Wednesday, November 20, 2013

উত্তম - অমল দ্বৈরথ

উত্তম - অমল দ্বৈরথ



অথচ 'প্লট নং ৫' প্রায় কোনও বুদবুদও কাটতে পারেনি দর্শককুলে৷ ভিলেন: সঠিক প্রচারের ভয়ংকর অভাব৷ প্রসঙ্গত উত্তমকুমারও এ ছবিতে ভিলেনের চরিত্রেই অভিনয় করেছিলেন৷ 

সত্তরের সেরা স্টারকাস্ট 

এটাই ছিল প্রথমবার যখন সত্তরের বলিউডের দুই অন্যতম শক্তিশালী অভিনেতা পরস্পরের মুখোমুখি হন৷ গল্পটা ছিল এক সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে৷ 'সাসপেন্স ড্রামা'৷ আর সেই ছবির সূত্রেই এই দুই অভিনেতা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান৷ ছবিতে ছিল না কোনও গান, কোনও রোম্যান্টিক দৃশ্য আর ছবির চিত্রনাট্যও ছিল এমন, যাতে গল্প এগোয় তরতর করে৷ 

এখন তো এমন ধরনের গল্প নিয়ে প্রচুর ছবিই হয়ে থাকে৷ কিন্ত্ত এটা যে সময়কার কথা, তখনকার হিসেবে সত্যিই নতুন ধরনের ছিল এই ছবির কনসেপ্ট-টি৷ কারণ ছবিটির কাজ শুরু হয় ১৯৭৮-এ৷ যতদূর জানা যাচ্ছে, উত্তমবাবু ১৯৮০ সাল নাগাদই এই ছবির কাজ সম্পূর্ণ করেন৷ তার আগে অবশ্য ১৯৬৯ সালে যশ চোপড়া নিজের সিগনেচার ঘরানা ছেড়ে 'ইত্তেফাক' বানিয়ে ফেলেছেন৷ কিন্ত্ত 'ইত্তেফাক'-এ কোনও 'সিরিয়াল কিলার' ছিল না৷ 'প্লট নং ৫'-এ সেটাই প্রধাণ৷ আর 'ইত্তেফাক'-এর মতোই এমন একটি গানহীন ছবিতেও কেবল আবহসঙ্গীত তৈরি করেছিলেন সলীল চৌধুরী৷ 

আর উত্তম কুমারের সঙ্গে আর কে ছিলেন সে ছবিতে? সত্তরের শেষের বম্বে (মুম্বই নামটা তখনও সরকারি হয়নি) ইন্ডাস্ট্রির প্রেক্ষিতে সেই স্টারকাস্ট-ও সাহসী এবং পরীক্ষামূলক৷ অমল পালেকর, প্রদীপ কুমার, সারিকা, বিজু খোটে, বেঞ্জামিন গিলানি, বিদ্যা সিনহা আর শ্রীরাম লাগু৷ এবং আমজাদ খান৷ 

হয়তো সময়ের চাইতে কিছুটা আগেই বানানো হয়ে গিয়েছিল ছবিটি৷ আর সেই কারণেই তত্‍কালীন দর্শকদের দেখার সুযোগও হয়েছিল কিঞ্চিত্‍ কম৷ তবে কলকাতায় কিন্ত্ত ছবিটি প্রায় ১০ সপ্তাহ চলেছিল এলিট সিনেমা হলে৷ সেই হিসেবে কলকাতায় ছোটখাটো হিট-ই বলা যায়৷ কিন্ত্ত বাদবাকি ভারতে সেইভাবে চলেনি ছবিটি৷ খুব বেশি হলে তিন থেকে চার সপ্তাহ৷ কোথাও কোথাও পাঁচ৷ সেই সময়ের হিন্দি ছবির প্রেক্ষিতে 'ফ্লপ'-ই বলতে হবে৷ হয়তো সেই সময় ভারতীয় দর্শক প্রস্ত্তত ছিলেন না 'প্লট নং ৫' ছবিটি দেখার জন্য৷ আর তাই খুব দ্রুতই জনমানস থেকে হারিয়ে যায় এর স্মৃতি৷ 

অমলের কথায় 

অমল পালেকর কিন্ত্ত ছবিটির কথা ভুলে যাননি৷ বিভিন্ন সাক্ষাত্‍কারে তিনি এ ছবির উল্লেখ করেছেন৷ বলেছেন, 'এই প্রথমবার এক মার্ডার মিস্ট্রির শ্যুটিং-এ আমি উত্তম কুমারের মুখোমুখি হই৷ ওঁর চরিত্রটা ছিল পক্ষাঘাত আক্রান্ত এক মানুষের৷ যিনি সব সময় হুইলচেয়ারে থাকতেন৷ আমি ওঁর ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করি৷ চিত্রনাট্যে সর্বক্ষণ এমনই ইঙ্গিত ছিল যে, আমিই অপরাধী৷ ছবির গল্প বাদ দিয়েও অন্য একটা কথা মনে থেকেই গিয়েছে৷ ছবিতে কাজ করার সময় উত্তমকুমার গোটা ইউনিটকে একটা পরিবারের মতো দেখতেন৷ সবাইকে আগলে রাখতেন৷ ওঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞাতাটাই আলাদা৷ সারা জীবন এই ছবিটার কথা মনে রাখব৷ যোগেশ সাক্সেনা পরিচালিত এই ছবি আমার অভিনয়-জীবনের অন্যতম সেরা ছবি৷' 

অমল পালেকরের মতোই আমজাদ খানও সেই সময় বেশ কিছু সাক্ষাত্‍কারে একইভাবে স্মৃতিচারণ করেছিলেন 'প্লট নং ৫'-এর৷ 

সরি আই অ্যাম নট স্মাইলিং 

সেই সময় খুব বেশি আলোকচিত্রী শিল্পী ছবির শ্যুটিং-এ পৌঁছতে পারেননি৷ যে ক'জন পৌঁছান, তাঁদের মধ্যে দিল্লির এন কে সারিন অন্যতম৷ সারিন যখন ছবির সেটে পৌঁছান, বলা যায় ছবির ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যের শ্যুটিং চলছে৷ ছবির অধিকাংশ দৃশ্যই ইন্ডোরে শ্যুট করা হলেও এই বিশেষ দৃশ্যটি ছিল আউটডোরে৷ তাঁর ক্যামেরায় যে দৃশ্য ধরা পড়েছিল, তার সঙ্গে সারিনের কথা রইল 'অন্য সময়'-এর পাঠকদের জন্য৷ 

অমল পালেকর এবং উত্তম কুমার দু'জনেই অত্যন্ত বিরক্ত সেই দিন৷ বার বার একই দৃশ্যের শট নিতে হচ্ছিল৷ দু'জনেরই মেজাজ ছিল তিরিক্ষে৷ সেটা প্রভাব ফেলছিল তাঁদের কাজেও৷ 

উত্তমকুমার সেটের এক কোণে বসে একের পর এক সিগারেট খেয়ে যাচ্ছিলেন৷ যে সময়টায় অমল বসেছিলেন সম্পূর্ণ উল্টো দিকের এক কোণে৷ মুখ ভারি৷ পরিবেশ গম্ভীর৷ কিছু যে একটা গণ্ডগোল হচ্ছে, আমি সহজেই টের পাচ্ছিলাম৷ 

আমি জানতাম ওই দিনই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শ্যুটিং আছে৷ উত্তম কুমার এবং অমল পালেকরের খারাপ মেজাজ পরিবেশকে বেশ গম্ভীর করে দিয়েছিল৷ আর সেই কারণেই একের পর এক 'টেক-রিটেক' হয়ে চলেছিল৷ 

উত্তম কুমারের ছবি তুলি৷ একই দিনে অমল পালেকরের ছবিও তুলি৷ কিন্ত্ত দু'জনে কখনওই এক ফ্রেমে আসেননি৷ দু'জনে একই ধরনের গাউন পরেছিলেন৷ কিন্ত্ত রং ছিল আলাদা৷ তবে সেদিন অমলের ছবি তোলায় আমার বিশেষ উত্‍সাহ ছিল না৷ কারণ এর আগে বহুবার ওঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে৷ সেদিন আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিলেন উত্তম কুমার৷ কিন্ত্ত সেই দিনটাতেই তাঁর মেজাজ ছিল খুব খারাপ৷ 

যখন তাঁর দিকে ক্যামেরা তাক করি, তিনি হাসেনওনি৷ শুধু তাকিয়ে ছিলেন৷ বোঝা যাচ্ছিল সেটে যা হয়েছে, তারই রেশ রয়ে গিয়েছিল উত্তমবাবুর মনেও৷ ব্যাপারটাকে যে কেউ ইচ্ছেমতো ইন্টাপ্রেট করতে পারেন৷ আমার মনে হয়েছিল এটা মারাত্মক মনঃসংযোগ৷ কাজের মধ্যে শরীর এবং মন সম্পূর্ণ রূপে ডুবিয়ে দেওয়া৷ নিজের কাজে এইভাবে মনোনিবেশ করতে খুব কম অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই দেখেছি৷ সেদিন দেখেছিলাম উত্তমকুমারের মধ্যে৷ ওই একবারই উত্তমকুমারের সঙ্গে আমার দেখা হয়৷ 

কোনটাই বা ছিল সেই দৃশ্য, যাতে এতো মনঃসংযোগের প্রয়োজন পরে? সারিন মনে করতে পারছেন না৷ তার অন্যতম কারন, দৃশ্যটি শ্যুট হতে এত দেরি হচ্ছিল, যে তিনি আব অপেক্ষা করেননি৷ তা ছাড়া উত্তমকুমারের যেমন ছবি পাবেন মনে করে তাঁর সেটে আসা, তা-ও হয়নি৷ তিনি খানিক বিরক্তি নিয়েই সেট পরিত্যাগ করেন৷ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরা কেবল অনুমানই করতে পারি মাত্র৷ সারিন শ্যুট করেছিলেন আউটডোরে৷ এবং ছবিতে উত্তম-অমলের আউটডোর সিন একটিই ছিল৷ সেই সিনে হুইলচেয়ারে বসা উত্তম তীরধনুকে টার্গেট প্র্যাক্টিস করছেন৷ আর চলছে তর্কবিতর্ক৷ ছোট ভাইয়ের সঙ্গে৷ উত্তমের ধনুক এবং অভিযোগ তীর- দু'টোরই লক্ষ্য অমল! 

সে কারণেই কি এত গম্ভীর ছিল সেটের পরিবেশ?

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Census 2010

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors