Monday, July 15, 2013

আদালতের নির্দেশে ধর্মতলা থেকে নিউটাউনে সরছে বাসস্ট্যান্ড

আদালতের নির্দেশে ধর্মতলা থেকে নিউটাউনে সরছে বাসস্ট্যান্ড

আদালতের নির্দেশে ধর্মতলা থেকে নিউটাউনে সরছে বাসস্ট্যান্ড
এই সময়: ছ'মাসের মধ্যে ধর্মতলা থেকে বাসস্ট্যান্ড সরাতে বলেছিল হাইকোর্ট৷ সেই নির্দেশের প্রায় ছ' বছর পর অবশেষে এসপ্লানেড চত্বর খালি করতে চলেছে পরিবহন দপ্তর৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে, নিউটাউনে তৈরি হবে দূরপাল্লার বাস টার্মিনাস, আর স্বল্প দূরত্বের বাসের জন্য স্ট্যান্ড তৈরি করা হবে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর নিচের জমিতে৷ নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া ওয়ানে এ জন্য দশ একর জমি দিচ্ছে ওই উপনগরীর নির্মাতা সংস্থা 'হিডকো'৷ হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন রবিবার বলেন, 'আমরা আশা করছি পুজোর আগেই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে৷ প্রকল্পের রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেএমডিএ-কে৷'

গত শুক্রবার এই নিয়ে হিডকো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দূরপাল্লার বাস মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গেও সরকার আলোচনা শুরু করেছে৷

কেমন হবে নিউটাউনের বাস টার্মিনাস? হিডকো এবং পরিবহণ দপ্তরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমানবন্দরের মতোই অত্যাধুনিক লাউঞ্জ থাকবে সেখানে, যার পুরোটাই হবে বাতনুকূল৷ সেখানে বসেই যাত্রীরা জানতে পারবেন কোন বাস কোথায় কোন সময় রওনা দেবে৷ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে৷ বাইরে থেকে অনেক রাতে আসা যাত্রীদের বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে সেখানে৷ পাশাপাশি থাকবে ব্যাঙ্ক, পেট্রল প্যাম্প, মিনি হাসপাতাল, গেস্ট হাউস, রেস্তরাঁ, হোটেল ও বিনোদনের নানা ব্যবস্থাসহ বাণিজ্য কেন্দ্র৷ থাকবে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও৷

দূরপাল্লার বাস টার্মিনাসের পাশেই থাকবে শহরে আসার জন্য 'ফিডার বাস সার্ভিসে'র জন্য স্থানীয় বাসের একটি টার্মিনাসও৷ হিডকো এলাকায় ইতিমধ্যেই একটি বাস স্ট্যান্ড আছে৷ মূল শহরে আসার জন্য সেখান থেকেও বিভিন্ন রুটের বাস পাওয়া যাবে৷

হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের কথায়, 'লাউঞ্জের লাগোয়া বাণিজ্য কেন্দ্রটিই টার্মিনাসটির নির্মাণ খরচ তোলার কাজে সাহায্য করবে৷'
পরিবহণ দপ্তরের কর্তাদের মতে, শুধুই আদালতের নির্দেশ নয়, এর সঙ্গে রয়েছে কলকাতাকে সাজানোর ভাবনা৷ পরিবহণ সচিব কথায়, গোটা প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য একটা ওয়ারি্‌র্কং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে সিএসটিসি, সিটিসি, এসবিএসটিসি, এনবিএসটিসি ও ভূতল পরিবহণ নিগম ও পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের প্রতিনিধিরা রয়েছেন৷

এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, 'এসপ্ল্যানেড থেকে বাস ডিপো সরানোর সরকারি সিদ্ধান্তের কথা কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়ে দেওয়া হবে৷'

প্রসঙ্গত, বাস ডিপো সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টই৷ হাওড়ার গণতান্ত্রিক নাগরিক সমিতির পক্ষে সুভাষ দত্তের এক জনস্বার্থের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭-এর ২৮ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য ছ'মাসের মধ্যে এই বাস ডিপো সরানোর নির্দেশ জারি করেছিলেন৷ সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলেও, কোনও সময়সীমা বেঁধে দেয়নি৷ তার আগে রাজ্য সরকার ধর্মতলাতেই বাস স্ট্যান্ডটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছিল৷ কিন্ত্ত সামরিক বিভাগের আপত্তিতে তা থমকে যায়৷ ফোর্ট উইলিয়ামের কর্তাদের বক্তব্য ছিল, ধর্মতলার বাস স্ট্যান্ডের জমির দামের সমমূল্যের জমি নিউটাউনে দিতে হবে৷ সরকার তা মানেনি৷ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঠিক করা হয়েছিল, শহরের তিন প্রান্তে তিনটি নতুন ডিপো খোলার হবে৷ এ জন্য ইএম বাইপাসের ধারে নোনডাঙা এবং দ্বিতীয় হুগলির সেতুর নিচের একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল৷ আর তৃতীয় ডিপো হিসেবে উল্টোডাঙায় সিএসটিসির পরিত্যক্ত ডিপোটি ব্যবহার করার হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল৷

তারপরও কেটে গিয়েছে দীর্ঘ সময়৷ সপ্তাহ দুয়েক আগে সেই মামলাতেই হাইকোর্ট ডিপো সরানোর কথা স্মরণ করানোর পাশাপাশি প্রশ্ন তোলে, এসপ্লানেডে একাধিক বাস রুটের গুমটি আছে কী করে? সরকারি সূত্রের খবর, পরিবহণ দপ্তরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পরিবহণ মালিকরা ধর্মতলা থেকে বাস রুট চালু করেছে৷ ধর্মতলা থেকে শেষ পর্যন্ত বাস স্ট্যান্ডটি সরে গেলে পরিবেশ দূষণ এবং যানজটের সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Census 2010

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors