কলএকাতা:
এখন আশিস নন্দী মহাশয় কি বলবেন? সত্যিই কি বাংলা দুর্নীতিমুক্ত দুর্নীতিমুক্ত? যখন বুদ্ধদেব ও মমতা ব্যানার্জি শাসক শ্রেণীর যুযধান পক্ষ বিপক্ষ দুপক্ষের নেতার সততা নিয়ে এত প্রশ্ন উঠছে?যখন মারমুখী মমতার 'থাপ্পড়' দাওয়াই বাতলে দিচ্ছে মীডিয়া? দধীচি থেকে পদচ্যুত মহাশ্বেতা দেবী?মুখ্যমন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলার পর এবার তাঁকে সরাসরি আক্রমণের পথে হাঁটলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর প্রশ্ন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সিপিএম আমলে তার ফুলেফেঁপে ওঠার কাহিনি কী? পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সিপিএমও৷ পারলে আদালতে যাক, বললেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী?
পলাশ বিশ্বাস
আরাবুলকে চাই, মমতার সামনেই স্লোগান ভাঙড়ে
না থেকেও তিনি রইলেন৷ সশরীরে না হলেও সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাঙড় সফর জুড়ে রইলেন আরাবুল ইসলাম৷ পোস্টার থেকে নাম মুছে ফেলে জেল হাজতে থাকা আরাবুলের থেকে 'মুখ্যমন্ত্রী' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারল না তৃণমূল নেতৃত্ব৷ মমতার সামনেই আওয়াজ উঠল আরাবুলকে চাই৷
বামনঘাটাকাণ্ডের পর তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমে আরাবুলকে 'উদ্যমী'-'তাজা' আখ্যা দিলেও শেষপর্যন্ত চরম অস্বস্তির মুখে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়৷ রাতারাতি দলের সম্পদ পরিণত হয় দলের বোঝায়৷ ২২ জানুয়ারি ফেয়ার প্রাইস শপের উদ্বোধনে এসএসকেএম-এ গেলেও সেখানেই ভর্তি আরাবুলকে কিন্তু দেখতে যাননি মমতা৷ দলীয় নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরির এই ভূমিকায় আরাবুলও বেশ ক্ষুব্ধ বলেই রাজনৈতিক মহলে খবর৷ কেন মমতা তাঁকে একবারও দেখতে আসেননি, প্রশ্ন করা হলে আরাবুলের সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল, সেটা দিদিকেই জিজ্ঞাসা করুন!
আর এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার ভাঙড়ের একচ্ছত্র অধিপতি বলে পরিচিত আরাবুলের ডেরায় মমতার সভা হয়৷ সরকারি অনুষ্ঠান হলেও রাজনৈতিক প্রস্তুতির কোনও খামতি ছিল না৷ আর সেই প্রস্তুতিতেই স্পষ্ট ধরা পড়ল আরাবুলকে নিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি৷ মমতাকে স্বাগত জানিয়ে ভাঙড়ে ঢোকার পথে তৃণমূলের তরফে একাধিক পোস্টার দেওয়া হয়৷ সেই পোস্টারে একাধিক তৃণমূল নেতার নাম, সঙ্গে আরাবুলও৷ কিন্তু তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হল, বোরালিঘাটের কাছ থেকে চণ্ডীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারে আরাবুলের নাম থাকলেও দেখা গেল কোথাও নামের অংশটি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, আবার কোথাও রং দিয়ে লুকোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে৷
সূত্রের খবর, শনিবার পোস্টারগুলি লাগানো হয়৷ কিন্তু রবিবার বিকেল থেকেই শুরু হয় আরাবুলের নাম লুকোনোর উদ্যোগ৷ স্বভাবতই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়, তাহলে কি জেলে থাকা আরাবুলের থেকে মমতার দূরত্ব তৈরি করতেই তৃণমূলের এই বিলম্বিত চেষ্টা? কিন্তু সেই চেষ্টাতেও জল ঢেলে দিল চণ্ডীপুরের সভা শেষের পর আরাবুল-অনুগামীদের স্লোগান৷ মমতা বক্তৃতা শেষ করে নামার সময়ই আওয়াজ উঠল আরাবুলকে ফেরাতে হবে৷
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তৃণমূলের একাংশ আরাবুলের থেকে মমতার দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করলেও তাঁকে ছাড়া যে ভাঙড়ে তৃণমূল হয় না, সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন আরাবুল-অনুগামীরা৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33446-2013-02-11-11-09-55
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পর এবার মমতার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি৷ এবিপি আনন্দে সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে মমতার সততা নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ঘিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে৷ পাল্টা আসরে নামে তৃণমূলও৷ কিন্তু, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পর এবার মমতার সততা নিয়ে ফের প্রশ্ন উস্কে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও৷ সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সম্মেলন থেকে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী কটাক্ষ করেন, কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে তো ছবির তলায় সততার প্রতীক লিখে রাখতে হয় না৷বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র সহ বিরোধী সিপিএমের নেতারা চড়া সুরে মমতার সততা নিয়ে যে ভাষায় কটাক্ষ করছেন, কার্যত এদিন তারই প্রতিধ্বনি করেছন কংগ্রেসের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, মু্খ্যমন্ত্রীর ছবির নিচে লেখা থাকে, সততার প্রতীক! কিন্তু কেউ সত্যিই সত হলে কি লিখে দিতে হয়?
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামবাংলার সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট ঝুলিতে ভরা নিশ্চিত করতে তাদের জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে আগেই। সংখ্যালঘু সম্মেলনে মমতাকে একহাত নিয়ে তাঁর সংখ্যালঘু উন্নয়নের ভাবনাকেও নস্যাত করলেন কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা। দীপা দাশমুন্সী তো বটেই, শাকিল আহমেদের মতো দিল্লির নেতাও মমতার সমালোচনা করে হুঁশিয়ারি দেন, রাজ্যের মানুষ সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসন খতম করেছন। প্রয়োজনে তাঁরা আবার রাজ্যে পরিবর্তন আনবেন।সংখ্যালঘু উন্নয়নে কেন্দ্র টাকা পাঠালেও তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
ত্বহা সিদ্দিকির মতো সংখ্যালঘুদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে তোপ দেগে বলেছেন, মমতা সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কিছু করেছন বলে ঢাক পেটালেও আসলে কিছুই হয়নি কংগ্রেসের আজকের বক্তব্যে সেই অভিযোগে বাড়তি মাত্রা যোগ হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বইমেলা থেকে পানাগড়৷ মেজাজ হারিয়ে প্রথমে পুলিশ তারপর চিত্র সাংবাদিককে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক নিয়েও বিতর্কের ঝড় বিভিন্ন মহলে৷ সে প্রসঙ্গেও সরকারকে বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য এপ্রসঙ্গে মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছেন৷ তাঁর সাফাই, সংবাদমাধ্যম কুত্সা করছে৷ মেজাজ হারানো স্বাভাবিক৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট৷ তার আগে ইতিমধ্যেই সততা ইস্যুকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে সিপিএম৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কংগ্রেসও সেই হাতিয়ারে ভর করতে চাইছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷
দধীচি থেকে পদচ্যুত মহাশ্বেতা দেবী
মানবাধিকার সংগঠন দধীচি চেয়ারপার্সনের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল প্রবীণ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীকে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটভূমিকায় প্রবীণ সাহিত্যিকের দ্বৈত ভূমিকার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। জানানো হয়েছে দধীচি সংগঠনের তরফে। পরিবর্তন চাই স্লোগান তুলে তৃণমূলের সমর্থনে পথে নেমেছিলেন। হাজির ছিলেন দু হাজার এগারোর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেও। কিন্তু, তারপর বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ বইমেলাতেও শোনা গেছিল অসন্তোষের সুর। শনিবার মাটি উত্সবে হঠাত সুর বদল। পানাগড়ে একমঞ্চে মমতা -মহাশ্বেতা দেবী। প্রবীন সাহিত্যিকের গলায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা। প্রবীণ সাহিত্যিকের আচমকা এই অবস্থান বদলেই ক্ষুদ্ধ মানবাধিকার সংগঠন দধীচি। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটির চেয়ারপার্সনের দায়িত্বে ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। রবিবার প্রবীণ সাহিত্যিককে পদ থেকে সরানোর কথা জানিয়ে দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল রায় ।
কবি জয়দেব বসুকে নিয়ে তুণীরের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পত্রিকাটি উদ্বোধন করে তিনি বলেন, "রাজনৈতিক বিশ্বাস দৃঢ় থাকলেই ভাল কবিতা লেখা যায় না। কবিতা লেখার জন্য বিশ্বাসের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় আলাদা দক্ষতারও।"
সিপিআইএমের সদর দফতর মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে সোমবার প্রকাশিত হল এই পত্রিকাটি।
অনুষ্ঠানে পত্রিকাটি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর হাতে তুলে দেন তুণীর সংগঠনটির সভাপতি, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা চন্দন সেন, বাদশা মৈত্র, নাট্যকার চন্দন সেন, পত্রিকার এই বিশেষ সংখ্যার সম্পাদক অসীম চট্টরাজ প্রমুখ।
তুণীর আত্মপ্রকাশের সময় থেকেই পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কবি জয়দেব বসু।
কলকাতা বইমেলায় মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি আনতে সামান্য দেরি হওয়ায় কর্তব্যরত পুলিসকর্মীকে ধরে চাবকানো উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবার মাটি উত্সবে। এবার মুখ্যমন্ত্রীর রোষের শিকার সাংবাদিকরা।
মাটি উত্সব পরিদর্শনের সময় চিত্রগ্রাহকদের আটকানোর চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা। ওইসময় চিত্রগ্রাহকদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। এক চিত্রগ্রাহক পড়ে যান। এতেই ধৈর্য হারান মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই তিনি চিত্কার করে থাপ্পড় মারার হুমকি দেন। শুধু তাই নয়। রেগেমেগে মেলা ছেড়ে বেরিয়েও যান মুখ্যমন্ত্রী। কিছুক্ষণ পর অবশ্য ফিরে আসেন মেলা পরিদর্শনে।
http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/mamata-takes-on-journalist_11313.html
সে দিন কী বলেন মুখ্যমন্ত্রী, দেখতে ক্লিক করুন এখানে
মুখ্যমন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলার পর এবার তাঁকে সরাসরি আক্রমণের পথে হাঁটলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর প্রশ্ন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সিপিএম আমলে তার ফুলেফেঁপে ওঠার কাহিনি কী? পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সিপিএমও৷ পারলে আদালতে যাক, বললেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী৷
সম্প্রতি এবিপি আনন্দে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে প্রথমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷
এরপরই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়৷ বুদ্ধকে পাল্টা আক্রমণ করেন ফিরহাদ হাকিম৷ আক্রমণের সেই সুরই সোমবার আরও চড়ালেন পার্থ৷ সততা নিয়েই সরাসরি নিশানা করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে৷ তাঁর অভিযোগ, বুদ্ধদেববাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর কন্যা যে এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত তা ফুলেফেঁপে ওঠে।৷ এর পিছনে কাদের হাত রয়েছে তা জানাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন পার্থবাবু৷
দলের পলিটব্যুরো সদস্যকে আক্রমণ করায় পাল্টা মুখ খুলেছে সিপিএম৷ পার্থর উদ্দেশে কার্যত পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সুজন চক্রবর্তী বলেন, পারলে আদালতে যাক তৃণমূল৷ এই প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, বুদ্ধদেবের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিলেও এখনও তা করছেন না পার্থবাবুরা৷
মমতার সততা নিয়ে বুদ্ধদেব প্রশ্ন তোলার পরই রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে৷ পাল্টা তোপ দাগছে তৃণমূল৷ এই আবহে, পার্থর এ দিনের মন্তব্যে পারদ আরও চড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33454-2013-02-11-13-59-14
মারমুখী মমতার 'থাপ্পড়' দাওয়াই
'চাবকানো'র পর থাপ্পড়ের হুমকি৷ কলকাতা বইমেলার পর পানাগড়ের মাটি উত্সব৷ নিরাপত্তারক্ষীর পর 'লক্ষ্য' প্রচারমাধ্যম৷ 'মারকুটে' বিতর্ক যেন আর পিছু ছাড়ছে না মুখ্যমন্ত্রীর!
ব্যবধান মাত্র তিন দিনের৷ মেজাজ কিন্ত্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুধবারই বইমেলার দোরগোড়ায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকে 'চাবকানো উচিত' বলে বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন৷ সমালোচনা থিতিয়ে যাওয়ার সময়ই দিলেন না৷ বরং, আচমকা মেজাজ হারিয়ে নিজেই ইন্ধন জোগালেন বিতর্কে৷ মাটি উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিত্রসাংবাদিকদের উদ্দেশে 'এক থাপ্পড় দেব' বলে বসলেন মমতা৷ স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের বার বার এমন মন্তব্য ও ব্যবহারে সমালোচনার ঝড় সর্বস্তরে৷ বিরোধী বামফ্রন্ট থেকে শুরু করে কংগ্রেস কিংবা বিজেপি-- সকলেই কড়া সমালোচনায় বিঁধছেন মমতাকে৷ একদিন পরে ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর কেউ স্তম্ভিত, কেউ বা মুখ্যমন্ত্রীকে 'মুর্খমন্ত্রী' আখ্যা দিয়েছেন৷ আর ডাক্তাররা তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য৷
পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে কখনও কোনও মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ বা সাংবাদিককে এ ভাবে প্রকাশ্যে 'মারধর' করার হুমকি কখনও দিয়েছেন কি না সন্দেহ৷ বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য একবার এক পুলিশ অফিসারকে চড় মেরে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর লাগাতার 'মারকুটে' মন্তব্যে তাঁরই ভাবমূর্তি যথেষ্ট কালিমালিন্ত হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
কী হয়েছিল বুধবার? মাটি উত্সবের উদ্বোধনী মঞ্চে ওঠার আগে কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ খাদ্য দপ্তরের স্টলে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার পাশাপাশি উনুন জ্বালিয়ে পিঠে তৈরি হচ্ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী মন দিয়ে দুটোই দেখছিলেন৷ পুরো দৃশ্যটি ফ্রেমে ধরে রাখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় চিত্রসাংবাদিকদের মধ্যে৷ মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে নিতে যান নিরাপত্তারক্ষীরা৷ সে সময় উনুনের কাছে ধাক্কাধাক্কির জেরে পড়ে যান এক আলোকচিত্রী৷ তখনই চিত্রসাংবাদিকদের 'অসভ্যগুলো' আখ্যা দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে মমতা বলে বসেন, 'এক থাপ্পড় দেব৷ দেখছেন না, এখানে আগুনে রান্না হচ্ছে!' এর পরই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী স্টল ছেড়ে বেরিয়ে উঠে পড়েন উদ্বোধনী মঞ্চে৷' ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী৷ তিনি সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন৷ এদিন অবশ্য এক অনুষ্ঠানে নাম না-করে সেই মহাশ্বেতাই মুখ্যমন্ত্রীকে বাক্সংযমের পরামর্শ দিয়েছেন৷
রবিবার এই ঘটনার কথা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ উগরে দেয় রাজনৈতিক মহল৷ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রায় সব দলের নেতাই৷ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের মতে, মুখ্যমন্ত্রী ক্লান্ত বলেই বার বার তাঁর ধৈর্যচ্যুতি হচ্ছে৷ তাঁর বিশ্রাম দরকার৷ তিনি বলেন, 'এমন মন্তব্য স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিচায়ক৷ মুখ্যমন্ত্রী অসহিষ্ণু, ক্ষমতা জাহির করতে ভালোবাসেন৷' মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহার যে সহিষ্ণুতার অভাবই প্রমাণ করে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও৷ তাঁর বক্তব্য, 'কাঁহাতক আর এ সব সহ্য করা যায়! মুখ্যমন্ত্রীর উচিত সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা৷ এখানে তো উল্টোটাই হচ্ছে৷' বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার কটাক্ষ, 'এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নয়, মুর্খমন্ত্রীর শাসন চলছে৷' সম্প্রতি রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ভাষার ব্যবহার নিয়ে সমালোচনায় মুখর আমজনতা৷ বিপক্ষ শিবিরকে আক্রমণ করতে গিয়ে শাসক-বিরোধী দু' তরফের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাই মুখে লাগাম টানতে ব্যর্থ৷ তৃণমূলের পাশাপাশি মুখ খারাপ করা মন্তব্যে সমানে পাল্লা দিয়েছেন বামফ্রন্টের নেতারাও৷ বেফাঁস মন্তব্যের জেরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনাও দেখেছে রাজ্যবাসী৷ এদিন সেই প্রসঙ্গেই শহিদ মিনারে সিপিএমের কলকাতা জেলা সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, 'আমাদের অতি-উত্সাহী কমরেডরা ভাষার ক্ষেত্রে বিচ্যুতি করেন৷ তাঁরা এমন কথা বলেন, এমন ভাষা ব্যবহার করেন, যা ঠিক নয়৷ তাঁরা ব্যক্তিগত আক্রমণও করেন৷ এমন ভাষা ব্যবহার করবেন না৷'
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আত্মসমালোচনার পথে হাঁটলেও, শাসকদলের কোনও বড় নেতা এ যাবত্ নিজেদের সমালোচনা করার সাহস দেখিয়ে উঠতে পারেননি৷ এরই মধ্যে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য যে ভাষা-বিতর্ক উস্কে দেবে, সেটাই স্বাভাবিক৷
সিপিএমের উদ্দেশেও এদিন কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি৷ বললেন,শকুনের ভাগাড়ে বসে আছে৷ কবে মমতা মরবে৷ মাংস খাবে৷
সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে এদিন ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রামায়ণ-মহাভারত শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু, সরকারের কাজের কাহিনি শেষ হবে না৷ এত কাজ তাঁর সরকার করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
পেট্রল-ডিজেল থেকে সারের দাম ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত ইতিমধ্যে চরমে৷ সেই প্রেক্ষাপটেই আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি কর্মসূচিতে এক মঞ্চে হাজির থাকবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
কলকাতা: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পর এবার মমতার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি৷ এবিপি আনন্দে সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে মমতার সততা নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ঘিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে৷ পাল্টা আসরে নামে তৃণমূলও৷ কিন্তু, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পর এবার মমতার সততা নিয়ে ফের প্রশ্ন উস্কে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও৷ সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সম্মেলন থেকে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী কটাক্ষ করেন, কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে তো ছবির তলায় সততার প্রতীক লিখে রাখতে হয় না৷বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র সহ বিরোধী সিপিএমের নেতারা চড়া সুরে মমতার সততা নিয়ে যে ভাষায় কটাক্ষ করছেন, কার্যত এদিন তারই প্রতিধ্বনি করেছন কংগ্রেসের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, মু্খ্যমন্ত্রীর ছবির নিচে লেখা থাকে, সততার প্রতীক! কিন্তু কেউ সত্যিই সত হলে কি লিখে দিতে হয়?
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামবাংলার সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট ঝুলিতে ভরা নিশ্চিত করতে তাদের জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে আগেই। সংখ্যালঘু সম্মেলনে মমতাকে একহাত নিয়ে তাঁর সংখ্যালঘু উন্নয়নের ভাবনাকেও নস্যাত করলেন কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা। দীপা দাশমুন্সী তো বটেই, শাকিল আহমেদের মতো দিল্লির নেতাও মমতার সমালোচনা করে হুঁশিয়ারি দেন, রাজ্যের মানুষ সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসন খতম করেছন। প্রয়োজনে তাঁরা আবার রাজ্যে পরিবর্তন আনবেন।সংখ্যালঘু উন্নয়নে কেন্দ্র টাকা পাঠালেও তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
ত্বহা সিদ্দিকির মতো সংখ্যালঘুদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে তোপ দেগে বলেছেন, মমতা সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কিছু করেছন বলে ঢাক পেটালেও আসলে কিছুই হয়নি কংগ্রেসের আজকের বক্তব্যে সেই অভিযোগে বাড়তি মাত্রা যোগ হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বইমেলা থেকে পানাগড়৷ মেজাজ হারিয়ে প্রথমে পুলিশ তারপর চিত্র সাংবাদিককে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক নিয়েও বিতর্কের ঝড় বিভিন্ন মহলে৷ সে প্রসঙ্গেও সরকারকে বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য এপ্রসঙ্গে মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছেন৷ তাঁর সাফাই, সংবাদমাধ্যম কুত্সা করছে৷ মেজাজ হারানো স্বাভাবিক৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট৷ তার আগে ইতিমধ্যেই সততা ইস্যুকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে সিপিএম৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কংগ্রেসও সেই হাতিয়ারে ভর করতে চাইছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি সাচার কমিটির সুপারিশের ৯৯ শতাংশ কাজই হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। কিন্তু, বাস্তবটা কী? কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রীই বলছেন, সংখ্যালঘুদের অবস্থার কোনও উন্নতিই হয়নি এরাজ্যে। ইমামভাতা নিয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর অভিয়োগ, সংখ্যালঘু মহিলাদের জন্য কেন্দ্রের পাঠানো টাকায় ভাগ বসাচ্ছে রাজ্য।
কে রহমান খানের বক্তব্য, সংখ্যালঘুরা যে আঁধারে ছিলেন, থেকে গিয়েছেন সেই আঁধারেই। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে সংখ্যালঘুদের অবস্থার কোনও পরিবর্তনই হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের টাকাও সংখ্যালঘুদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে ইমাম ভাতা নিয়েও রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী।
ইতিমধ্যেই মুসলিম ধর্মীয় নেতারা বলছেন, ৯৯ শতাংশের হিসাব দিন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, মুসলিম মহিলাদের সাইকেলের টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। সেখানেও ভাগ বসাচ্ছে রাজ্য।
হাইকোর্টে ইমামভাতা সংক্রান্ত মামলায় এখনও হলফনামা পেশ করেনি রাজ্য সরকার। আর এতেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/mamata-vs-minority-minister_11334.html
এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পকে আক্রমণ করল কংগ্রেস। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে কংগ্রেস নেতানেত্রীরা বলেছেন, রাজ্যবাসী একবার পরিবর্তন করে সিপিএম-কে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে। প্রয়োজনে ফের পরিবর্তন আনবেন মানুষ।
দীপা দাশমুন্সিরা তো বটেই, শাকিল আহমেদের মতো নেতাও সোমবার মমতার সমালোচনায় সরব হন। এদিন সংখ্যালঘু উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর গৃহীত সব পদক্ষেপকেই কার্যত নস্যাত্ করেছে কংগ্রেস। শাকিল আহমেদদের অভিযোগ, সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তার সঠিক ব্যবহার করছে না। ঠিক যে ভাবে সিপিএম হালফিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, সে ভাবেই কংগ্রেস নেতাদের গলায় এদিন শোনা গিয়েছে, 'মুখ্যমন্ত্রীর ছবির নীচে লেখা থাকে সততার প্রতীক। কেউ সত্যিই সত্ হলে তাঁর ছবির নীচে এ কথা লিখতে হয়?'
এর পরই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় যান। একটি অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, সাচার কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ৯৯ শতাংশ কাজই হয়ে গিয়েছে।
ত্বহা সিদ্দিকির মতো সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কেউ কেউ ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কিছু হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেও, বিশেষ কাজ হয়নি। কংগ্রেসের নয়া কৌশলে এই অভিযোগ আরও জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ধমানের লাউদোহা থানার প্রতাপপুর পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত ধবনী, কাটাবেড়িয়া, প্রতাপপুর, নাবনাপাড়া, বড়গড়িয়া, ঘাটগড়িয়া, পারুলিয়া ও নাচনের প্রায় শ'দুয়েক মানুষ তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে ক্ষতিপূরণ, চাকরি-সহ নানা দাবিতে এসারের প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার রাস্তা কয়েক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে৷ ফলে সংস্থার ১০-১২ টি কূপ থেকে মিথেন উত্তোলনের কাজ ব্যাহত হয়৷ আটকে যায় সংস্থার বেশ কয়েকটি গাড়ি৷
দুপুর দুটো নাগাদ লাউদোহা থানার ওসি সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় সোমবার থানায় দু'পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসার প্রতিশ্রীতি দেওয়ার পর অবরোধ ওঠে৷ স্থানীয় তৃণমূল নেতা শান্তনু চট্টোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'ওসি বলেছেন সোমবার দাবিগুলি লিখে নিয়ে যেতে৷ যদি সমস্ত দাবিদাওয়া সংস্থা সোমবার মেনে না নেয়, তবে সেদিন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হবে প্রকল্পের কাজ৷'
সংস্থার এক আধিকারিক জানান, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে৷ তবে গ্রামবাসীদের জমির ক্ষতিপূরণের দাবি ওই আধিকারিক মানতে চাননি৷ তিনি বলেন, 'ওই এলাকায় যাদের কাছ থেকে আমরা জমি নিয়েছি, তারা সবাই টাকা পেয়ে গিয়েছেন৷'
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এলাকার মানুষদের প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত না করে এসার এনার্জি বহিরাগতদের কাজে নিয়েছে৷ ভারী গাড়ি চলাচলের জন্য গ্রামের রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে৷ এছাড়াও মিথেন উত্তোলনের জন্য জলস্তর নেমে যাওয়ায় চাষের কাজ ব্যাহত হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে শান্তনুবাবু বলেন, সিপিএম জবরদস্তি জমি কেড়ে নিয়ে সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছিল৷ সংস্থার কাছে বার বার আবেদন করেও কোনও সাড়া না পাওয়ায় গ্রামবাসীরা আন্দোলনে নেমেছে৷ অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার জানান, 'আমরা চেয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গে শিল্প হোক৷ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা সব কিছু করেছিলাম৷ তৃণমূলের উদ্দেশ্য সেগুলি ধ্বংস করা৷'
পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনের স্লোগান কী থমকে গিয়েছে ত্রিপুরার ভোটে? অন্তত এমনটাই মনে করছে ক্ষমতায় আসা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাম শিবির। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ত্রিপুরায় ভরাডুবির ঝুঁকি নিতে চায়নি তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের স্লোগানে দিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও সরকারের কাজে মানুষ অতিষ্ট। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাই আর ত্রিপুরায় ভোটে লড়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি তৃণমূল কংগ্রেস।
অন্যদিকে, ত্রিপুরায় ভোটপ্রচারে গিয়ে বামেদের হঠানোর ডাক দিলেন কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী। সোনিয়া-মনমোহনের কেউই না যেতে পারায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছিল সেই রাজ্যের কংগ্রেস শিবির। সোমবার একদিনে চার-চারটি জনসভা করে সেই অস্বস্তিই কাটানোর চেষ্টা করলেন সোনিয়াপুত্র। আগামিকালও ত্রিপুরায় দুটি নির্বাচনী সভা করবেন রাহুল গান্ধী।
সোমবার চারটে সভায় সবমিলিয়ে একঘণ্টার মতো বক্তব্য রেখেছেন রাহুল গান্ধী। বক্তৃতা জুড়ে ছিল প্রতিশ্রুতি। ডাক দিলেন ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তনেরও। রাহুল গান্ধীকে পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছসিত কংগ্রেস প্রার্থীরা।
১৪ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। বারবারই উঠে আসছে পশ্চিমবঙ্গের গত নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা। আলোচনা চলছে সরাসরি প্রার্থী না দিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের গাঁটছড়ার প্রসঙ্গও। তবে এসবকে আদৌ আমল দিতে নারাজ মানিক সরকার।
ত্রিপুরার জয়ের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরও বড় লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন সিপিআইএমের পলিটবুরো সদস্য।
দাসের বাঁধ কঙ্কালকাণ্ড মামলার বৈধতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। তাঁর আবেদন গ্রহণ করেছে আদালত। আগামিকাল এই মামলার শুনানি। এই ঘটনার কেস ডায়েরি আনার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
প্রসঙ্গত, কঙ্কালকাণ্ডের জেরে ছ মাসের বেশি জেলে থাকতে হয় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে।
দাসেরবাঁধ কঙ্কালকাণ্ড মামলার বৈধতা নিয়ে এবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। আজ তাঁর আবেদন গ্রহণ করেছে আদালত। আগামিকাল এই মামলার শুনানি। এই ঘটনার কেস ডায়েরি আনার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
জুন ২০১১-- পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিআইএম নেতা সুশান্ত ঘোষের বেনাচাপড়ার বাড়ির কাছ থেকে কঙ্কাল উদ্ধারকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। রুজু করা হয় দাসের বাঁধ কঙ্কালকাণ্ড মামলা।
২০১১ সালের অগাস্ট মাস।
ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে। বিতর্ক তৈরি হয় সিপিআইএমের প্রাক্তন মন্ত্রীর গ্রেফতারের ঘটনায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই মামলা কিনা তানিয়েও শুরু হয় জলঘোলা। এগারোই অগাস্ট সুশান্ত ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভবানী ভবনে সিআইডির হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আসা হয়। সিআইডির তিরিশজন তদন্তকারী অফিসার পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে জেরা করে সুশান্ত ঘোষকে। এরপর তাঁর অন্তবর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। দীর্ঘ প্রায় ছমাস পরে দুহাজার বারোর ফেব্রুয়ারিতে আলিপুর সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পান সুশান্ত ঘোষ। এবার দাসের বাঁধ কঙ্কালকাণ্ড মামলার বৈধতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে পাল্টা মামলা দায়ের করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। মামলার প্রক্রিয়া থেকে তদন্ত, এমনকী তাঁকে গ্রেফতার, পুরোটাই অবৈধ বলে অভিযোগ করেছেন সুশান্ত ঘোষ। সোমবার তাঁর আবেদন গ্রহণ করেছে আদালত। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে কেস ডায়েরি আনার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ফের শ্লীলতাহানি কলকাতায়। একটি নয়। রবিবার সন্ধেয় শহরজুড়ে পরপর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। কালীঘাট, চিত্পুর এবং সিঁথিতে শ্লীলতাহানির শিকার হন তিন জন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরজুড়ে পরপর শ্লীলতাহানির ঘটনায় বড়সর প্রশ্নের মুখে নারী নিরাপত্তা।
দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট রোড। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব। রবিবার রাত ৮টা নাগাদ সেখানে স্বামীর সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন এক তরুণী। সে সময়ই তিনজন যুবক তাঁর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী অমল কুণ্ডু। তাঁকেও মারধর করে ওই তিন যুবক। ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস।
পরের ঘটনাস্থল উত্তর কলকাতার চিত্পুরের গোপাল মুখার্জি রোড। রবিবার সন্ধ্যায় বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলার শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় মহম্মদ রসিদ ওরফে বীরু নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিস।
রবিবার রাতে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে উত্তর শহরতলির সিঁথির রায়পাড়া রোডে। ঘটনায় সোমনাথ দাস ওরফে রজত নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিস।
গত ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শ্যামপুকুরে এক মহিলা সাংবাদিকের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে কলকাতা পুলিসের প্রাক্তন এক কর্তার মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। ওই দিনই গড়ফায় একটি আবাসনের পাশে এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। রিজেন্ট পার্ক এলাকায় ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে এক অটোচালকের বিরুদ্ধে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি কাশীপুর থানা এলাকায় বাসে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। গত শনিবার বরানগরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় কিশোরীর দাদাকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। শহরে গত কয়েকদিনে পরের পর শ্লীলতাহানির ঘটনায় প্রশ্নের মুখে নারী নিরাপত্তা।
বেআইনি মদের ঠেকের প্রতিবাদ করায় এক চিকিত্সককে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শ্বাসরোধ করে খুন করার পর দুষ্কৃতীরা মৃতদেহটি পুড়িয়ে ফেলায় চেষ্টা করে। নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির মোমক মুন্সির গোডাউন এলাকায়। দোষীদের শাস্তির দাবিতে দীর্ঘক্ষণ মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ।
অন্যান্য দিনের মতো শনিবারও বাড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে মোমকপুরের চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন চিকিত্সক সঞ্জয় চক্রবর্তী। রবিবার সকালে রাজহাটি মারওখানা সড়ক যোজনার কাছে রাস্তার ধারে তাঁর অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। দিন কয়েক আগেই এলাকার বেআইনি মদের ঠেকের বাড়বাড়ন্তের প্রতিবাদ করেছিলেন সঞ্জয় চক্রবর্তী। তার জেরেই দুষ্কৃতীরা চিকিত্সককে খুন করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বেআইনি মদের ঠেকই নয়, এলাকায় বেশকিছুদিন ধরেই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়লেও, পুলিস কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে দীর্ঘক্ষণ
তোলা-রাজে অমিল রাস্তার ঠিকাদার | ||||||||||||||||||||||||
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা | ||||||||||||||||||||||||
বিস্তর রাস্তা তৈরি হবে। পাহাড়প্রমাণ টাকাও মজুত। অথচ কাজ করার লোক মিলছে না। তোলাবাজির ভয়ে বরাত নিতে চাইছেন না ঠিকাদারেরা। তাঁরা বলছেন, লাভের গুড় যদি তোলাবাজই খেয়ে যায়, কাজ করব কেন? সুতরাং গ্রামে-গঞ্জে সড়ক নির্মাণের বহু প্রকল্প কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। জেলায় জেলায় আরও অন্তত ছ'হাজার কিলোমিটার বাড়তি রাস্তা তৈরির কথা। এ জন্য দিল্লি থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা এসেছে। পঞ্চায়েত দফতর কাজের বরাত দিতে ই-টেন্ডার ডেকেছিল। সাড়া মিলেছে নামমাত্র। ঠিকাদারদের বড় অংশের অভিযোগ: বহুমুখী তোলাবাজির বাড়বাড়ন্তে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠেছে, তাই রাজ্যে কাজ করতে আর তাঁরা উৎসাহ পাচ্ছেন না। এবং এ প্রসঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে আঙুল উঠেছে শাসকদলের 'আশ্রয়পুষ্ট' তোলাবাজদের দিকে। বেশ কিছু ঠিকাদারের অভিজ্ঞতায় এরই প্রতিফলন। যেমন পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথির নন্দীআরিয়া-কচুরি, কিংবা পটাশপুরের সিংদা মোড়-রামচন্দ্রপুর সড়ক প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনায় পাকা রাস্তা দু'টো তৈরির বরাত পেয়েছিল দুই ঠিকাদার সংস্থা। তাদের অভিযোগ, প্রথম দিনই এক দল লোক এসে হুমকি দিয়ে বলে, রফা ছাড়া কাজ হবে না। ঠিকাদারেরা জেলা পরিষদে নালিশ জানিয়েও ফল পায়নি। বেশ কিছু দিন পরে জেলা নেতাদের হস্তক্ষেপে কাজ চালু হয় বটে, তবে সে জন্য 'বোঝাপড়া' করে নিতে হয়েছে। | ||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||
নদিয়ায় এক ঠিকাদারেরও একই অভিজ্ঞতা। মোহনপুর বাজার থেকে আনন্দপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তার বরাত নিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, কাজ শুরু হতেই কয়েক জন এসে মোটা চাঁদার দাবি তোলে। তার বহর শুনে ঠিকাদার সেই যে পাততাড়ি গুটিয়েছেন, আর ফেরেননি। রাস্তাও হয়নি। বিবিধ অভিযোগের মধ্যে এ দু'টো নমুনা মাত্র। প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনার কাজে যুক্ত রাজ্য ঠিকাদার সংগঠনের কর্তা ক্ষেমেন্দ্রকুমার মজুমদারের কথায়, "কাজ করতে নামলেই দলে দলে এসে চাঁদা চাইছে! অনেকের আবার দাবি, পুকুরপাড় বাঁধিয়ে দিতে হবে, এমনকী গোয়ালে ইট পাততে হবে! এত আবদার মিটিয়ে হাতে থাকবে কী?" ঠিকাদার সংগঠন-সূত্রের খবর, আগেও নানা কাজে তোলা দিতে হতো। কিন্তু এখন তা মাত্রা ছাড়িয়েছে। এক কোটি টাকার কাজে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত 'খুচরো' চাঁদার দাবি উঠছে। তা-ও এক জনকে নয়, একাধিক জনকে দিতে হচ্ছে। খাস পঞ্চায়েত দফতরের খবর: নানা নামে, নানা রূপে এ হেন তোলাবাজির রমরমায় বিভিন্ন পথ-প্রকল্প থমকে গিয়েছে। যেমন বর্ধমানের কেতুগ্রামে, বাঁকুড়ার বড়জোড়া ও রানিবাঁধে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে, বীরভূমের নানুর ও ইলামবাজারে। একই কারণে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনায় অজস্র রাস্তা তৈরি বন্ধ গিয়েছে। এই সব তিক্ত অভিজ্ঞতার জেরেই এখন পথ-বরাত থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন ঠিকাদারেরা। "এ তো শুধু হিমশৈলের চূড়া! এখন যে কোনও কাজের জন্য একাধিক জায়গায় প্রণামী দেওয়া দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।" আক্ষেপ এক ঠিকাদারের। ওঁদের অনীহার পরিণামে রাজ্যে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের প্রকল্পটাই মাঠে মারা যেতে বসেছে বলে পঞ্চায়েত-কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা। এক কর্তা বলেন, "আমাদের লক্ষ্য ছিল পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তার কাজ শুরু করা। ঠিকাদার না-পাওয়ায় পরিকল্পনা বানচাল হওয়ার জোগাড়।" কী রকম? দফতরের তথ্য: পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি আরও ৬১৪৩ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরির অনুমোদন দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ। সেই খাতে দিল্লি ৩৪৯০ কোটি টাকা পঞ্চায়েত দফতরে পাঠিয়েছে, যা দিয়ে মোট ১৪২৫টি রাস্তা হওয়ার কথা। কিন্তু ই-টেন্ডারে ৮৭৪টি রাস্তার বরাত নিতে একটাও আবেদন জমা পড়েনি! ১০৬টি রাস্তা বানাতে একটি করে সংস্থা দরপত্র ছেড়েছে। ৪৬টি রাস্তায় আগ্রহী সংস্থার সংখ্যা দু'টি করে। অর্থ দফতরের নিয়ম মোতাবেক, ন্যূনতম তিনটি ঠিকাদার সংস্থা আবেদন না-করলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে। সেই মাপকাঠি পেরিয়েছে ৩৭৫টি প্রকল্প। যেগুলো রূপায়িত হলে সাকুল্যে ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে, খরচ হবে ৯০০ কোটি। অর্থাৎ রাস্তা নির্মাণ ও বরাদ্দ খরচ, দু'ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছেও পৌঁছানো যাবে না। | ||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||
বরাত নিতে এই 'অনাগ্রহ'কে সরকার কী ভাবে ব্যাখ্যা করছে? পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গ্রামোন্নয়ন সংস্থার অন্যতম কর্তা সত্যব্রত চক্রবর্তী বলেন, "প্রতি কিলোমিটার কাজের জন্য ৫৭ লক্ষ টাকা খরচ ধরা আছে। তার পরেও ঠিকাদারেরা রাজি হচ্ছেন না! এটা বিস্ময়কর। খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে ওঁদের ডেকে আলোচনা হবে।" কিন্তু ঠিকাদারদের একাংশ যে তোলাবাজির অভিযোগ তুলছেন? এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই বলে সত্যব্রতবাবুর দাবি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য অভিযোগটি সরাসরি নস্যাৎ করার পাশাপাশি এর পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্তেরও গন্ধ পাচ্ছেন। বলছেন, "তোলাবাজির কথা একেবারে ভিত্তিহীন। যা বুঝতে পারছি, এখানে সিপিএম জড়িত। ওরাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামে পাকা রাস্তার কাজ বানচাল করতে চাইছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনা নয়, কোনও কাজেই ঠিকাদার আসছে না।" সঙ্কট মোকাবিলার উপায়ও মন্ত্রী ভেবে রেখেছেন। "সরকারি সংস্থাকে দিয়ে কাজ করাব। দরকারে বেকার ছেলেদের ঠিকাদারি লাইসেন্স দেব। সিপিএমের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।'' মন্তব্য সুব্রতবাবুর। তাঁর অভিযোগ, "ওরা চৌত্রিশ বছরে যত কিলোমিটার রাস্তা করেছে, আমি এক বছরে তার বেশি রাস্তা শুরু করেছি। তাই সিপিএমের সহ্য হচ্ছে না।" সুব্রতবাবুর অভিযোগ মানতে চাননি বাম জমানার পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী বঙ্কিম ঘোষ। নদিয়ায় মোহনপুর বাজারের রাস্তাটি তাঁরই বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বঙ্কিমবাবু বলেন, "তোলাবাজির কারণে আমার এলাকাতেই রাস্তা হয়নি। আরও উদাহরণ দেখাতে পারি। সারা রাজ্যে একই পরিস্থিতি।" http://www.anandabazar.com/11raj1.html |
সেতুর আমি সেতুর তুমি | ||||||
উদ্বোধন-দৌড়ে মমতার পরে যাবেন অধীরও | ||||||
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি | ||||||
সেতু তুমি কার? যিনি আগে উদ্বোধন করবেন, তাঁর! দুর্গাপুর-বাঁকুড়া হাইওয়েতে রেললাইনের উপর নতুন ওভারব্রিজের এখন তেমনটাই দশা। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাটি উৎসবে গিয়ে এর উদ্বোধন করে ফেলেছেন। রেলের মন্ত্রীসান্ত্রী, কাউকেই কিছু জানানো হয়নি। অথচ রাজ্য সরকারের সঙ্গে রেলও ওই সেতু তৈরির জন্য টাকা দিয়েছিল। তাঁদের কেউ টের পাওয়ার আগেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে "ওভারব্রিজ উদ্বোধন হল।" হতবাক রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী এখন বলছেন, এই ভাবে উদ্বোধন হয় না। তিনি ফের সেতুর উদ্বোধন করবেন। এক দিকে বর্ধমান, অন্য দিকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও মেদিনীপুরের একাংশ। তার পরে ওড়িশা-সহ গোটা দক্ষিণ ভারত। দুর্গাপুর স্টেশনের কাছেই এই সেতু তৈরি তাই গোটা রাজ্যের জন্যই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এ দিকে সেতু তৈরির কাজও প্রায় শেষ। তাই ভোটের আগে সেতুর উদ্বোধন করে কৃতিত্ব নিতে চাইছিল কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল সব পক্ষই। দিল্লিতে বসে রেল প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে একপ্রস্ত পরামর্শও সেরে রেখেছিলেন স্থানীয় সিপিএম সাংসদ শেখ সইদুল হক। কিন্তু তাঁদের টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন মমতা। অন্য কেউ কিছু করে ওঠার আগেই তিনি ওই সেতুতে নিজের সিলমোহর বসিয়ে ফেলেছেন। শনিবার মাটি উৎসব উদ্বোধন করতে পানাগড়ে গিয়েছিলেন মমতা। রিমোট কন্ট্রোলে সেখানেই উদ্বোধন করেন সেতুর। স্থানীয় সাংসদ তো দূরের কথা, রেলের অফিসাররাও কিছু টের পাননি। কেন জানানো হল না রেলের কাউকে? পানাগড় থেকে ফিরে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সকৌতুক জবাব, "ওঁরা খবরের কাগজ পড়ে জেনে নেবেন।" মুখ্যমন্ত্রী যে এই ভাবে তাঁদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেবেন, তা ভাবতেও পারেননি অধীর-সইদুলরা। অধীরবাবু বলছেন, "এ তো মহা মুশকিল! খাবার খেতে দেখছি জোর করে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ছে।" আর সইদুল সাহেবের মন্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে মনে হচ্ছে, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল। আর কী বলব!" দু'জনেরই বক্তব্য, ওই প্রকল্প উদ্বোধন করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই মুখ্যমন্ত্রী এমন কাণ্ড করেছেন। | ||||||
| ||||||
কিন্তু যে প্রকল্পে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি রেল মন্ত্রকও টাকা দিয়েছে, উদ্যোগী হয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ-বিধায়করাও, আমন্ত্রণ করা তো দূর, তাঁদের একেবারে না জানিয়েই তার উদ্বোধন করায় প্রশ্ন উঠছে মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যের অভাব নিয়েও। দুর্গাপুর-বাঁকুড়া হাইওয়েতে ওই সেতুর কাজ শুরু হয় বামফ্রন্টের জমানায়, ২০০৭ সালে। ঠিক হয়, লাইনের উপরের অংশের কাজ করবে রেল। দু'দিক থেকে সেতুতে ওঠার রাস্তা তৈরি করবে রাজ্যের পূর্ত দফতর। সেই অনুযায়ী দুই তরফই খরচ বহন করেছে। শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। কিন্তু সেতুর উদ্বোধন যখন হল, তখন রেলমন্ত্রী পবন বনশল ও রেল প্রতিমন্ত্রী দু'জনেই রইলেন অন্ধকারে। কংগ্রেস ও সিপিএম শিবিরের মিলিত অভিযোগ, মমতার এমন অভ্যাস নতুন নয়। রেলমন্ত্রী থাকার সময়ও তিনি রেলের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ-বিধায়কদের ডাকতেন না, তাঁরা সিপিএমের হলে। রেলের বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। তা-ও থাকত না। সর্বত্র একাই স্বমহিমায় বিরাজ করছেন মমতা। রেল ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসার পরেও দীর্ঘ সময় রেল মন্ত্রক ছিল তৃণমূলেরই দখলে। তখনও রেলের সমস্ত প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রীই উদ্বোধন করতেন। কিন্তু এখন যখন রেল মন্ত্রক কংগ্রেসের দখলে, তখন সেই ধারা অব্যাহত। অধীরবাবুর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা রাজ্যের জন্য কিছুই করতে পারছেন না। তাই অন্যের কৃতিত্বে ভাগ বসাতে চাইছেন। তিনি বলেন, "এখনও মুখ্যমন্ত্রী ভুলতে পারছেন না যে তিনি আর রেলমন্ত্রী নন। পশ্চিমবঙ্গে রেল ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। রেলটাও কেন্দ্রের সম্পত্তি। তাই তিনি মাটিকে ঘাঁটি করেছেন।" অধীরের কটাক্ষ মমতার মাটি উৎসবের দিকে। | ||||||
| ||||||
কিন্তু এখন কী করবেন? অধীরের বক্তব্য, "এ ভাবে হয় না কি? দুর্গাপুরে গিয়ে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে হবে তো! সেটা আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।" তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছেন না। সুব্রতবাবুর জবাব, "এক বার উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। এ বার ইচ্ছে হলে কুড়ি বার উদ্বোধন করুন। লোকে দেখবে আর হাসবে।" উদ্বোধন নিয়ে এই কাজিয়ার মধ্যেই লোকে অবশ্য হাসছে, অন্য কারণে। যে রেল গেট দিনে ১৩৪ বার বন্ধ হত, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে অন্যতম প্রধান যোগাযোগকারী ৯ নম্বর রাজ্য সড়কে লেগে থাকত যানজট, মুক্তি মিলেছে তা থেকে। সেতু দিয়ে চলছে গাড়ি। নীচে অবাধে ছুটছে দিল্লিগামী ট্রেন। ফলে উদ্বোধনের দই যে-ই নিক না কেন, মানুষ খুশি সেতুবন্ধনে। http://www.anandabazar.com/11raj2.html
|
No comments:
Post a Comment