেই বকুলের মুকুলেতে গন্ধে অলি হাসে
ছিঁড়ে গেছে গাঁথা মালা বুকে জ্বলে দারুন জ্বালা
কুলবধু হইলা একলা কান্দি বসে নিরালে
ভুলে যাওয়া পথটি ধরে ভুল করে এসে
পার যদি দেখে যেও দিনের শেষে
(আমি) কেমন আছি পরের ঘরে দেখে যেও নয়ন ভরে
বনবিহঙ্গী থাকে যেমন বাঁধা শিকলে
কি যে লিখি কি বা বাকি পাইনা খুঁজিয়া
অভাগিনীর মনের বেদন (তুমি) লও বুঝিয়া
চিঠি লিখি করি ইতি নিও আমার প্রেম পিরীতি
(অধম) রসিক বলে শেষ মিনতি চরণ কমলে
পোষাপাখি একদিন উড়ে যাবে গানটি শুনুন--
http://www.youtube.com/watch?v=tgS5HO5tFTo&feature=related
- কুলদা রায় এর ব্লগ
- ৬৫৮বার পঠিত
কবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নড়াইলে দু'দিনব্যাপি চারণকবি বিজয় মেলা শুরু মঙ্গলবার
নড়াইলপ্রতিনিধি/এস:
"এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে । পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনি গো আমি একদিন ভাবিনী মনে,ও তুমি জাননা জানোরে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা এই সব বিখ্যাত মরমী গানের স্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার। বিরল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা সম্পন্ন এই আধ্যাতিক পুরুষ ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্র"য়ারী নড়াইলের বাশঁ গ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা হিমালয় অধিকারীর সংসারে জন্ম গ্রহন করেন। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। তিনি ভারতে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরন করেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত চারন কবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ৪ ঠা ডিসেম্বর মঙ্গলবার। বাল্যকাল থেকেই তিনি ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন। কিশোর বয়স থেকেই বিজয় গান রচনা করে নিজেই সুর দিয়ে পরিবেশন করতেন (গাইতেন)। ১৯২৯ সালে তিনি কবি গানের দল গঠন করেন এবং মঞ্চে বসে তাৎক্ষণিকভাবে গান লিখে ও সুর দিয়ে তা পরিবেশন করে উপমাদেশে সুনাম কুড়ান। এর ফলশ্রæতিতে ভারতীয় ভাষা পরিষদ ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রয়ারি বিজয়কে সংবর্ধিত করে। বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য। গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারন মানুষের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছেন। প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক আসরের প্রয়োজনে মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষনিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন। বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত শুনে পলি¬ কবি জসিম উদ্দিন বলেছেন," মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই । দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগান, ইসলামীগান, আধ্যাতিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম ইত্যাদি।
মৃত্যুর দীর্ঘ ২৭ বছর পার হলেও বিখ্যাত মরমী গানের স্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার আজও স্বীকৃতি পাননি জাতীয় চারন হিসাবে ,তৈরী হয়নি বিখ্যাত মরমী গানের স্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার এর স্মৃতি সংগ্রহশালা,বাড়ী যাওয়ার রাস্তা ,আসেনি বিদ্যুতের আলো।
প্রখ্যাত এই শিল্পীর গানের কোন সংগ্রহ না থাকায় এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে তার সব বিখ্যাত মরমী গানসহ তার স্মৃতি, শিল্পীর বাড়ী নড়াইল শহর থেকে ১৭-১৮ কিলোমিটার দূরে হলেও শিল্পীর বাড়ী আজো পৌছায়নি বিদ্যুৎ, নেই যাতায়াতের ভালো রাস্তা,শিল্পীর বাড়ী থেকে ৩ কিলোমিটারেও বেশী রাস্তা রয়েছে কাচাঁ। যে রাস্তায় বছরের বেশীর ভাগ সময়ই থাকে কাদাঁ, শুকনার সময়ও পায়ে হেটে ছাড়া চলাচল করা যায় না। ঐ গ্রামের কাছাকাছি কোন স্কুল না থাকায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বর্ষার সময় নৌকা করে স্কুলে যেতে হয় এবং শুকনার সময় দুরের রাস্তা সহজ করতে খালের উপর চার পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। তাই তাদের ছোট থেকেই নৌকা চালানোর শিক্ষা নিতে হয়। প্রতি বছর শিল্পীর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লোকের আগমন ঘটে। আসেন রাজনীতিবিদ,প্রশাসনের বড় কর্তারা, সরকার থেকে শিল্পীর বাড়ী একটি মঞ্চ করলেও রাস্তাঘাট ,বিদ্যুৎ আজো পৌছাইনি।প্রতি বছরই শুধু আশ্বাস দিয়ে যান কিন্তু কোন উন্নতি আজো হয়নি।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও কবিয়ালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চারন কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন নড়াইল শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আয়োজন করেছে ২ দিন ব্যাপী বিজয় মেলা। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে কবিয়ালে প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন,মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন, নীরবতা পালন, বিজয় গীতি প্রতিযোগীতা,পট গান ,আলোচনা সভা , গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কবিগান পরিবেশন এবং কবিগানের অবদান রাখার জন্য স্বর্ন পদক বিতরন। এ বছর স্বর্ন পদক পাচ্ছেন ফকিরহাটের কবিয়াল নিশিকান্ত সরকার ।এ ছাড়াও কবির বাড়ী পারিবারিক ভাবে দিনটি পালিত হবে।
মরমী এই শিল্পীকে জাতীয় চারন কবি হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান, মরোনোত্তর একুশে পদক প্রদান,নড়াইলে বিজয় সরকারের সামে ফকলো ইনিষ্টিটিউট তৈরী ,নিজ বাড়ী ডুমদি গ্রামে তার স্মৃতি সংগ্রহ শালা, শিল্পীর বাড়ী যাওয়ার রাস্তা অবিলম্বে তৈরীসহ বিদ্যুৎ এর আলোয় আলোকিত করা হোক তার গ্রাম এটায় নড়াইল বাসীর প্রত্যাসা।
কবিয়াল বিজয় সরকার শিশু বয়সে স'ানীয় নেপাল বিশ্বাস বা নেপাল পন্ডিতের কাছে বর্ণপচিয় লাভ করেন। এবং এই বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পি ও পন্ডিতের কাছে তিনি সঙ্গীতে হাতেখড়ি গ্রহণ করেন। নেপাল বিশ্বাস কিশোর বিজয়সহ ৪ কিশোরকে নিয়ে একটি গানের দল তৈরি করেন। গ্রামদেশে তাদের দলের বেশ নাম ছড়িয়ে পড়ে। এক সময়ে বিজয় ডুমদির অদূরে হোগলাডাঙ্গার স্কুলে ও শেষমেষ সিংগাশোলশোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ম্যাট্রিক পরীড়্গা দেয়ার আগেই তার পিতার মৃত্যু ও আর্থিক অনটনে লেখাপড়া বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেন নি তিনিু। বিজয় সরকার এই সসয়ে নিজগ্রাম ও অন্যান্য গ্রামের শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন অর্থাত তিনি শিড়্গকতাও করেছিলেন পাঠশালায়। পরে কিছু দিনের জন্য একটি জমিদারি তহশিল অফিসে তহশিলদারের কাজও করেন।
গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে কবিয়াল বিজয় সরকার ডুমদির অদূরে হোগলাডাঙ্গার আসরে মনোহর সরকার ও কবিয়াল রাজেন সরকারের কবির পালস্না শুনে মুগ্ধ হন। তিনি মনোহর সরকার(গোপালগঞ্জ জেলার,দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা)-কে একতারা বাজিয়ে একটি গান গেয়ে শোনান। কবিয়াল মনোহর তার গান শুনে মুগ্ধ হন। এবং তিনি চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে বিজয়কে আশিস দান করেন। মনোহর সরকার ঐ দিন থেকে বিজয়কে তার কবিগানের শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করে নেন।
বিজয় সরকার মনোহর সরকারের কাছে ২ বছর ও খুলনা বর্তমান বাগেরহাট জেলার কবিয়াল রাজেন সরকারের কাছে আরো ১ বছর কবিগান শ্ড়্িগা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি নিজেই কবির দল গঠন করে। অবিভক্ত বাঙলার বিভিন্ন স'ানে বিশেষত কলকাতা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স'ানে কবিগান পরিবেশন করে অশেষ সুনামের অধিকারী হন তিনি। বিজয় সরকারের পুর্বে কবিগান সভ্যলোকের শোনার বিষয় ছিলো না। বিজয় সরকার হরিচরণ আচার্যসরকার ও কবিয়াল রাজেন সরকারের কবিগানের সংস্কারের পথ ধরে কবিগানের নানা সংস্কার সাধনে এগিয়ে যান। কবিয়াল বিজয় সরকার কবিগানের পালস্নায় ধুয়াগানের প্রচলন করেন। প্রথম জীবনে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরম্নল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন ও জসীমউদ্দীনের গান আসরে পরিবেশন করে শিড়্গিত শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার কন্ঠে ছিলো সুরের অসাধারণ কারম্নকাজ। এরপর বিজয় সরকার নিজেই ধুয়াগান রচনায় ব্রতী হন। এবং তিনি কবিগান নিরপেড়্গ গান রচনায় এক বিষম্ময়কর সাফল্যের অধিকারী হন। বিজয় সরকার এই সব কবিগান নিরপেড়্গ গানের জন্য দেশের ও দেশের বাইরের গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। বিজয় সরকার তাঁর জীবদ্দশায় কিংবদনিত্মতে পরিণত হয়েছিলেন। জীবনের প্রথম দিকে পলিস্নকবি জসীমউদ্দীনের গভীর বন্ধুতাও সান্নিধ্য লাভ করেন। আকাশবাণী কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে কবি জসীমউদ্দীনের সঙ্গে কবিগানের পালস্নাও করেছিলেন তিনিু। জীবনের শেষ দিকে বিজয়ু নয়া দিলিস্ন,কলকাতা,ঢাকার বাংলা একাডেমি,খুলনা বেতার কেন্দ্র,ঢাকা বেতার কেন্দ্র,বিটিভিসহ বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ আসরে ও মিডিয়ায় সঙ্গীত পরিবেশন করে যথেষ্ট খ্যাতি ও যশের অধিকারী হন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র,বিভিন্ন চ্যানেল,চলচিত্রে,অডিও ভিডিও-তেও কবিয়ালের গান পরিবেশিত হয়ে আসছে। ভারতের পশ্চিম বাংলা ও বাংলা দেশের যে কোনো সঙ্গীতআসরে কবিয়াল বিজয়ের রচিত গান যেমন জনপ্রিয় তেমনি বিপুল আকর্ফণ সৃষ্টি করে। কবিয়াল বিজয়ের আসরের জন্য রচিত গান ও অন্যান্য গানের সংখ্যা প্রায় পোনে ৫শ'।
কবিয়াল বিজয়ের কয়েকটি অসম্ভব জনপ্রিয় গান হলো:
১.পোষাপাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে
২এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে
৩.কালার প্রেমে এতো জ্বালা হারে আমি আগে জানি নাই
৪.আলস্নাহ রসুল বল মোমিন আলস্নাহ রসুল বল
৪.নকশি কাঁথার মাঠেরে আজও কাঁদে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি
৫.শুধু পাষাণ নয় এই তাজমহলের পাথর
৬.আমি কৃঞ্চ বলিয়া ত্যাজিব পরাণ যমুনার তীরে
৭.আমায় পাগল পাগল করেছে কালার বাঁশিতে
যে সব গ্রনে'র সাহায্যে এই ভু্ক্িতটি রচিত হলো:
১.কবিগান ও চারণকবি আচার্য রাজেন্দ্রনাথ(১৯৭৯)---মহসিন হোসাইন
২.ভাটিয়ালিগানের রাজা পাগল বিজয়( )মহসিন হোসাইন
৩.কবিয়াল বিজয় সরকারের বিচ্ছেদীগান ও কবিগান( )- ----মহসিন হোসাইন
৪ বিজয় সরকার (জীবনী)------ মহসিন হোসাইন
৫.কবিয়াল বিজয়ের জীবন ও সঙ্গীত( ) মহসিন হোসাইন
৭.কবিয়াল বিজয়ের জীবন ও সঙ্গীতসমগ্র(২০১০)-- মহসিন হোসাইন
৮.কবিয়াল বিজয়ের আত্মকথা: নদী চলে সাগর সন্ধানে(২০১১)--মহসিন হোসাইন সম্পাদিত
৯.এশিয়াটিক সোসাইটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলাপিডিয়ায় প্রকাশিত বিজয় সরকারের জীবনকথা,
রচনায় মহসিন হোসাইন
কবিয়াল বিজয় সরকার ও তাঁর গান
২৫ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:১৮ |
এই লেখার সাথে সংযুক্তি হিসেবে বিজয় সরকারের সাত'টি গান আছে। গেয়েছেন বাণী চক্রবর্তী ও তাপসী চৌধুরী। শুনবার আমন্ত্রণ রইলো।
১। তুমি জানোনা'রে প্রিয়
২। পোষা পাখি
৩। নকশী কাঁথার মাঠ
৪। সুন্দর এই পৃথিবী
৫। কি সাপে কামড়াইলো
৬। জানিতে চাই দয়াল
৭। পরবাসি হইয়া
নীরবে নিভৃতে চলে যাওয়া প্রচার বিমুখ এক কবিয়াল বিজয় সরকার।
" এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে। সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে"
জন্ম নিলে চলে যেতে হয় বুঝি। এমন নির্মম সত্য জেনেও আমরা আগামীর পথ চলি। কারণ চলতে হয়। এটাই বোধ হয় জীবনের নিয়ম। জীবন তো ছুটে চলে বহতা নদীর মতন। তবে জীবনের গান কিংবা জীবন থেকে নেওয়া নির্মম আর বাস্তব চির সত্য পরিণতি গুলোকে কথার মালায় সাজিয়ে তাকে সুরের পুথি দিয়ে গেঁথে জীবনের জন্য গাওয়া গান ই বুঝি জীবনমুখী গান। তাইতো আমার গাই-" সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে"। আর এই কথাটি মানবকুলের কানে ঘুরে ঘুরে যিনি পৌঁছে দিতেন তিনি চারণ কবি বিজয় সরকার।
কবিয়াল, গীতি কবি, সুরকার, ও শিল্পী বিজয় সরকার। আধ্যাত্মিক, মরমী, বিচ্ছেদ, শোকগীতি, বাউল, শ্রী কৃষ্ণ, ইসলামী, কীর্তন, ধর্ম ভক্তি, দেশের গান সহ অসংখ্য গানের স্রষ্টা বিজয় সরকার। হয়তো আজকের প্রজন্ম বিজয় সরকার কে চিনেনা সেই ভাবে। তবে বিজয় এর গান "এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে। সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে"- এই গানটি শোনেন নি এমন মানুষ পাওয়া হয়তো বিরল। রিমেক এর বদৌলতে আজ অনেকের সি ডি প্লেয়ারে বাজে ওই সব গান গুলি। তবে সেই সব গান গুলোর স্রষ্টা কে এটি বোধ হয় জানিনা অনেকেই। বিচ্ছেদ গান গুলো যখন শুনি তখন কেমন করে যেন চোখের কোনে চিক চিক করে ওঠে মুক্তার মতন জ্বল। গ্রাম বাংলায় আজও বিচ্ছেদ গান গুলো বাজে। পালা হয়। ভক্তকুল অন্য এক জগতে হারিয়ে যায়। আধ্যাত্মিক এক ভবের মাঝে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে তালাশ করে। খুঁজে ফেরে নিজেকে। আহারে গান গুলি সেই সুদূর অজ পাড়া গায়ের সবুজ ঘাসের বুক চিরে ভেদ করে যখন ইট পাথরের শহরে আজও বেজে ওঠে- " তুমি জাননারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা" তখন এক অর্বাচীন আমি কান পেতে রই ওই ভক্তি গানের পানে। আমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে যাই। কখনো চোখের মনি ভেদ করে বারি ঝরে। এই হোল আমাদের নিজস্ব সঙ্গীত!
প্রায় ২০০০ এর মতন গানের স্রষ্টা বিজয় পাগল। বিজয় সরকার কে অনেকেই পাগলা বিজয় বলে ডাকে। ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আবার কারো মতে ১৯ ফেব্রুয়ারি বাবা নব কৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতা হিমালয়া বৈরাগীর অভাবের সংসারে জ্যোৎস্না রাতের শশী হয়ে নড়াইলের সদর উপজেলার ডুমুদি নামক এক ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় নামক স্থানে জন্ম নেয় উপমহাদেশের এই আধ্যাত্মিক কবিয়াল বিজয় সরকার। জন্মনেওয়া পদবী বৈরাগী থেকে তিনি এক সময় হয়ে যান সরকার। বিজয় বৈরাগী থেকে বিজয় সরকার। খুব ছোট বেলা থেকে এই কবি ছিলেন সঙ্গীতের প্রতি অস্বাভাবিক এক অনুরাগী। চাচতো ভাই অভয় চন্দ্রের বাড়িতে হাতে খড়ি নেন তার শিক্ষা জীবনের। এর পর গ্রামের এক পাঠশালায় কিছুদিন শিক্ষা গ্রহণ করেন। এর পর যথাক্রমে হোগলা ডাঙ্গা ইউ পি স্কুল ও বাঁশ গ্রাম এম ই স্কুলে তিনি ভর্তি হন। সেইখানে কিছুদিন শিক্ষা নেবার পর আবারো তিনি ভর্তি হন সিঙ্গাশোল পুর কে পি ইন্সটিটিউটে । ১৯২৬ সাল ভাগ্য বিধাতা একটু বিমুখ হন বুঝি বিজয় পাগল এর উপর। বিজয় সরকারের পিতা স্বর্গে চলে যান ঠিক তার ম্যাট্রিক পরীক্ষার খানিক আগেই। পিতার মৃত্যুর পর প্রবল এক আর্থিক সংকটে পড়েন বিজয় পরিবার।
অভাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিজয় হয়তো পেরে ওঠেনি। তাইতো বন্ধ হয়ে যায় তার লেখা পড়া। জীবন যেখানে দু মুঠো অন্ন খোঁজে সেইখানে শিক্ষা বুঝি গৌণ হয়ে পড়ে। তাইতো সেই অন্নের সন্ধানে তাকে ছুটে চলতে হয় অবিরাম। জীবনের কঠিন এক আবর্তে বিজয় সংসার আর দুঃখকে জয় করতে কর্মজীবন শুরু করেন টাবরা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হিসাবে। এর পর কিছুদিন গোপালপুর কাচারিতে নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু যার প্রতিটি শিরা উপশিরায় বয়ে চলে সঙ্গীত আর সুরের এক মায়া খেলা সে কি নিজেকে শত অভাবের মাঝেও নির্দিষ্ট কোন গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রাখতে পারে? খুব ছোট বেলায় তিনি লেখা পড়ার সাথে সাথে সঙ্গীতের তামিল নেওয়া শুরু করেন স্থানীয় নেপাল পণ্ডিত এর কাছে। সেই নেপাল পণ্ডিত কিশোর বিজয় সরকার সহ আরও চার জন কে নিয়ে একটি পালা গানের দল গঠন করেন। এবং সেই পালা দলটি দেশের বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। কিশোর বিজয় এর নাম আস্তে আস্তে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিজয় এর সঙ্গীত প্রেম আর গানের প্রতি এমন মমত্ববোধ দেখে কবি পুলিন বিহারী ও পঞ্চানন বিশ্বাস তাকে বুকে টেনে নেয়। তাদের কাছে বিজয় পাঁচালী গানের দিক্ষা নিতে থাকেন। কিশোর বিজয় হয়ে ওঠেন তখন আধ্যাত্মিক এক সঙ্গীত শিল্পী। বিচ্ছেদ গানের শিল্পী।
১৯৩৩ সাল। এবার ভাগ্য দেবী মুখ তুলে তাকাল বুঝি বিজয় পাগল এর উপর। পাশের গ্রামে কবিয়াল মনোহর সরকার ও রাজেন সরকারের পালা গানের দর্শক হন কবি বিজয় সরকার। এক পর্যায়ে কবিয়াল বিজয় পাগল এক তারা বাজিয়ে একটি বিচ্ছেদ গান পরিবেশন করে সবার চোখের জ্বল ঝরান। কবির গান শুনে হাউমাউ করে কেঁদে বুকে জড়িয়ে ধরেন কবিয়াল মনোহর। বিজয় কে তিনি বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে আশীর্বাদ করেন। এবং সেই দিন থেকেই কবি বিজয় সরকার কে শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করেন। বিজয় সরকার ২ বছর মনোহর এবং বাগেরহাটের আর এক কবিয়াল রাজেন সরকারের কাছে ১ বছর কবি গানের দীক্ষা নেন। ১৯২৯ সালে কবি বিজয় সরকার নিজেই কবিগানের দল গঠন করেন। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিজয় কবি গান গেয়ে ব্যাপক সমাদৃত হন। এবং বিজয় সরকারের নাম সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। বিজয় সরকার কবি গানের মধ্যে ভ্যারিয়েশান আনেন। তার পূর্বে তৎকালীন সভ্য বা সুশীল সমাজে কবি গান খুব বেশি শোণার বিষয় ছিলনা।কিন্তু বিজয় সরকার কবি গানকে অন্য এক মাত্রা দেন। এবং ওই সময় কার সভ্য সমাজের কাছে কবি গান হয়ে ওঠে আরদ্ধ্যের এক বিষয়। তিনি তার ওস্তাদ রাজেন সরকার ও মনোহর এর কবিগানের যেই দুর্বল দিক গুলো ছিল সেই গুলি সংস্কার করা শুরু করেন। কবিয়াল বিজয় সরকার কবি গানের পালায় ধুয়া গানের প্রচলন শুরু করেন। এবং পরবর্তী সময়ে তিনি নিজে ধুয়া গানের রচনায় ব্রতী হন।
১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিজয় সরকারের গান শুনে মুগ্ধ হয় এবং আশীর্বাদ করেন।
১৯৩৭ সালে কলকাতার বিধান স্ট্রিটের রামকৃষ্ণ বাগচী লেনের এক দ্বিতল বাড়িতে কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসীম উদ্দিন ও গায়ক আব্বাস উদ্দিনের সাক্ষাৎ লাভ করেন। বিজয় সরকার ওই স্মরণীয় মুহূর্তে একটি বিচ্ছেদ গান পরিবেশন করে তাদেরকে অভিভূত করেছিলেন। গানটির হল-
"সজনী ছুঁসনে আমারে
গৌররূপে নয়ন দিয়ে আমার জাত গিয়েছে
আমাকে স্পর্শ করিসনে যার কুল মানের ডর আছে"
১৯৮৩ সালে কলকাতা থেকে বিজয় সরকার রচিত ২৭০টি গান নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
১৯৩৭ সালে ১ অক্টোবর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে কবিয়াল বিজয় সরকার কবি গান পরিবেশন করে খ্যাতিমান ছয়জন বরেণ্য পণ্ডিতের যুক্ত সনদ লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার "ভারতীয় ভাষা পরিষদ" তাকে সংবর্ধিত করে। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
এই মহান শিল্পী ছিলেন বিখ্যাত চিত্র শিল্পী এস এম সুলতান এর একান্ত প্রিয় বন্ধু। সুলতান প্রায় ছুটে যেতেন কবিয়াল এর বাড়িতে। প্রচার বিমুখ ও নিভৃতচারী এই সঙ্গীত সাধক মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় ফুটিয়ে সবার অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। বিজয় ছিলেন আধ্যত্নিক চিন্তা-চেতনার প্রাণপুরুষ। যেকোনো ধর্মের প্রতিও সহনশীল। জীবদ্দশার শেষ দিকে এসে তিনি খুলনা বেতারের নিয়মিত গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী ছিলেন। যত দূর জানা যায় তার গানের সংকলন এখন আর্কাইভে খুব বেশি নেই। অথচ এই কালজয়ী শিল্পীর গান গুলো সংরক্ষণ করা জরুরী ছিল আগামী প্রজন্মের জন্য। আজ বিজয় সরকারের গান গুলো রিমেক করা হয়। তবে তার সম্পর্কে আমারা অনেকেই জানিনা যে সে কোন ধরনের শিল্পী ছিলেন। বারি সিদ্দিকি " এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে" গানটি গেয়েছেন বিকৃত ভাবে। সেই যাই হোক তবুও কবিয়ালের গান গুলো যে এখনও রিমেক হলেও বেচে আছে এটি বোধ হয় সান্ত্বনা বিজয় প্রেমীদের নিকট।
জাতি ধর্ম বর্ণের ঊর্ধ্বে থেকে এই চারণ কবি প্রায় দুই হাজার বিজয় গীতি রচনা করেন।
বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসীম উদ্দিন বলেছেন,-
"মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।"
এই যশস্বী শিল্পীর দরাজ কণ্ঠের কবিগান শুনে অনেক গুণীজন মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি একাধিকবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারু শিল্পী এস.এম. সুলতানসহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন।
আমাদের বাংলা গানের যেই ব্যপকতা সেই বিশদ বাংলা গানের ভাণ্ডার কে সমৃদ্ধ করে গেছেন কবিয়াল বিজয় সরকার। আজীবন এই সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব রয়ে গেছেন প্রচার বিমুখ। ১৯৮৫ সাল থেকে কবি বিজয় সরকার পশ্চিম বাংলার কেউটিয়ায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। শেষ জীবনে তিনি অন্ধত্বের সাথে আপোষ করেছিলেন খানিকটা সময়। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর বুধবার কবি সবাইকে কাঁদিয়ে ৮১ বছর বয়সে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। কবিয়াল নিজে জানতেন তাকেও চলে যেতে হবে একদিন। তাই তিনি লিখেছিলেন-" সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবেরে মন চলে যেতে হবে"। গেলো দিনটি ছিল কবির মৃত্যু বার্ষিকী। অথচ এবার ও কবিয়াল বিজয় সরকার তেমন কোন প্রচার পেলনা প্রচারণা নামক দানবীয় যন্ত্র গুলোতে। কিন্তু তাতে কি? মানব ও মানবতার জন্য আজীবন গেয়ে যাওয়া গান গুলো কবিয়ালের কোটি ভক্তরা লালন করে আসছে তাদের হৃদয়ে। তারা বিজয় সরকার কে অনুভব করে হৃদয় দিয়ে। অন্তরের গহীন কোনে লালন করে কবিয়াল বিজয় সরকারকে। প্রতি বছর ৪ ও ৫ ডিসেম্বর কবির বাড়ি নড়াইলে বসে বিজয় মেলা। আজও চলছে। কবির মৃত্যুদিনে তাকে হয়তো শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি। তবে কবিয়াল বিজয় সরকার আছেন আমার হৃদয়ে। কবিয়াল বিজয় সরকার এর প্রতি আমাদের গভীর শ্রধাঞ্জলি। চারণ কবি বিজয় সরকার বেচে রবে আমাদের অন্তরে। হাজার বছর ধরে।
*******************
তথ্য সূত্র-
বিজয় সরকারের জীবনী ও
বাংলাবাজার পত্রিকা-
- ক্যাটেগরি:
একদিন বিজয় সরকার
চৌকির ওপর কবিয়াল বিজয় সরকার বসে রয়েছেন। কবিয়ালের বসার ভঙ্গিটিও ঠিক রাজা-বাদশাদের মতো নয়, বরং বসার ভঙ্গিতে কেমন দীনহীন ভাব ফুটে উঠেছে ... প্রকৃত সাধক বলেই হয়তো। বিজয় সরকারের পরনে সাদা রঙের পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি। লুঙ্গিটির রংটিও সাদা। দেহটি রোগা ও শীর্ণ। কবিয়ালের অনেক বয়স হয়েছে। চুলে পাক ধরেছে। দৃষ্টিও ঠিক স্বচ্ছ বলে মনে হয় না। বিজয় সরকারের জন্ম সেই ব্রিটিশ আমলে। ১৯০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি । তার মানে সত্তর পেরিয়ে প্রায় আশির কাছাকাছি চলে এসেছেন। তবে কবিয়ালের চোখের মনিতে এখনও অফুরন্ত কৌতূহল ঝিকমিক করে; বেশ বোঝা যায়- শেষ বয়েসের রোগব্যাধি সত্ত্বেও জীবন বেশ উপভোগ করছেন বৃদ্ধ কবিয়াল।
১৯৮১ সাল। বর্ষাকাল । ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। ঘরটায় কিছুটা ঠান্ডা আর অন্ধকার জমে আছে। ঘরটা ছোট। চৌকির পাশে দরজা ঘেঁষে দুটি চেয়ার। তার একটিতে একজন বিদেশি মহিলা নীল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বসে আছেন। মহিলা বেশ লম্বা। গায়ের ফরসা, মাথায় কোঁকড়া লাল চুল। মুখটি ঈষৎ ডিম্বাকৃতির । বিদেশিনীকে দেখে বাড়ি বউঝিরা উঁিকঝুঁকি মারছে। শিশুরাও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বড় বড় চোখ মেলে চেয়ে রয়েছে। কবিয়াল বিজয় সরকারও বিদেশিনীর দিকেই চেয়ে আছেন।
অন্যটি চেয়ারটিতে বসে আছেন বাউল আবদুল করিম শাহ । অল্প কিছুক্ষণ আগে তিনি বিদেশিনীর সঙ্গে নড়াইলের ডুমদী গ্রামে কবিয়াল বিজয় সরকারের বাড়ি এসেছেন । তাঁর কাছ থেকেই মহিলা বিজয় সরকার সম্বন্ধে নানা তথ্য জেনে নিয়েছেন।
বিদেশি মহিলাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। নাম ক্যারল সলোমন । জন্ম আমেরিকার নিউইর্য়ক শহরে। ক্যারল সলোমন নিউইর্য়কের সিটি কলেজ পড়েছেন। চমৎকার বাংলা বলতে পারেন এবং লিখতেও পারেন। এখন পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে পিএইচ.ডি করছেন। গবেষনার বিষয় - গোবিন্দদাসের 'কালিকামঙ্গল'। ক্যারল সলোমন বিবাহিতা। আমেরিকার সিয়াটল শহরে থাকেন। স্বামী রিচার্ড সলোমন সংস্কৃত ভাষায় সুপন্ডিত; তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
বৃদ্ধ কবিয়ালকে ক্যারল সলোমন জিগ্যেস করলেন, আপনি কি আজ সুস্থ বোধ করছেন?
বিজয় সরকার মাথা নাড়েন। মিটমিট করে হাসছেন। মাঝেমাঝে কাশছেন অবশ্য।
ক্যারল সলোমন বললেন, আমি কিন্তু বাউলদের ওপর গবেষনা করছি। থাকি আমেরিকায়।কুষ্ঠিয়ায় এসেছিলাম। ওখান থেকেই আসছি।
ও।
আমি বাউলধর্মে দীক্ষা নিয়েছি । ক্যারল সলোমন বললেন।
দুনিয়ায় এতকিছু থাকতে একজন বিদেশিনী বাউলা হইছে। এই বিষয়টি জেনে বিজয় সরকার কৌতূহলী হয়ে উঠলেন যেন । জিগ্যেস করলেন, কার কাছে দীক্ষা নিছ তুমি?
বীরভূমের সনাতন দাস বাউল । নাম শুনেছেন?
হ। নাম শুনছি। আমার লগে পরিচয়ও আছিল। গানের দল লইয়া একবার বীরভুম গেছিলাম। সেই ১৯৩৫ সনে। তখন সনাতন দাসের বাড়িতই উঠছিলাম।
ক্যারল সলোমন জানেন, বিজয় সরকার ১৯২৯ সালে গানের দল গঠন করেন। তার আগে থেকেই অবশ্য বাউল-কবিয়ালদের সঙ্গে মিশতেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে বিজয় সরকার- এর গান শুনে কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন, কবি গোলাম মোস্তফা এবং শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আর্শীবাদ করেছিলেন। বিজয় সরকার-এর আসল নাম বিজয় অধিকারী। ভক্তরা 'পাগল বিজয়' বলে ডাকে । এসব তথ্য নড়াইল আসার পথে আবদুল করিম শাহর মুখ থেকে শুনেছেন ক্যারল সলোমন। বিজয় সরকারের বাবা নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মা হিমালয় অধিকারী। ছেলেবেলায় ডুমদী গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন। তরুণ বয়েসে জীবিকার তাগিদে অবশ্য স্থানীয় আদালতে ভাড়া সংগ্রহ কাজ করতে হয়েছে। অবশ্য বুকের ভিতরে সব সময় গান বেজে যাচ্ছিল। নানা অনুষ্ঠানে পুজাপার্বণে ডাক আসত। তখন গানও করতেন। গান নিজেই লিখে নিজেই সুর করে গাইতেন। একটি বিরহের গান বিজয় সরকারকে চিরকাল বাংলায় অমর করে রাখবে। সেই গানের কিছু চরণ ... যেমন কাষ্ঠযোগে দাবানল পোড়ে কত বনজঙ্গল মনপোড়া আগুন বন্ধু তাহা না বিরহীনির অন্তরতলে বিনাকাষ্ঠে আগুন জ্বলে জল দিলে বাড়ে দ্বিগুণ নেবে না ... বিজয় সরকারের গানে ছন্দের প্রয়োগ অসাধারণ । কবিয়ালের ছন্দজ্ঞান প্রখর। তাছাড়া বিজয় সরকার মানুষের মনের চিরন্তন ভাবটি সহজে প্রকাশ করতে পারেন। যেমন: এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। এভাবেই বিজয় সরকার আজ বাংলার বাউলজগতের একজন শ্রেষ্ঠ ভাবুক হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয়। ক্যারল সলোমন জানেন: Metaphysics বা অধিবিদ্যার মূল বিষয় নিয়ে মৌলিক সুরে গান বাঁধা চাট্টিখানি কথা নয়। গভীর দার্শনিকতত্ত্ব নিয়ে গান করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মন জয় করাও সহজ নয়। অথচ বাংলাদেশের নড়াইলের বিজয় সরকার তাই করে দেখিয়েছেন। বিজয় সরকার গেয়েছেন : জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি আমরা বহু নামে ধরাধামে কত রকমে ডাকি
সেই গানের টানেই আজ নড়াইল এসেছেন ক্যারল সলোমন ।
১৯৭৬ সালে প্রথম কলকাতায় যান ক্যারল সলোমন । তখনই প্রথম বাউল গান শোনেন। শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরে, কলকাতাতেই, লালনের গান শুনে - একেবারে যাকে বলে অভিভূত হয়ে পড়েন মার্কিন তরুণী।
কপালের ফ্যার নইলে কী আর পাখিটির এমন ব্যবহার ...
বাউল গান নিয়ে গবেষনা করবেন বলে ঠিক করলেন। যেহেতু স্নাতক পর্যায়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে । যতই বাউল গান শুনছেন, যতই এর ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্বন্ধে জানছেন, ততই এর গভীর আত্মিক প্রদেশে ডুবে যেতে থাকলেন ক্যারল সলোমন । বাংলাকে মনে হল পৃথিবীর একমাত্র 'স্পিরিচুয়াল নেশন'। বাঙালি -যারা বাউলদর্শনকে টিকিয়ে রেখেছে, সেই বাঙালির জীবনযাত্রা কিংবা বেঁচে থাকার এক সুগভীর মানে আছে। বাঙালির জীবনদর্শন অর্থহীন নয় ...
বীরভূমের সনাতন দাস বাউলের কাছ থেকে বাউলধর্মে দীক্ষা নিলেন ।
তারপর পশ্চিমবঙ্গের বাউলদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ালেন।
একবার। মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে কিছুকাল থাকার সময় সিধু বাউলের মুখে 'জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি'-এই গানটি শুনে এবং গানটির দার্শনিক তাৎপর্য উপলব্দি করে বিস্ময়ে স্তব্দ হয়ে যান ক্যারল সলোমন । অভিভূত হয়ে জিগ্যেস করেন, কার গান এটা?
কবিয়াল বিজয় সরকারের। সিধু বাউল বললেন।
আশ্চর্য! বিজয় সরকার কি agnostic ? ক্যারল সলোমন তীব্র কৌতূহল বোধ করেন। নিশ্চয়ই বিজয় সরকার অজ্ঞেয়বাদী। নইলে তিনি কেন বললেন- জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি । ক্যারল সলোমন জিগ্যেস করলেন, কোথায় থাকেন তিনি?
বাংলাদেশের নড়াইল।
সেই গানের টানেই ...এ বছর অর্থাৎ ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে এসেছেন এসেছেন ক্যারল সলোমন ।
এই মুহূর্তে বৃদ্ধ কবিয়াল কাশছেন। বৃদ্ধর দিকে তাকালেন ক্যারল সলোমন । অতি সাধারণ চেহারা। অথচ কত বড় দার্শনিক। চওড়া কপাল। চোখ দুটি সামান্য বসা। চেহারায় অসুখবিসুখে ছাপ। আজকাল কি গান করেন ইনি? বিজয় সরকারের কন্ঠে সেই মেটাফিজিক্যাল গানটি শুনতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু গান শোনাবার অনুরোধ করা কি ঠিক হবে? মাঝেমাঝেই কাশছেন। বৃদ্ধ কবিয়ালের মুখের দিকে তাকান ক্যারল সলোমন । চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছে। বিজয় সরকার অজ্ঞেয়বাদী হলেও ঈশ্বরভক্ত। ঈশ্বরকে দয়াল বলেছেন। ক্যারল সলোমন জানেন, বাংলায় ঈশ্বরকে 'প্রেমময় বন্ধু' বলার রীতি আছে। সিলেটের জগন্নাথপুরের রাধারমন বলেছেন,'আমার বন্ধু দয়াময়/তোমারে দেখিবার মনে লয়।' বিজয় সরকারও সেই রীতি অস্বীকার করেননি বা ভাঙেননি। তবে ঈশ্বরকে খোঁচা দিয়েছেন ঠিকই। আর গানটিতে নিজেকে পাগল বলে সম্বোধন করেছেন। কেন?
পাগল বিজয় বলে মনের কথা কই আমি খাঁটি ভাবের পাগল নই মনের মাঝে গোল বেঁধেছে তাই তো পাগল হই আমার বুকে যা নাই মুখে তাই কই কাটাকান চুলে ঢাকি।
কি এর মানে?
কথাগুলি কাকেই-বা বলছেন? ঈশ্বরকে? বলছেন,'আমি খাঁটি ভাবের পাগল নাই', তার মানে বিজয় সরকার দার্শনিক নন, সাধারণ মানুষ। 'মনের মাঝে গোল বেঁধেছে তাই তো পাগল হই'। তার মানে তাঁর মনে খটকা লেগেছে। কেন? ঈশ্বরকে বুঝতে পারছেন না বলে? এখানেও শেষে আবারও বিদ্রুপ আছে।' আমার বুকে যা নাই মুখে তাই কই/ কাটাকান চুলে ঢাকি।' ... বড় গভীর এর মানে। ঈশ্বরকে মানুষ নানা নামে ডাকে। কিন্তু কোন নামটি সত্য? গানে এই ভাবনাও প্রকাশ পেয়েছে:
কেউ তোমায় বলে ভগবান আবার গড বলে কেউ করে আহবান । কেউ খোদা কেউ যিশূ-বা কেউ কয় পাপিয়ান গাইলাম জনম ভরা মুখস্থ গান মুখবলা টিয়াপাখি।
(পাপিয়ান (পাতিয়ান?) পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের দেবতা।) শেষ দুটি লাইনের তাৎপর্য গভীর। 'গাইলাম জনম ভরা মুখস্থ গান/মুখবলা টিয়াপাখি।' কি এর মানে? দয়াময় ঈশ্বরের প্রতি এই অবিশ্বাস কেন? নাকি অভিমান?
আমরা সর্বশাস্ত্রে শুনিবারে পাই তোমার নাকি পিতামাতা নাই, তোমার নামকরণ কে করেছে বইসা ভাবি তাই তুমি নামে কি অনামে গোঁসাই আমরা তার বুঝিব কী
'তোমার নামকরণ কে করেছে /বইসা ভাবি তাই' -এই লাইনেও শ্লেষ প্রকট। শেষ দুটি চরণেও তাই। 'তুমি নামে কি অনামে গোঁসাই/
আমরা তার বুঝিব কী' ... এ লাইনে একাধারে সংশয়বাদী ও অজ্ঞেয়বাদী মনে হল বিজয় সরকারকে। 'আমরা তার বুঝিব কী' ...ঈশ্বরকে বোঝা যায় না বা বোঝা সম্ভব না। অনেক বছর আগে মার্কিন গবেষক রেবেকা ম্যানরিং বলেছিলেন, বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জের সাধারণ মানুষ
যেরকম গভীর তাত্ত্বিক গান শুনে সে সম্বন্ধে পৃথিবীর মানুষের কোনওরকম ধারণা নেই। শিক্ষিত জাতি ছাড়া এমনটি সম্ভব না।
ক্যারল সলোমন আজ সেই সত্যটিই আবার নতুন করে উপলব্দি করলেন। বৃদ্ধ কবিয়ালকে বললেন, আজ বৃষ্টিতে ভিজে আপনার কাছে এলাম। গান শোনাবেন না?
বৃদ্ধ বাউল হাসলেন।
আবদুল করিম শাহ বললেন, আইজ মনে হয় কবিয়ালের শরীরডা ভালা না।
ঠিক আছে দু লাইন।
কোনডা শুনবার চাও ? বিজয় সরকার চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন।
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কী।
বিজয় সরকার হাসলেন। তারপর গান ধরলেন:
আমরা বহু নামে ধরাধামে কতই রকমে ডাকি জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কী ... আমি জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কী
এ ক'টি লাইনই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খানিকটা শ্লেষ্মামিশ্রিত কন্ঠে বেশ ক'বার গাইলেন বৃদ্ধ কবিয়াল। তারপর কাশির দমকে ভেঙে পড়লেন।
থাক। ক্যারল সলোমন উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন।
বিজয় সরকার কাশছেন। ক্যারল সলোমন মুগ্ধ চোখে এই বাঙালি সংশয়বাদী ও অজ্ঞেয়বাদী দার্শনিকটিকে দেখছেন। বুঝতে পারছেন তিনি তার জীবনের এক তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষণে উপস্থিত হয়েছেন। জগতে দার্শনিক আরও রয়েছে । তাদের তুলনায় বাংলার দার্শনিকরা অনেক স্বতন্ত্র। বাংলার দার্শনিকগণ তাদের ভাবনা রূপায়ন করেন গানে ... লালন থেকে রবীন্দ্রনাথ; রবীন্দ্রনাথ থেকে বিজয় সরকার ... বাংলার দার্শনিক জগৎটি এখানেই পৃথিবীর অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ...
ঘটনাটি কাল্পনিক। তবে ১৯৮১ সালে নড়াইলের বাড়িতে বিজয় সরকারের সঙ্গে ক্যারল সলোমন যে দেখা হয়েছিল এই বিষয়টি আবুল আহসান চৌধুরীর 'লালন সাঁইয়ের সন্ধানে' বইয়ের ১৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। ক্যারল সলোমন সম্বন্ধে তথ্যও পেয়েছি ওই বইতেই । মার্কিন নারী ক্যারল সলোমন বাংলাকে ভালোবাসতেন। মাইজভান্ডারি গান নিয়েও গবেষনা শুরু করেছিলেন। ... ২০০৯ সালে মারা যান। তাঁকে নিয়ে সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ ...
Click This Link
কোনও কোনও সূত্র বিজয় সরকারের জন্মতারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি উল্লেখ করেছে।
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি গানটির লিঙ্ক
Click This Link
একুশে পদক
একুশে পদক | |
একুশে পদকের একটি মেডেল | |
পুরস্কার দেওয়া হয় যেজন্য | বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে এ পুরস্কার দেয়া হয়। |
পুরস্কার দাতা | বাংলাদেশ |
স্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
প্রথম পুরস্কৃত হয়েছিলো | ১৯৭৬ |
সর্বশেষ পুরস্কৃত হয়েছে | ২০১২ |
একুশে পদক (ইংরেজি: Ekushey Padak) বাংলাদেশের একটি জাতীয় পুরস্কার। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেয়া হচ্ছে। ভাষা আন্দোলন এর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সালে এই পদকের প্রচলন করা হয়।[১] ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩৬১ জন গুণী ব্যক্তি ও ২টি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে।[২][তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
[সম্পাদনা]পদক
একুশে পদকে ১ লক্ষ টাকা, ১৮ ক্যারট স্বর্ণের মেডেল এবং একটি সনদ দেয়া হয়।[১] পদকটির ডিজাইন করেছেন নিতুন কুণ্ডু।[৩] প্রত্যেকে পদকপ্রাপ্তকে একটি স্বর্ণ পদক, সম্মাননা সনদ এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য দেয়া হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে পুরস্কারের অর্থমূল্য ২৫০০০ টাকা দেয়া হত, এবং বর্তমানে এটি ১লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
[সম্পাদনা]পদকপ্রাপ্তদের তালিকা
[সম্পাদনা]১৯৭৬
১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো একুশে পদক দেয়া হয়। প্রথমবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সাতজনকে একুশে পদক দেয়া হয়।
- কাজী নজরুল ইসলাম (সাহিত্য)
- আবদুল কাদির (সাহিত্য)
- ইব্রাহীম খাঁ (নাটক)
- সুফিয়া কামাল (নাটক)
- আবুল কালাম শামসুদ্দিন (নাটক)
- তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া (সাংবাদিকতা)
- আবদুস সালাম (সাংবাদিকতা)
[সম্পাদনা]১৯৭৭
১৯৭৭ সালে তিনজনকে পদক দেয়া হয়।
- শামসুর রহমান (নাটক)
- আবদুল আলীম(সঙ্গীত)
- আবদুল গাফফার চৌধুরী (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৭৮
১৯৭৮ সালে দুইজনকে এ পদক দেয়া হয়।
- আহসান হাবীব (সাহিত্য)
- নূরুল মোমেন (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৭৯
১৯৭৯ সালে দুইজনকে পদক দেয়া হয়।
- আজিজুর রহমান (সাহিত্য)
- আবদুল লতিফ (সঙ্গীত)
[সম্পাদনা]১৯৮০
১৯৮০ সালে তিনজনকে পদক দেয়া হয়।
- আবুল হোসেন (সাহিত্য)
- মুর্তজা বশীর (চিত্রকলা)
- রাহাত খান (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৮১
১৯৮১ সালে তিনজনকে পদক দেয়া হয়।
- ওবায়েদ উল হক (সাংবাদিকতা)
- মুস্তফা নূরউল ইসলাম (সাহিত্য)
- আবদুল হালিম চৌধুরী (সঙ্গীত)
[সম্পাদনা]১৯৮২
১৯৮২ সালে একজনকে এ পদক দেয়া হয়।
- আবুল হাসান (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৮৩
১৯৮৩ সালে তিনজনকে পদক দেয়া হয়।
- আবু জাফর শামসুদ্দিন (সাহিত্য)
- শওকত ওসমান(সাহিত্য)
- সৈয়দ আলী আহসান (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৮৪
১৯৮৪ সালে তিনজনকে পদক দেয়া হয়।
- রশীদ করীম (সাহিত্য)
- হাসান হাফিজুর রহমান (সাহিত্য)
- সৈয়দ শামসুল হক (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৮৫
১৯৮৫ সালে পাঁচজনকে পদক দেয়া হয়।
- আনিসুজ্জামান (সাহিত্য)
- আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন (বিজ্ঞান)
- আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (সাহিত্য)
- গাজী শামসুর রহমান (সাহিত্য)
- সৈয়দ জাহাঙ্গীর (চিত্রকলা)
[সম্পাদনা]১৯৮৬
১৯৮৬ সালে চারজনকে পদক দেয়া হয়।
- আলাউদ্দিন আল আজাদ (সাহিত্য)
- এস. এম. সুলতান (চিত্রকলা)
- আসকার ইবনে শাইখ (সাহিত্য)
- মোবারক হোসেন খান (সঙ্গীত)
[সম্পাদনা]১৯৮৭
১৯৮৭ সালে ছয়জনকে পদক দেয়া হয়।
- আবু হেনা মোস্তফা কামাল (সঙ্গীত)
- আহমেদ হুমায়ুন (সাংবাদিকতা)
- প্রফেসর এম.এ.নাসের (শিক্ষা)
- আল মাহমুদ (সাহিত্য)
- আবদূর রাজ্জাক (চারুশিল্প)
- জাহানারা আরজু (সাহিত্য)
- মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৮৮
১৯৮৮ সালে দুইজনকে পদক দেয়া হয়।
- আশরাফ সিদ্দিকী (সাহিত্য)
- ফজল শাহাবুদ্দীন (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৮৯
১৯৮৯ সালে দুইজনকে পদক দেয়া হয়।
- রাজিয়া মজিদ (সাহিত্য)
- শাহেদ আলী (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৯০
১৯৯০ সালে একজনকে পদক দেয়া হয়।
- শওকত আলী (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৯১
১৯৯১ সালে ছয়জনকে পদক দেয়া হয়।
- আহমদ শরীফ (শিক্ষা)
- এ.এম.হারুনুর রশীদ (বিজ্ঞান)
- কবীর চৌধুরী (সাহিত্য)
- এ এফ সালাউদ্দিন আহমেদ (শিক্ষা)
- ফয়েজ আহমদ (সাহিত্য)
- সানজীদা খাতুন (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]১৯৯২
১৯৯২ সালে একজনকে পদক দেয়া হয়।
- মোবাশ্বের আলী (শিক্ষা)
[সম্পাদনা]১৯৯৩
১৯৯৩ সালে একজনকে পদক দেয়া হয়।
- রফিকুন নবী (চারু শিল্প)
[সম্পাদনা]১৯৯৪
১৯৯৪ সালে একজনকে পদক দেয়া হয়।
- হুমায়ুন আহমেদ (শিক্ষা)
[সম্পাদনা]১৯৯৫
১৯৯৫ সালে একজনকে পদক দেয়া হয়।
- আহমদ রফিক (শিক্ষা)
[সম্পাদনা]১৯৯৬
১৯৯৬ সালে দুইজনকে পদক দেয়া হয়।
- মোস্তফা জামান আব্বাসী (সঙ্গীত)
- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (শিক্ষা)
[সম্পাদনা]১৯৯৭
১৯৯৭ সালে চারজনকে পদক দেয়া হয়।
- আবু ইসহাক (সাহিত্য)
- মমতাজ উদ্দীন আহমদ (নাটক)
- রাজিয়া খান (সাহিত্য)
- সন্তোষ গুপ্ত (সাংবাদিকতা)
[সম্পাদনা]১৯৯৯
১৯৯৯ সালে তিনজনকে পদক দেয়া হয়।
- আবুল কাসেম সন্দীপ (শিক্ষা)
- সন্তোশ গুপ্ত (সাংবাদিকতা)
- সুভাষ দত্ত (চলচ্চিত্র)
[সম্পাদনা]২০০০
২০০০ সালে চারজনকে পদক দেয়া হয়।
- আব্দুল জব্বার (ভাষা শহীদ)
- আব্দুস সালাম (ভাষা শহীদ)
- রফিকউদ্দিন আহমদ (ভাষা শহীদ)
- আবুল বরকত (ভাষা শহীদ)
[সম্পাদনা]২০০১
২০০১ সালে তিনজনকে পদক দেয়া হয়।
- আব্দুল মতিন (ভাষা আন্দোলন)
- নির্মলেন্দু গুণ (সাহিত্য)
- শাহ আবদুল করিম (সাঙ্গীত)
[সম্পাদনা]২০০৪
২০০৪ সালে দশজনকে পদক দেয়া হয়।
- মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া (শিক্ষা)
- মনিরুজ্জামান মিঞা (সঙ্গীত)
- ওয়াকিল আহমেদ (গবেষনা)
- ফরিদা হোসাইন (সাহিত্য)
- নিলুফার ইয়াসমিন (সঙ্গীত)
- মুস্তাফা মনোয়ার (চিত্রকলা)
- ফয়জুননেসা চৌধুরানী (সমাজসেবা)
- জোবাইদা হান্নান (সমাজসেবা)
- এনায়েতুল্লাহ্ খান (সাংবাদিকতা)
- চাষী নজরুল ইসলাম (চলচ্চিত্র)
[সম্পাদনা]২০০৫
২০০৫ সালে পনেরজনকে পদক দেয়া হয়।
- সৈয়দ মুজতবা আলী (সাহিত্য)
- জুবাইদা গুলশান আরা (সাহিত্য)
- আসহাব উদ্দিন আহমেদ (সাহিত্য)
- আবু সালেহ (সাহিত্য)
- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (শিক্ষা)
- চিত্তরঞ্জন সাহা (শিক্ষা)
- ইকবাল মাহমুদ (শিক্ষা)
- বিশ্বদানন্দ মহাথীর (সমাজসেবা)
- মশির হোসেইন (সাংবাদিকতা)
- সাইফুর রহমান (ভাষা আন্দোলন)
- খন্দকার দেলোয়ার হোসাইন (ভাষা আন্দোলন)
- আবদুল গফুর (ভাষা আন্দোলন)
- বশির আহমেদ (সঙ্গীত)
- আবু সাত্তার মাহমুদ (সঙ্গীত)
- আপেল মাহমুদ (সঙ্গীত)
[সম্পাদনা]২০০৬
২০০৬ সালে তেরজনকে পদক দেয়া হয়।
- জসীমউদ্দিন আহমদ (শিক্ষা)
- ড. সুকোমল বড়ুয়া(শিক্ষা)
- আনোয়ারা বেগম (শিক্ষা)
- এম. আসাদুজ্জামান (শিক্ষা)
- আবুল কালাম মনজুর মোর্শেদ (সাহিত্য)
- মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম(সাহিত্য)
- হামিদুজ্জামান খান(ভাস্কর্য)
- বেগম রওশন আরা মুস্তাফিজ (সঙ্গীত)
- আনোয়ারউদ্দীন খান (সঙ্গীত)
- ফাতেমা তুজ জোহরা (সঙ্গীত)
- গাজীউল হাসান খান (সাংবাদিকতা)
- শাহাদৎ চৌধুরী (সাংবাদিকতা)
- আফতাব আহমেদ (আলোকচিত্র)
[সম্পাদনা]২০০৭
২০০৭ সালে পাঁচজনকে পদক দেয়া হয়।
- মুহম্মদ হাবিবুর রহমান(সাহিত্য)
- মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ(সাহিত্য)
- আনোয়ার পারভেজ (সঙ্গীত)
- এম এ বেগ(আলোকচিত্র)
- সেলিম আল দীন (নাটক)
[সম্পাদনা]২০০৮
২০০৮ সালে দশজনকে পদক দেয়া হয়।
- নাজমা চৌধুরী (গবেষণা)
- খন্দকার নূরুল আলম (সঙ্গীত)
- ওয়াহেদুল হক (সঙ্গীত)
- শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব (সঙ্গীত)
- শেফালী ঘোষ (সঙ্গীত)
- মুজাফফর আহমেদ (অর্থনীতিবিদ)
- অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ (শিক্ষা)
- খালেক নওয়াজ খান (সাহিত্য)
- জোহরা বেগম কাজী (সমাজকর্ম)
- দিলওয়ার খান (সাহিত্য)
[সম্পাদনা]২০০৯
২০০৯ সালে তেরজনকে পদক দেয়া হয়।
- ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর (শিক্ষা)
- ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (গবেষণা)
- মাহবুব উল আলম চৌধুরী (ভাষা আন্দোলন)
- আশরাফ উজ জামান (সাংবাদিকতা)
- বেগম বিলকিস নাসির উদ্দিন (সাংবাদিকতা)
- মানিক চন্দ্র সাহা (সাংবাদিকতা)
- হুমায়ুন কবীর বলু (সাংবাদিকতা)
- সেলিনা হোসেন (সাহিত্য)
- সামসুজ্জামান খান (গবেষণা)
- ড. কাজী খালিকুজ্জামান (দারিদ্র বিমোচন)
- ড. মোহাম্মদ রফি খান (সমাজকর্ম)
- মনসুর উল করিম (চিত্রকর্ম)
- রামেন্দু মজুমদার (থিয়েটার)
[সম্পাদনা]২০১০
২০১০ সালে পনেরজনকে পদক দেয়া হয়।
- ড. গোলাম মওলা (ভাষা আন্দোলন)
- মোহাম্মদ রফিক (সাহিত্য)
- সৈয়দ আহমেদ (সাহিত্য)
- হেলেনা খান (সাহিত্য)
- মুনতাসীর মামুন (গবেষণা)
- এ এস এইচ কে সাদেক (সামাজিক ব্যক্তিত্ব)
- সংঘরাজ জ্যোতিপাল মোহাথেরো (সামাজিক ব্যক্তিত্ব)
- হানিফ সংকেত (সামাজিক ব্যক্তিত্ব)
- পার্থ প্রতীম মজুমদার (মুকাভিনয়)
- নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু (থিয়েটার)
- এ কে এম আবদুর রউফ (শিল্পী)
- ইমদাদ হোসেন (শিল্পী)
- আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল (সঙ্গীত পরিচালক)
- বেগম লায়লা হাসান (শিল্পী)
- মোহাম্মদ আলম (ফটো সাংবাদিকতা)
[সম্পাদনা]২০১১
২০১১ সালে তেরজনকে পদক দেয়া হয়।
- ভাষা সৈনিক শওকত আলী (ভাষা আন্দোলন)
- মোশারেফ উদ্দিন আহমেদ (ভাষা আন্দোলন)
- ওস্তাদ আখতার সাদমানী (শিল্পকলা)
- আবদুল হক চৌধুরী (গবেষনা)
- আমানুল হক (ভাষা আন্দোলন)
- বাউল করিম শাহ (শিল্পকলা)
- জোৎস্না বিশ্বাস (শিল্পকলা)
- নূরজাহান বেগম (সাংবাদিকতা)
- মো. আবুল হাশেম (সমাজসেবা)
- মো. হারেস উদ্দিন (পলান সরকার) (সমাজসেবা)
- মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (সমাজসেবা)
- শহিদ কাদরী (ভাষা ও সাহিত্য)
- আবদুল হক (ভাষা ও সাহিত্য)
[সম্পাদনা]২০১২
২০১২ সালে পনেরজনকে পদক দেয়া হয়।
- মমতাজ বেগম (ভাষা আন্দোলন)
- মোবিনুল আজিম (শিল্পকলা)
- তারেক মাসুদ (শিল্পকলা)
- ড. ইনামুল হক (শিল্পকলা)
- মামুনুর রশীদ (শিল্পকলা)
- অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী(শিল্পকলা)
- এহেতশাম হায়দার চৌধুরী (সাংবাদিকতা)
- আশফাক মুনীর চৌধুরী (মিশুক মুনীর) (সাংবাদিকতা)
- হাবিবুর রহমান মিলন (শিক্ষা)
- অধ্যাপক অজয় কুমার রায় (শিক্ষা)
- ড. মনসুরুল আলম খান (শিক্ষা)
- ড. এ কে নাজমুল করিম (শিক্ষা)
- অধ্যাপক বরেন চক্রবর্তী (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি)
- শ্রীমৎ শুদ্ধানন্দ মহাথের (সমাজসেবা)
- ড. হুমায়ুন আজাদ (ভাষা ও সাহিত্যে) [৫]
[সম্পাদনা]২০১৩
২০১৩ সালে ১২ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক দেয়া হয়।
- এম এ ওয়াদুদ (ভাষা আন্দোলন)
- অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ (ভাষা আন্দোলন)
- অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান (ভাষা আন্দোলন)
- তোফাজ্জল হোসেন (ভাষা আন্দোলন)
- এনামুল হক মোস্তফা শহীদ (মুক্তিযুদ্ধ)
- নূরজাহান মুরশিদ (সমাজসেবা)
- স্যামসন এইচ চৌধুরী (সমাজসেবা)
- রফিক আজাদ (ভাষা ও সাহিত্য)
- আসাদ চৌধুরী (ভাষা ও সাহিত্য)
- কাদেরী কিবরিয়া (শিল্পকলা)
- জামালউদ্দিন হোসেন (শিল্পকলা)
- চারণ কবি বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী (বিজয় সরকার) (শিল্পকলা)
- বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী (শিল্পকলা)[৭]
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ ১.০ ১.১ জাতীয় পুরস্কার, বাংলাপিডিয়া থেকে।.
- ↑ বিডিনিউজ২৪
- ↑ Obituary of Nitun Kundu, The Daily Star, September 16, 2006.
- ↑ ২০১১ সালের একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকা, দৈনিক প্রথম আলো
- ↑ দৈনিক প্রথম আলো
- ↑ বিডিনিউজ২৪
- ↑ দৈনিক প্রথম আলো
মন্তব্য
পাগল বিজয় বলে চিত্ত চোর, আসবে কি জীবনে মোর?
সেই কথা তুমি বন্ধু জানো না... তুমি জানো না...
তুমি জানো না রে দয়াল... তুমি মোর জীবনের সাধনা...
আহ্ বিজয় সরকার...
আমার বাবা একটু মা'রেফত লাইনের লোক ছিলো। আমাদের বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে একটা জলসা হতো। আমি তখন খুব ছোট। আমি ডানোর কৌটায় তাল দিতাম... তখন থেকে বিজয় সরকার আমার মনে।
বিজয় সরকার নিয়ে অনেক কিংবদন্তী শুনতাম ছেলেবেলায়... তার কবর বিষয়ক কাহিনী একসময় খুব আশ্চর্য লাগতো। তখনো বিজয় সরকারের কোনো রকর্ড আমি পাইনি। কিন্তু তার গান গাইতাম!
তার অনেক বছর পরে কোলকাতায় গিয়ে এইচএমভির রেকর্ডে বিজয় সরকারের ১০টা গান পাই। সেটাও প্রায় এক যুগ আগের কথা।
বিজয় সরকারের যে কয়টা গান আমি এখন পর্যন্ত শুনেছি... গুরু...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তিন নাম্বার গানটা, তুমি জানো না গো প্রিয় ... এটা অনেকদিন আগে শুনেছিলাম। আছে আপনার কাছে?
আনিসুলপনা | বরাহশিকার ♪♫ | কালাইডোস্কোপ
এই গানটা একটা ঢাকাই সিনেমা ব্যবহার করা হয়েছিল। সিনেমার নাম সম্ভবতঃ "রসের বাইদানী"। এবং গানটা সম্ভবতঃ এন্ড্রু কিশোর গেয়েছিলেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি অবশ্য শুনেছিলাম একজন চারণগায়কের মুখে।
আনিসুলপনা | বরাহশিকার ♪♫ | কালাইডোস্কোপ
বানী চক্রবর্তী এবং তাপসী চৌধুরীর গাওয়া ভার্শনটা পাবেন এখানে।
এই পোস্টে প্রকাশিত গানগুলি ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। এই পোস্টটি তাই কোন অর্থেই মৌলিক নয়। কিভাবে মডারেশন পার হল সেটা নিয়ে চিন্তিত হলাম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
"তুমি জানো নারে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা"
৮০'র দশকে কোন এক ব্যান্ড গানটা বাজিয়েছিল, নামটা এখন মনে করতে পারছিনা।
মনে হয় ব্যান্ডটা ছিল চাইম। খালেদ গানটা গেয়েছিল...পুরো নিশ্চিত নই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
একদম ঠিক, মনে পড়লো।
আসলে বুড়া হইছি, অনেক কিছুই ভুলে যাই।
ব্যান্ডটার নাম চাইম। খুবই জনপ্রিয় ছিলো একসময়।
রাতঃস্মরণীয়
অনেক কবি গান শুনেছি। আমাদের শহরের কলেজ মাঠে হত। অনেক বড়ো মাঠ। বঙ্গবন্ধু এমাঠে ভাসণ দিতেন। আর কবিগানের আসরে গ্রাম ভেঙে আসত। মাঠ পেরিয়ে রাস্তা, নদীর পাড়ে লোকে বসে পড়ত। দুই কবি লড়াই করছেন। একজন ভক্ত আরেকজন ভগবান। ভক্তের ছেলে অকালে মরে গেছে। ভগবানকে বলছে--আমি তোর এত সেবা করলাম। কিন্তু আমার ছেলেটাকে নিয়ে গেলি কোন অপরাধে? আমার ছেলে ফিরিয়ে দে...
দোহাররা সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ধরত-- আমার ছেলে ফিরিয়ে দে।
থৈ থৈ মানুষ ভক্তের সঙ্গে ভগবানের সঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে আবেদন জানাচ্ছে--আমার ছেলে ফিরিয়ে দে।
এখনো এই বিদেশ বিভূঁইয়ে যখন একা থাকি--তখনো কখনো কানের মধ্যে শুনতে পাই অই গানটি। কবি তখন ধরেছেন আরেকটি বিচ্ছেদি গান--আমার পোষা পাখি উড়ে যাবে একদিন ভাবি নাইতো মনে।
মনে হয় এক ছুট লাগাই। এই ছাতামাতার বিদেশের নিকুচি করি। দেশে ফিরে যাই। হায় গান। যাও গান।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
দাদা, রাইরসরাজ কবি 'হরিলীলামৃত' রচনা করেছেন বহু বছর আগে? এরকম ভুল তথ্য না দিলেও বিজয় সরকারের গানগুলি উপভোগ করতে একটুও অসুবিধা হতো না। হলিলীলামৃত গ্রন্থের রচয়িতার নাম বদলে দিলেন? বলিহারি, দাদা, বলিহারি!!!!!
বিজয়ের গানগুলোর মধ্যে আমার সবথেকে পছন্দের গানটা হচ্ছে-
নক্সী কাঁথার মাঠেরে-
সাজুর ব্যাথায় আজও বাজে রূপাই মিয়ার বাশের বাঁশি
তাদের ভেঙ্গে গেছে আশার বাসা
তবু যায়নি ভালো বাসাবাসি।।
খুলনায় বিজয় সরকারের অনেক শিষ্য আছেন। তাদের মধ্যে একজন জাফর ভাই। মাঝে মাঝেই তার গুরুর গান শোনাতেন। বিজয়ের নিজের কণ্ঠে গাওয়া ১০টা গানের স্পুল ক্যাসেট শুনেছিলাম একবার অনেক বছর আগে আমাদের পাড়ার তবলার দোকানদারের কাছে। অসাধারণ দরদী কণ্ঠ। অনেক খুজেঁও পরে আর ওই ক্যাসেট বা কোনও এলপি পাইনি। শুনেছি খুলনা রেডিওতে তার কিছু গানের রেকর্ড আছে।
পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী গানটার ব্যাকগ্রাউন্ড এখানে লিখলে ভালো হতো।
রাতঃস্মরণীয়
আরও একটা চমৎকার গানের উল্লেখ এখানে নেই। কি সাপে দংশিলো-
[i]আগে যদি জানতাম গো আমি
বিষের এতো তাপ
ঘপ বান্ধিতাম হাওয়াই দ্বীপে
যেই দেশে নাই সাপ।।
অসাধানণ বাণী এবং কাব্যিকতা।
রাতঃস্মরণীয়
http://www.sachalayatan.com/porimanob/36120