Saturday, February 9, 2013

ঘুম ভাঙা চোখে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী হতচকিত হয়েছিল আজমল আমির কাসভের ফাঁসির খবরে। তার পর ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, শনিবার। ঘুম থেকে উঠেই দেশবাসী শুনল আর এক সন্ত্রাসীর ফাঁসির খবর। সংসদ হামলার ঘটনায় মূল চক্রী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হল দিল্লির তিহার জেলে। ঠ

ফাঁসি হল আফজল গুরুর
ঘুম ভাঙা চোখে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী হতচকিত হয়েছিল আজমল আমির কাসভের ফাঁসির খবরে। তার পর ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, শনিবার। ঘুম থেকে উঠেই দেশবাসী শুনল আর এক সন্ত্রাসীর ফাঁসির খবর। সংসদ হামলার ঘটনায় মূল চক্রী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হল দিল্লির তিহার জেলে। ঠিক যে ভাবে কাসভের ফাঁসির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল, সে ভাবেই আফজল গুরুর ক্ষেত্রেও টের পাননি কেউ। সারা দেশ নিরাপত্তার বেড়া জালে বন্দী।কাশ্মীরে টেলিভিজন, মোবাইল . ইন্টারনেট সবই বন্ধ।নজিরবিহীন ভাবে সারা দেশে নিরাপত্তা এডভাইজারি জারি করেছে কেন্দ্র সরকার।আইন ও ন্যায় ব্যবস্থা তাঁর কাজ করেছে, বলাবাহুল্য।একই সঙ্গে গুজরাত গণসংহারের মহানায়কের প্রধানমন্ত্রিত্বে উত্তরণের রাস্তা করপোরেট সহযোগিতায ক্রমশঃ পরিস্কার হচ্ছে। ভারতীয গণতন্ত্র চরম পরীক্ষার মুখে। আর কত দিন কাশ্মীর , মণিপুর ইত্যাদি উপদ্রূত অন্চলকে সৈন্যআইনের মাধ্যমে শাসন করা হবে, কবে বিচার হবে গুজরাত গণসংহারের, বাবরি ধ্বংসের, মালেগাওঁ বম বিস্ফোরণের,ভুপাল গ্যাস ট্রাজেডির, সিখ গণহত্যার, সেই প্রশ্ন কিন্তু অনুত্তরিত থেকেই গেল।

পলাশ বিশ্বাস

 আজমল কসাবের পর এ বার আফজল গুরু। শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ ফাঁসি দেওয়া হল ২০০১-এর সংসদ হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আফজল গুরুকে।


পুরো ঘটনাটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয়। ফাঁসির কথা জানতেন না জেলের ডেপুটি সুপার-ও। দিল্লির তিহাড় জেলের ৩ নম্বর সেলে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়।


এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলের সুপার, একজন চিকিত্সক ও এক ম্যাজিস্ট্রেট। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।


তিহাড় জেলেই তাঁকে কবর দেওয়া হবে হবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।


কোন পথে আফজল গুরুর ফাঁসি
এই সময়: 

১৩ ডিসেম্বর, ২০০১-- সংসদ ভবনে হামলা পাঁচ জঙ্গির। পাঁচ জঙ্গি ছাড়াও নিহত ৯ জন 

১৮ ডিসেম্বর, ২০০২-- দিল্লির আদালত আফজল গুরুকে মৃত্যুদণ্ড দিল 

২৯ অক্টোবর, ২০০৩-- মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখল দিল্লি হাইকোর্ট 

৪ অগস্ট, ২০০৫-- প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টে 

২০ অক্টোবর, ২০০৬-- এই তারিখেই ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আফজল গুরুর স্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। এর পরই স্থগিত হয় ফাঁসি 

১০ ডিসেম্বর, ২০১২-- সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের পর আফজল গুরুর ফাইল খতিয়ে দেখবেন বলে জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে 

২৩ জানুয়ারি, ২০১৩-- আফজল গুরুর ফাঁসির সুপারিশ পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে 

২৬ জানুয়ারি, ২০১৩-- প্রজাতন্ত্র দিবসে সুপারিশে সই করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় 

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩-- সুপারিশ চলে আসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে 

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩-- সই করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে 

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩-- আফজল গুরুর ফাঁসি

শনিবার সকাল আটটায় তিহার জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে আফজল গুরুকে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে সংসদ ভবনে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনার অন্যতম মাথা হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় আফজল গুরুকে। তার প্রায় এক যুগ পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল। ২০০৬ সাল থেকেই রাষ্ট্রপতি ভবনে পড়ে ছিল আফজল গুরুর প্রাণভিক্ষার আবেদন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্বে এসেই তত্‍পর হন সুশীলকুমার শিন্ডে। অন্য দিকে, রাইসিনা হিলসেও প্রণব মুখোপাধ্যায় আসার পর আফজল গুরুর প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে বাড়ে সক্রিয়তা। এদিন সাংবাদিকদের শিন্ডে জানিয়েছেন, গত ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুদণ্ডে সই করে পাঠিয়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। পর দিন, অর্থাত্‍ ৪ ফেব্রুয়ারি সই করেন শিন্ডে। এর পরই তিহার জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় আফজল গুরুকে। 

ফাঁসির পরই জম্মু-কাশ্মীরের একাধিক জায়গায় কার্ফু জারি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, 'আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। এই রাজ্যে আফজল গুরুর বিরুদ্ধে কোনও মামলা ছিল না। তাই আমরা এই ফাঁসির সঙ্গে জড়িত নই। রাজ্যবাসীর কাছে আমার আবেদন, আপনারা এই ফাঁসি নিয়ে উত্তেজিত হবেন না। শান্তি বজায় রাখুন। অনেকেই হয়তো রাজনীতি করতে চাইবেন, কিন্তু সেই প্ররোচনায় পা দেবেন না।' 

একই কথা শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আরকে সিংয়ের কথায়। তিনি বলেছেন, 'এটা শান্তি বজায় রাখার সময়। কাসভ এবং আফজল গুরু দেশকে আক্রমণ করেছিল। সরকার আইনি ও সাংবিধানিক দিক খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা রাজনীতি করার সময় নয়।' আফজল গুরুর ফাঁসিকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র রাজীবপ্রতাপ রুডি বলেছেন, 'আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। দেরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটিই সঠিক পদক্ষেপ। পুরো দেশ এই সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছিল।' 

তিহার জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলের ভিতরেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে ফাঁসি হয়েছে, সেই ৩ নম্বর জেলের কাছেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। জেলের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, শেষ মুহূর্তে বেশ শান্ত ছিল আফজল গুরু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আরকে সিং জানিয়েছেন, কাশ্মীরের সোপোরে আফজল গুরুর পরিবারকে প্রাণভিক্ষা খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল। জানানো হয়েছিল ফাঁসির কথাও। এদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেছিল আফজল গুরু। প্রার্থনার পর তার শারীরিক পরীক্ষা হয়। তার পর নিয়ে যাওয়া হয় ফাঁসির জায়গায়।

ফাঁসি দেওয়া হল আফজল গুরুকে। আজ সকাল ৮টায় তিহার জেলের ৩ নম্বর সেলে ফাঁসি হল ২০০১ সালে সংসদ হামলার মূল অভিযুক্তের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে এই কথা জানিয়েছেন। তিহার জেল চত্বরেই আফজল গুরুকে কবরস্থ করা হবে বলে সূত্রের খবর। তিহার জেলের বাইরে ১০০০ পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে। কারফিউ জারি করা হয়েছে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে। করা নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঘিরে ফেলা হয়েছে দিল্লিকেও। অন্যদিকে, হুরিয়ত নেতারা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন এই ঘটনায় কাশ্মীরের শান্তি নষ্ট হবে। হুরিয়ত নেতা এস এস গিলানি আফজল গুরুর ফাঁসির প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

বিজেপির তরফ থেকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। 

২০০৪ সালে আফজল গুরুকে আগেই ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু আফজল গুরুর স্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষার আর্জি করেন। তারপর থেকে এতদিন পর্যন্ত আফজল গুরুর ফাঁসির সিদ্ধান্তটি স্থগিত ছিল। 

রাষ্ট্রপতি ভবনের মুখপাত্র ভেনু  রাজাময় জানিয়েছেন গত কয়েকদিন আগেই সেই আর্জি খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি।  তারপর আফজল গুরুর ফাঁসি শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা ছিল বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে ইঙ্গিত ছিল আগেই। 

২০০১ সালে পাঁচজন সশস্ত্র জঙ্গি সংসদ আক্রমণ করে। এই হামলায় ৯জন প্রাণ হারান। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে গুলি যুদ্ধে ওই পাঁচ জঙ্গিই মারা যায়। 

এর কিছুদিন পর এই হামলা সংগঠিত করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় আফজল গুরুকে। মুম্বই জঙ্গি হামলার মূল অভিযুক্ত আজমল কসাভের মত একই কায়দায়, নজিরবিহীন গোপনীয়তায় আফজল গুরুকেও ফাঁসি দেওয়া হয়। 


নিরাপত্তার চাদরে কাশ্মীর, দিল্লি
কাশ্মীরে চলছে পুলিশের টহল। ছবি--এপি
আফজল গুরুর ফাঁসির পরই জম্মু-কাশ্মীর এবং নয়াদিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকার ১০টি জেলায় জারি করা হয়েছে কার্ফু। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে আফজল গুরুর বাড়ি যেখানে, সেই সোপোরে। শ্রীনগরের সংবেদনশীল এলাকাগুলি সিল করে দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীকে যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা হলেও, এখনও উপত্যকায় মোতায়েন করা হয়নি। 

শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি বলেছেন, 'গতকাল (শুক্রবার) রাত ৮টা নাগাদ আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে ফোন পাই। যাবতীয় আইনি পদক্ষেপের পর আজ সকাল ৮টায় আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বহু জায়গায় আমরা কার্ফু জারি করেছি। আশা করি রাজ্যবাসী পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে দেবেন না। রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে পরিস্থিতির ব্যবহার করা উচিত নয়। সংবাদমাধ্যমের কাছে আমার আবেদন, আপনারা কোনও খবরের সত্যতা যাচাই না-করে সম্প্রচার করবেন না। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আমাদের সহযোগিতা করুন।' 

কাশ্মীর উপত্যকার পাশাপাশি রাজধানী দিল্লিতেও কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লির সব থানায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাজার, স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ডের মতো জনবহুল এলাকায় সকাল থেকেই চলছে টহলদারি।


`দের আয়ে, দুরুস্ত আয়ে।` দীর্ঘ ১১ বছরের টালবাহানার পর ২০০১ সালে সাংসদ হামলার মূল অভিযুক্ত আফজল গুরুর ফাঁসি প্রসঙ্গে এই টুইট করলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

অন্যদিকে, আফজল গুরুর ফাঁসি ঘিরে অশান্ত হতে পারে কাশ্মীর উপত্যকা। আজ সকালে সংসদ হামলার মূল চক্রী আফজল গুরুর ফাঁসির পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই রকম আশঙ্কাই প্রকাশ করলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। গুরুর ফাঁসির সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে নিরাপত্তার স্বার্থে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আফজল গুরুর আদি বাড়ি সোপোর সহ বেশ কিছু স্পর্শকাতর অঞ্চলে কেবল টিভি, ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা সাময়িক ভাবে অকেজো করা হয়েছে। শ্রীনগর, সোপোর, বারামুলা, অনন্তনাগ, পত্তান এলাকার মানুষকে বাড়ি বেড়তে নিষেধ করা হয়েছে কাশ্মীর সরকারের পক্ষ থেকে। 

ওমর আবদুল্লাহ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন আফজল গুরুর ফাঁসি থেকে বহু রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে। তিনি রাজ্যের মানুষকে কোনরকম প্ররোচনায় পা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। 

আফজল গুরুর ফাঁসি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সহ বিশিষ্টজনেরা। কংগ্রেস নেতা দ্বিগবিজয় সিং সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন জঙ্গি হামলার বিচারের ক্ষেত্রেও ফাস্টট্র্যাক কোর্ট গঠন করা উচিৎ। 

কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি
এই বিষয়টিকে সরকারের সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন। তার সঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন বিজেপির মত ইউপিএ সরকার এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করেনি। 

লোকসভার প্রকাতন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় সংসদ হামলার বিষয়টিকে একটি `জঘন্য ঘটনা` বলে উল্লেখ করেছেন। ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোকে দূর্বল করার চেষ্টায় পরিকল্পিত এই হামলার বিরুদ্ধে আইওন মেনে আদলত যে নির্দেশ দিয়েছিল এ ক্ষেত্রে তারই যথাযথ পালন হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে তার সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন সংসদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিৎ।

বিজেপির তরফ থেকে আফজল গুরুর ফাঁসিকে স্বাগত জানানো হলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে সরকার বিলম্ব করেছে বলেও সমালোচনা করা হয়েছে।

সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করার সঙ্গেই দ্রুত রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার নিষ্পত্তি দাবি করেছেন। 

বিশিষ্ট অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনও আইনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। 

অন্যদিকে, হুরিয়ত নেতাদের পক্ষ থেকে এই ঘটনার বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে। হুরিয়ত নেতা এস এস গিলানি আফজল গুরুর ফাঁসির সিদ্ধান্তকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। 


নয়াদিল্লি:ফাঁসি দেওয়া হল ২০০১ সালের সংসদ জঙ্গি হানা মামলার মূল চক্রী আফজল গুরুকে৷ ২৬/১১ মুম্বই হানায় দোষী সাব্যস্ত আজমল কসাবের মতোই চরম গোপনীয়তার মধ্যে আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তিহার জেলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রস্বরাষ্ট্র সচিব আর কে সিংহ জানিয়েছেন, ফাঁসির পর সকাল ৮টায় তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন চিকিত্সকরা৷ কাশ্মীরের বসবাসকারী আফজলের পরিবারকেও ফাঁসির খবর পাঠানো হয়েছে৷  রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কয়েকদিন আগেই আফজলের  মৃত্যুদণ্ডের আবেদন রদ করার আর্জি খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই আবেদন খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি৷ এরপরই আফজলকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র৷ সূত্রের খবর, তার দেহ নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও দাবি করা হয়নি, তাই আফজলকে তিহার জেলেই কবর দেওয়া হয়েছে৷ ।
তিহার জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন নম্বর ফাঁসি ঘরে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ ওই সময় শুধুমাত্র তিহার জেলের সুপার, একজন চিকিত্সক এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে ছিলেন বলে সূত্রের খবর৷ পুরো ঘটনায়  এতটাই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল যে, জেলের ডেপুটি সুপারও ফাঁসির খবর জানতেন না৷ একেবারে শেষ মুহূর্তে তিহার জেলে খবর আসে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে৷ 
এই ঘটনার জেরে দিল্লি ও মুম্বই সহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ সতর্ক করা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্য সরকারকেও৷ ইতিমধ্যেই কাশ্মীর কারফিউ জারি করে দেওয়া হয়েছে৷ 
২০০১-এর ১৩ ডিসেম্বর সংসদে হামলা চালায় পাঁচ সশস্ত্র জঙ্গি৷ নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে গুলির লড়াই হয়৷ নিহত হন আট নিরাপত্তাকর্মী৷ এঁদের মধ্যে ছিলেন দিল্লি পুলিশের পাঁচজন কনস্টেবল, সিআরপিএফের এক মহিলা কনস্টেবল ও সংসদের দুই নিরাপত্তাকর্মীরা৷ মারা যান একজন সাংবাদিকও৷ গুলির লড়াইয়ে মারা যায় জঙ্গিরা৷ ২০০৩ সালে হামলার মূল চক্রী আফজলকে ফাঁসির সাজা দেয় দিল্লি হাইকোর্ট৷ শাস্তি বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট৷ তার ফাঁসির দিন স্থির হয়৷ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে আফজল৷ এরপর তার ফাঁসি নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকে৷ সংসদ হানার মূল চক্রী আফজল গুরুকে কেন এখনও ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে  না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলে বিজেপি৷ অবশেষে তাঁকে ফাঁসি দিল কেন্দ্র৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/33381-2013-02-09-04-27-10


বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পরে এবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ। অশোক সিংহলের পরে এবার মোহন ভাগবত। প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে ক্রমেই পাল্লা ভারী হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর। নাম না করেও নরেন্দ্র মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার সওয়াল করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। কিন্তু এঘটনায় বিজেপির মতবিরোধ যদিও প্রশমিত হচ্ছে না। কখনও মোদী কখনও বা অযোধ্যা ইস্যুতে বারেবারেই স্পষ্ট হয়ে পড়ছে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবিটা।

প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন। এই ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত এনডিএ। মতভেদ রয়েছে বিজেপির অন্দরেই। তবু প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে বারবারই সামনে আসছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর নাম। নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে তিনি রাজি নন বলে আগেই জানিয়েছেন নীতীশ কুমার। প্রয়োজনে এনডিএ ছাড়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু অত্যন্ত যোগ্য এবং জনপ্রিয়তম প্রার্থী হিসেবে মোদীকেই বর্ণনা করেছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং। সম্প্রতি প্রবীণ ভিএইচপি নেতা অশোক সিংহল খোলাখুলি সমর্থন জানিয়েছেন মোদীকে। আর এবার মুখ খুললেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। নাম না করে তাঁর মন্তব্য, দেশের নির্দিষ্ট এক রাজনীতিককে ঘিরে যে জনপ্রিয়তার জোয়ার রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা স্মরণ রাখা উচিত।

শুধু প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বাছাই নিয়েই নয়। অযোধ্যা ইস্যুতেও বিজেপির মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি গড়ে তোলার বিষয়ে ভিএইচপির অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন বিজেপি সভাপতি। রাজনাথ সিংয়ের ওই বক্তব্যকে তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় বলে মন্তব্য করেন প্রবীণ বিজেপি নেতা জসবন্ত সিং। 

লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী দল বিবিধ মতানৈক্য মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে সক্ষম হয় কিনা, এখন তাই দেখার। প্রশ্ন থাকছে মোদী ইস্যুতে বিজেপি এবং এনডিএর মতের মিল হবে কি না তা নিয়েও।


২০০২-এ গুজরাট হিংসার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এই বিষয়ে আদালতের রায় মেনে নেবেন তিনি। গুজরাট হিংসার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সবকরম ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এমনই মন্তব্য করেছেন নরেন্দ্র মোদী। দাবি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের। 

মাসখানেক আগে দিল্লির জার্মান দূতাবাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। সেই বৈঠকেই তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত জোয়া ক্রাভিনহো। বৈঠকের পর একমাস নীরব থেকে গতকালই এবিষয়ে মুখ খুলেছেন ক্রাভিনহো। 

পর পর তিনবার গুজরাট বিধানসভা নির্বাচেন বিজেপির জয়ের কাণ্ডারী নরেন্দ্র মোদি। জাতীয় স্তরেও প্রধানমন্ত্রীর পদের দাবিদার হিসেবে উঠে আসছে তাঁর নাম। সেকারণেই মোদীর প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলি নরম মনোভাব দেখাতে শুরু করল কিনা, সেনিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।


বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে জাতীয় অপরাধ বলায় সিবিআইকে একহাত নিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এইচ এল দত্ত ও বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের ডিভিন বেঞ্চ জানিয়েছে, যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন এবং স্পর্শকাতর, তাই এখনই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় লালকৃষ্ণ আডবানী সহ বিজেপির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের ভূমিকাকে জাতীয় অপরাধের সঙ্গে যেন তুলনা না করা হয়। এই মর্মে সিবিআইয়ের আইনজীবী পিপি রাওকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এইচ এল দত্ত। 

প্রসঙ্গত, ২০১০-এর ২০ মে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনৌ বেঞ্চ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানী, শিবসেনা প্রধান প্রয়াত বাল ঠাকরে সহ উনিশজনকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের চক্রান্ত থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। এরপর দু`হাজার এগারো সালের আঠেরোই ফেব্রুয়ারি সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল সিবিআই। বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে সিবিআইয়ের কেন নয় মাস সময় লাগলো, তাও জানতে চান সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি। শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। 


'কর্পোরেট চক্রান্তে মোদী বন্দনা'



'কর্পোরেট চক্রান্তে মোদী বন্দনা'
গৌতম হোড় 

নয়াদিল্লি: বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবি যতই জোরালো হোক না কেন, এনডিএ-র শরিকরা কিন্ত্ত তাঁকে এখনও মেনে নিতে নারাজ৷ উল্টে শুক্রবার মোদীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন এনডিএ-র আহ্বায়ক ও সংযুক্ত জনতা দলের সভাপতি শরদ যাদব৷ তাঁর অভিযোগ, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করা নিয়ে যে হইচই হচ্ছে, তার পিছনে আছে কয়েকটি কর্পোরেট সংস্থা৷ তাঁদের উদ্দেশে শরদ যাদব বলেছেন, 'আমি সাবধান করে দিচ্ছি, আপনারা নিজেদের ব্যবসা নিয়ে থাকুন৷ রাজনীতি করবেন না, আগুন নিয়ে খেলবেন না৷ ৫৪৩ জন সাংসদকে আপনারা কব্জা করতে পারবেন না৷' বিজেপি এই বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও, কংগ্রেস বলেছে, এনডিএ-র এতদিনে জ্ঞান হয়েছে৷ শরদ যাদবের মতো বুদ্ধিমান নেতা যখন এই কথা বলেছেন, তখন তাঁর কাছে অবশ্যই প্রমাণ আছে৷ 

শরদ যাদব শুধু শরিক দলের নেতাই নয়, বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটের আহ্বায়কও৷ শরদ বলেন, 'এনডিএ-তে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে কোনও নাম ঠিক হয়নি৷ ভোটের পর হবে৷ বিজেপি তার পছন্দের নেতার নাম বলবে৷ অন্যরা তাদের মত দেবে৷' তাঁর স্পষ্ট কথা, 'প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ বন্ধ হওয়া দরকার৷ এমন ভাবে এ নিয়ে কথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন পরমাণু বোমা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে৷ দেশের বেকারত্ব, দারিদ্র, দুর্নীতির মতো গুরুতর সমস্যা ছেড়ে এই সব আলোচনা অর্থহীন৷' জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে মোদীর তুলনা করা নিয়েও পাল্টা কটাক্ষ করেন শরদ৷ 

বিজেপির হিন্দুত্বের কর্মসূচিতে ফেরা নিয়ে শরদের বক্তব্য, 'এনডিএ একটা কর্মসূচির ভিত্তিতে চলে৷ তার বাইরে দলগুলির নিজের নিজের আলাদা মত আছে৷' সংযু্ক্ত জনতা দল দলিত মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সংরক্ষণের পক্ষে৷ কিন্ত্ত বিজেপি সেটা মানে না৷ আবার বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে, রামমন্দির নিয়ে মতে নীতীশ কুমারের দলের সায় নেই৷ 

শরদ এ দিন যে ভাবে মোদীকে আক্রমণ করেছেন তার থেকে স্পষ্ট, তাঁর ও নীতীশ কুমারের মোদী-বিরোধিতা কতটা প্রবল৷ বিহারে বহু চেষ্টার পর নীতীশ সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছেন৷ সেটা তিনি হাতের বাইরে যেতে দেবেন না৷ রাজনাথ সিং বিজেপি সভাপতি হওয়ার পরেও শরদ তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করতে৷ কিন্ত্ত রাজনাথ বিবৃতি দিয়েওসেই জল্পনা থামাতে পারেননি৷ শরদের বক্তব্য, 'দলে তো সামরিক আইন নেই৷ কেউ কিছু বললে কী আর করা যাবে৷' 

তবে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির নেতাদের থেকেও শরদ দুষছেন কিছু কর্পোরেট সংস্থাকে৷ তাঁর অভিযোগ, তারাই মোদীর হয়ে এই প্রচারটা করছে৷ শরদ এটাও বুঝিয়ে দিতে কসুর করছেন না, বিজেপি-তে যতই দাবি উঠুক না কেন, অত সহজে মোদী এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে পারবেন না৷ এ ক্ষেত্রে শরদরা একটা হিসেবের উপরই ভরসা করছেন৷ সেটা হল, মোদী আসুন বা না আসুন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসনসংখ্যা খুব বেশি বাড়বে না৷ সরকার গড়তে গেলে তাদেরও শরিক দলগুলির ওপর নির্ভর করতে হবে৷ তখন শরিকদের পছন্দ মেনেই প্রধানমন্ত্রী করতে হবে৷ সে জন্যই ভোটের পর জোট জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা ঠিক করতে চান তাঁরা৷ 
http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/18413441.cms

নয়াদিল্লি: হতে পারত ডাক্তার, নয়তো আমলা৷কিন্তু এমবিবিএস এর পাঠ ছেড়ে জেহাদি আন্দোলনের কানাগলিতে প্রবেশ-মহম্মদ আফজল গুরুর জীবনটা একেবারে অন্য পথে হাঁটল৷ ডাক্তারি ছেড়ে হঠাত্ জেহাদি৷ একবার সন্ত্রাসবাদী পথে পা রাখা, মোহভঙ্গ হয়ে মূল স্রোতে ফেরা। আবার সেই ছেড়ে আসা হিংসার পথই বেছে নেওয়া, কীভাবে ২০১১-র সংসদ হামলার মূল ষড়যন্ত্রী হয়ে উঠল জম্মু-কাশ্মীরের বারামুল্লার ছেলে আফজল? 
পড়াশোনা, কেরিয়ার গড়ার লক্ষ্য সামনে৷ মূল স্রোতেই ছিল সে৷ এমবিবিএস-এর প্রথম বর্ষের পরীক্ষাও দেয়৷ আইএএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে৷ এসময় জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের কাজকর্মে আকৃষ্ট হয় আফজল৷ সেখানেই তার জঙ্গি প্রশিক্ষণে হাতেখড়ি৷ কিন্তু সেই প্রশিক্ষণে আকর্ষণ হারিয়ে কাশ্মীরে বিএসএফের কাছে আত্মসমর্পণ করে সে৷ এরপর কিছু ব্যবসার কাজ শুরু করে আফজল৷ সেসময় তারিক নামে একজনের সঙ্গে আলাপ হয় তার৷ কাশ্মীরে জেহাদি আন্দোলনে ফের নাম লেখায় আফজল৷ পাকিস্তানেও বিভিন্ন জঙ্গি নেতার সঙ্গে আলাপ হয় তার৷ চলে প্রশিক্ষণ৷ মুক্ত কাশ্মীরের লক্ষ্যে শুরু হয় আফজলের জঙ্গি আন্দোলন৷ এরপর থেকেই জৈশ-ই-মহম্মদ- র সদস্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আফজল৷ সংসদ ভবন বা দূতাবাসের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালানোর ভার পড়ে তার ওপর৷ পাশাপাশি দিল্লিতে জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানা তৈরি করে ফেলে আফজল৷ 
এরপর ২০০১ এর ১৩ ডিসেম্বর সংসদে হামলা চালায় লস্কর-ই-তইবা ও জৈশ-ই-মহম্মদ এর সদস্যরা৷ সেই হামলার মূল ষড়যন্ত্রী ছিল আফজল৷ ১৫ ডিসেম্বর ধরা পড়ে সে৷ সে বছরের ১৯ ডিসেম্বর দোষ স্বীকার করে নেয় আফজল৷ ২০০৩-এ তার ফাঁসির সাজা দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ গত ৩ ফেব্রুয়ারি আফজলের  প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ শনিবার সকাল আটটায় ফাঁসি দেওয়া হয় আফজলকে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/33382-2013-02-09-06-26-02

নয়াদিল্লি: ২০০১ সালের পর ২০১৩৷ দীর্ঘ সময় ধরে আফজল গুরুর ফাঁসি নিয়ে টানাপোড়েন চলেছে৷ সংসদ হানার মূল চক্রীকে কেন ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলে বিজেপি৷ সন্ত্রাস দমনে যথেষ্ট উদ্যোগী নয় কংগ্রেস, বিরোধীদের এই অভিযোগে অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস৷ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, অস্বস্তি দূর করতে আবারও সেই পরিত্রাতা প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের অস্বস্তি দূর করতে কখনও অর্থমন্ত্রী, কখনও বিদেশমন্ত্রী কিংবা প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন, কখনও স্রেফ দলের ক্রাইসিস ম্যানেজার হয়ে হাজারো সমস্যা থেকে দূরে রেখেছেন দলকে৷ দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েও সেই প্রণববাবুই সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে ফের কংগ্রেসকে সামনের সারিতে প্রতিষ্ঠা করে বিরোধীদের যাবতীয় সমালোচনা বন্ধ করে দিলেন৷ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে আফজল৷ এরপর তার ফাঁসি নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকে৷ অবশেষে ফাঁসি রদের আবেদন খারিজ করে দেন প্রণববাবু৷ তারপরই শুরু হয় তত্পরতা৷ শনিবার সকালে অত্যন্ত গোপনীয়তায় ফাঁসি দেওয়া হল আফজলকে৷ দেরিতে হলেও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পিছপা হয়নি বিজেপি-শিবসেনাও৷ 
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মুম্বই হামলার মূল চক্রী আজমল কসাব ও আফজল গুরুর ফাঁসির সিদ্ধান্ত কি নিতান্তই রাজনৈতিক ফায়দার জন্য? বিরোধীদের কাছ থেকে সন্ত্রাস ইস্যুতে তাস কেড়ে নেওয়ার জন্যই কি কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত৷ রাজনৈতিক মহল থেকে বিজেপি শিবিরে এমন  প্রশ্ন ঘোরাফেরা করলেও তা খারিজ করে দিয়েছে কংগ্রেস৷  কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বাইট-মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, আফজলকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও রাজনৈতিক অঙ্কই নেই সরকারের৷
তবে কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা মুখে যাই বলুন না কেন, সন্ত্রাসদমন ইস্যুতে ২০১৪ সালের ভোটের আগে বেশ সুবিধাজনক জায়গাতেই নিজেদের লড়াই শুরু করবেন সনিয়া-রাহুল গাঁধীরা৷  এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/33383-2013-02-09-06-47-46

নয়াদিল্লি: ২১ নভেম্বর, ২০১২ সকালে টিভির পর্দায় ব্রেকিং নিউজ৷  চূড়ান্ত গোপনীয়তায় ফাঁসি হল ২৬/১১র মুম্বই হানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পাকিস্তানি জঙ্গি আজমল আমির কসাবের৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ফাঁসির তারিখ জানতেন না মনমোহন সিংহ-সনিয়া গান্ধীও৷ 
৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩৷ মাস দুয়েকের ব্যবধান৷ কসাবের পর এবার আফজল গুরু৷ চূড়ান্ত গোপনীয়তার ঘেরাটোপে ফাঁসি আরেক জঙ্গির৷ তা কতটা গোপন ছিল এই পরিকল্পনা? কীভাবে চলে প্রস্তুতির জাল বোনা? তিহার জেল সূত্রের খবর, দিন ২০ আগে ৩ নম্বর জেলের ডেপুটি জেলারকে বদলি করা হয়৷ তাঁর জায়গায় একাধিক আসামীকে ফাঁসি দেওয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অফিসারকে ডেপুটি জেলার করে নিয়ে আসা হয়৷ এই ৩ নম্বর জেলেই ছিল আফজল৷ এই বদলির পরই জল্পনা শুরু হয়, তবে কি ফাঁসি হতে চলেছে আফজলের? সেই জল্পনায় ঘৃতাহুতি পড়ে যখন ফাঁসির দড়ি কেনা হয়৷ 
জেল সূত্রে খবর, ফাঁসি দেওয়ার দড়ি কিনে আনেন জেলের তিন আধিকারিক৷ দিন পাঁচেক আগে আফজলের ওজন নেওয়া হয়৷ এরপরে ঘটনাক্রম অবশ্য ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলে৷ জেল সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধেয় আফজলকে জানানো হয় যে শনিবার সকালে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে৷ এরপর জেল সুপারিনটেনডেন্ট, ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট এবং আরেক জেল আধিকারিক আফজলের কাছে যান৷ জানতে চান তার শেষ ইচ্ছা কী? জেল সূত্রে খবর, একটি ধর্মীয় বই চায় সংসদ হামলার এই মূলচক্রী৷ রাতে এই জঙ্গির পছন্দের কিছু খাবার দাবারও তার সেলে দেওয়া হয়৷ যদিও তিহার সূত্রে খবর, কোনও খাবারই খায়নি আফজল৷ শুধু ২-৩ গ্লাস জল খেয়েছে৷ আর রাতভর সেলের মধ্যে পায়চারি করেছে৷ ফাঁসির এই আসামীকে সারারাত বিড়বিড় করতেও শুনেছেন কিছু জেল আধিকারিক৷ 
এদিকে সূত্রের খবর, ৪৮ ঘণ্টা আগেই জোর কদমে ফাঁসির প্রস্তুতি শুরু দেয় তিহার জেল কর্তৃপক্ষ৷ তিহারের ৩ নম্বর জেলের মধ্যেই রয়েছে ফাঁসি-ঘর৷ এই ফাঁসি ঘরের পাশে রয়েছে ৫টি ছোট ছোট সেল৷ তারই একটি সেলে ছিল আফজল৷ ফাঁসির ৪৮ ঘণ্টা আগেই আফজল ছাড়া বাকি ৪টি সেল থেকে আসামীদের সরানো হয়৷ শেষ ৪৮ ঘণ্টা সেলে একাই ছিল সে৷ জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লার দাবি, ফাঁসির একদিন আগে দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি তাঁকে রাজ্যে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে তাঁকে জানিয়ে দেন, যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া সেরে ফেলা হয়েছে শনিবার সকালে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে আফজলকে। আমরা দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই, উপত্যকায় কিছু নিয়ন্ত্রণ জারি করা হবে৷ ।
আজ সকাল ছটায় আফজলের কাছে আসেন ডিআইজি (জেল)-সহ কয়েকজন জেল আধিকারিক৷ তাকে সেল থেকে বের করে ফের তার শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়৷ এরপর আফজল গুরুকে নিয়ে যাওয়া হয় ফাঁসি-ঘরের দিকে৷ এক জেল আধিকারিক জানিয়েছেন, সে সময় তার চোখেমুখে কোনও উত্তেজনা বা ক্ষোভের ছাপ দেখা যায়নি৷। শান্ত, ধীর পায়ে ফাঁসির মঞ্চে ওঠে আফজল৷ তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পড়ে শোনান ম্যাজিস্ট্রেট৷ অবশেষে ফাঁসি৷ সকাল আটটায় আফজলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকেরা৷ তিহার থেকে খবর পৌঁছায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে৷ 
http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/33385-2013-02-09-08-31-07

ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সাতজন আসামীর শাস্তিদানের চূড়ান্ত সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাষ্ট্রপতি ফের তা সেখানেই ফেরত পাঠিয়েছেন। নবাগত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দে জানিয়েছেন যে এই সাতজনের ওপর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের ফাইল আরেকবার তিনি খতিয়ে দেখবেন। এই সাতজনের মধ্যেই ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে হাজতে রয়েছেন আফজল গুরু। শাস্তির আদেশ খতিয়ে দেখা মানে কী?

আফজল গুরু জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের বারামুল্লা জেলার বাসিন্দা। কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। আমরা সকলেই জানি, কীভাবে এই দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্যে হিংসাত্মক উপায়ে লড়াইয়ের একটি ধারা গড়ে উঠেছিল। কাতারে কাতারে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী তাতে যোগ দিয়েছে। দিল্লির সংসদে সশস্ত্র আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমরা জানতে পারি, ১৯ ডিসেম্বর আফজল গুরু তাঁর ওপর অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তারই ফলস্বরূপ তাঁর ওপর ফাঁসির আদেশ হয়েছে।

এর আগে ২০০৪ সালে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ধনঞ্জয় চ্যাটার্জির ফাঁসির কথা আমাদের মনে আছে। এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছিল। কিন্তু আমাদের চোখের ওপর ধর্ষণ এবং মেয়েদের ওপর নানারকম পীড়ন ও সম্মানহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে।

'ফিদায়েঁ' বা আত্মঘাতী হানাদারদের উপস্থিতিও আমাদের সমাজে কমেনি। ভারত বা পাকিস্তানে কোথাও নয়। যুবকদের মধ্যে আত্মঘাতী হওয়ার বিষয়বস্তু অটুট রয়ে গেছে। শুধু কাশ্মীরেই নয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ডে … পশ্চিমবঙ্গেও কি তা নেই?

আমরা বিচারের নামে বিষবৃক্ষের আগা ছেঁটে গোড়ায় জল ঢেলে চলেছি! ধন্য আমাদের বিচার ব্যবস্থা! আফজল গুরু না হয় হিংসার পথ নিয়েছেন বলে অভিযুক্ত। কিন্তু মণিপুরের শর্মিলা তো ১২ বছর ধরে AFSPA র মতো একটা পুরোনো কালাকানুন রদ করার জন্য অহিংস পথে লড়াই করে চলেছেন। কোথায় তিনি সুবিচার পেলেন? আমাদের স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবীরা কতটুকু তাঁর পাশে দাঁড়ালেন?

সমাজে যদি সত্যিই সুবিচার এবং বিবেচনাবোধ থাকে, তাহলে আজ আফজল গুরুদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা দরকার। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে আমরা কথা বলি তাদের সঙ্গে, যারা সেই সমস্যা নিয়ে মোটেই পীড়িত নয়। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আমরা কথা বলি না। আমাদের মিডিয়ায় কথা বলার জন্য রয়েছেন ণ্ণতালিকাভুক্ত' বুদ্ধিজীবীরা! তারা ভুক্তভোগী নয়। সমস্যার আগুন তাদের স্পর্শ করে না। ধনঞ্জয়ের সঙ্গেও কথা বলা দরকার ছিল। আমরা যারা বিচারের দায়িত্ব নিই, তাদের ভাবা দরকার আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা কেন বিদ্রোহী হয়? কেন তারা অপরাধে লিপ্ত হয়? সেটা ভাবতে পারলে বোধহয় আমরা সুবিচারের পথে এগোনোর চেষ্টা করতে পারতাম।

http://songbadmanthan.com/?p=1798


এখন নজর আফজল-সর্বজিতে

প্রেমাংশু চৌধুরী 
নয়াদিল্লি, ২২ নভেম্বর ২০১২

afzal guru

আফজল গুরু। ছবি- নিজস্ব চিত্র।

ফজল গুরু এবং সর্বজিৎ সিংহ। দুই দেশে দুই বন্দি দিন গুনছেন উৎকণ্ঠায়। ফাঁসির আসামি দু'জনেই। কিন্তু ভাগ্য ঝুলছে নানা বিষয়ের উপরে। কসাবের প্রাণদণ্ডে ফের আলোচনায় দু'টি নামই। দু'জনের ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠল, এ বার কী?
কসাবের ফাঁসিকে স্বাগত জানালেও নরেন্দ্র মোদীর মতো বিজেপি নেতারা আজই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, আফজল গুরুকে ফাঁসি দিতে কেন এত দেরি করা হচ্ছে? এমনকী, কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও দাবি তুলেছেন, আফজলের মামলারও দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, কসাবের মতো আফজলের ক্ষেত্রেও কি একই রকম তৎপরতা দেখা যাবে? একই ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, কসাবের প্রাণদণ্ড কি পাকিস্তানের জেলে বন্দি ফাঁসির আসামি সর্বজিতের মামলার উপরেও প্রভাব ফেলবে না?
রাষ্ট্রপতির সচিবালয় সূত্রে জানানো হয়, প্রণব মুখোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই আফজল-সহ ন'টি প্রাণভিক্ষার আবেদন সুশীলকুমার শিন্দের কাছে পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়েছেন। ১ অগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন শিন্দে। তাঁর পূর্বসূরি পি চিদম্বরমের আমলে যাদের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল, শিন্দেও তার সঙ্গে একমত কি না, সেটাই জানতে চাইছে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়। এর মধ্যে অবশ্য নতুন কিছু নেই। ২০০৮ সালে শিবরাজ পাটিলের জায়গায় যখন চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন, তখনও এই প্রথা মানা হয়েছিল। শিন্দে আজ জানান, তাঁর টেবিলে আফজলের ফাইল আসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি তা ছেড়ে দেবেন।

কিন্তু তাই বলে অদূর ভবিষ্যতে আফজলের ফাঁসি হয়ে যাবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই এক বার রাষ্ট্রপতির কাছে আফজলের ফাঁসির সুপারিশই করেছে কেন্দ্র। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা বদলে দেবেন, এমন সম্ভাবনা কম। রাষ্ট্রপতিও সাধারণত সরকারের সুপারিশ মেনেই সিদ্ধান্ত নেন। কাজেই তিনিও আফজলের ফাঁসিতেই সিলমোহর বসাবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। তবে সংবিধানের ৭২তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তার কোনও সময়সীমা নেই। মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আফজলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রশ্নটাই বড়। আফজল কাশ্মীরি। তাঁর ফাঁসি হলে কাশ্মীরিদের থেকে কংগ্রেসের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাশ্মীরেও সমস্যা তৈরির আশঙ্কা থাকবে। অতীতে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদও এই কারণেই আপত্তি তুলেছিলেন। আফজলকে ফাঁসিতে ঝোলালে সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়ও আছে। বহু মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশিষ্টজনও আফজলের ফাঁসির বিরুদ্ধে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে আরও একটি তথ্য দেওয়া হচ্ছে। সেখানকার কর্মীরাই বলছেন, ভারতে কিন্তু ঘনঘন ফাঁসি হয় না। কসাবের আগে ফাঁসি হয়েছিল ধনঞ্জয়ের, ২০০৪ সালের ১৪ অগস্ট।
সুপ্রিম কোর্ট আফজল গুরুর ফাঁসির আদেশ দেয় ২০০৫-এ। ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল ২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়ে আর্জি জানান আফজলের স্ত্রী। শেষ পর্যন্ত গত বছরের অগস্টে আফজলের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজের সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পরেও প্রতিভা পাটিল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি।
প্রশ্ন আছে সর্বজিতের ভবিষ্যৎ নিয়েও। বিশ বছর ধরে পাকিস্তানের কোট লোকপত জেলে আটক সর্বজিতের মুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে। এমনকী, কয়েক মাস আগে তাঁর মুক্তির কথা ঘোষণাও করে দেয় পাকিস্তান। পরে অবশ্য পাক প্রশাসন জানায়, সর্বজিৎ নয়, মুক্তি দেওয়া হচ্ছে সুরজিৎ সিংহকে।
কূটনীতিকরা বলছেন, কসাবের ফাঁসির পরে কিন্তু সর্বজিতের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেল। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত সর্বজিৎকে মুক্তি দিতে গেলে এ বারে দেশের সাধারণ মানুষের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে পাক সরকারকে। তা ছাড়া, আছে সেনা, আইএসআই, এমনকী জঙ্গি সংগঠনগুলিরও চাপ। নড়বড়ে জারদারি প্রশাসন এত কিছু উপেক্ষা করতে পারবে না।
সর্বজিতের স্বজনরা আজ কসাবের ফাঁসি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। না তাঁর বোন দলবীর কৌর, না তাঁর বড় মেয়ে স্বপনদীপ কৌর। অনেকেই বলছেন, ওঁদের দোষ নেই। সর্বজিতের ভবিষ্যৎ তো এখন গভীর সঙ্কটে।

 

আনন্দবাজার পত্রিকা

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Census 2010

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors