সোমবার কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৩০,৭৪০ টাকা৷ অথচ, এদিনই দেশের প্রথম সারির তিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ২৪ ক্যারাট সোনার ১০ গ্রাম কয়েনের দাম ছিল ৩২,০০০ টাকারও বেশি৷ বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি এদিন ১০ গ্রাম সোনার কয়েন বিক্রি করেছে ৩৫,০০০ টাকারও বেশি দরে৷ এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে কয়েনের দরের ফারাকও আকাশ পাতাল৷ বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে দাম অনেকটাই বেশি৷
ব্যাঙ্ক থেকে সোনার কয়েন কিনলে তাই লাভ নেই গ্রাহকদের৷ বাজারের থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে সোনা কিনতে হয়৷ বেশি দাম না হয় হল, ব্যাঙ্ক থেকে একবার ওই কয়েন কিনলে বিক্রি করবেন কোথায়? ব্যাঙ্ক বা পোষ্ট অফিস বিক্রি করা সোনা বা রুপোর কয়েন কেনে না৷ অতএব, যেতে হবে সেই জুয়েলারের কাছে৷ সেখানেও কী ঝামেলা কম? ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন যদি বা সোনার দোকানদার নেন, তার বদলে নগদ টাকা দেবেন না৷ পরিবর্তে, দোকানদারের কাছ থেকে তাঁর তৈরি গয়নাই নিতে হবে৷
কিন্তু কলকাতার পি সি চন্দ্র, সেনকো, অঞ্জলি জুয়েলার্স, তনিশক এরা কেউই ব্যাঙ্কের সোনার কয়েন বা বার নগদের বিনিময়ে কেনে না৷ তবে, তাঁদের দোকান থেকে কেনা কয়েন হলে সেটার বদলে ক্যাশ দেওয়া হতে পারে৷ এ ছাড়া সবই গয়না হিসেবে এক্সচেঞ্জ হয়৷ বউবাজারের গিণি এম্পোরিয়ামের সমর কুমার দে বলেছেন, 'আমরা সোনার কয়েন বিক্রি করতে খুব একটা উত্সাহী নই৷ অলঙ্কার বিক্রিতেই বেশি মনোযোগ দিই৷
তবে সোনার কয়েন বিক্রি হয় না এমন নয়৷ কেউ মেয়ে ছোট থাকাকালীন সোনার কয়েন কেনেন৷ যাতে বড় হয়ে ওই কয়েন থেকে কোনও গয়না তিনি মেয়ের জন্য তৈরি করে দিতে পারেন৷ নগদে লেনদেনের বিষয়ে আমরা আগ্রহী নই৷ সেই জন্য কয়েনের বদলে গয়না তৈরির উপরই বেশি জোর দিই৷' 'ব্যাঙ্করা বিক্রি হয়ে যাওয়া সোনার কয়েন কেনে না৷ তাই, গ্রাহকরা সেই কয়েন আমাদের কাছেই বিক্রি জন্য নিয়ে আসেন৷ আমাদের মতো মধ্যসত্ত্বাভোগী লোকেদের দরকার কী? সরকার তো সোনার চাহিদা কমানোর জন্য অনেক কিছুই করছে৷ কেন ব্যাঙ্কদের বলছে না বিক্রি করা সোনার কয়েন কিনে নিতে?
ব্যাঙ্করা তো বিদেশি মুদ্রা বেচা-কেনা করে৷ ঠিক সেই রকম ভাবে - সোনার কয়েন কিনতে হলে একদাম, বেচতে হলে আরেক,' প্রশ্ন তোলেন এক স্বর্ণব্যবসায়ী৷ সত্যিই তো৷ দেশে সোনার চাহিদা কমাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ ব্যাঙ্কগুলিতে গোল্ড ডিপোজিট প্রকল্প চালু করা, গোল্ড ইটিএফগুলিকে ব্যাঙ্কগুলিতে সোনা জমা রাখতে বলা - এমন অনেক চিন্তা ভাবনাই চলছে৷ কিন্তু, একটা সময় ব্যাঙ্কগুলিকে সোনার কয়েন বিক্রি করার অনুমতি দিলেও, এখন তাদের কেন সেই সোনার কয়েন গ্রাহকদের কাছ থেকে কিনে নিতে বলা হচ্ছে না? 'আর ব্যাঙ্কদেরই দেখুন৷ সবাই তো বলছে আমরা সোনার কয়েন আমদানি করে আনছি৷ তাহলে, এক ব্যাঙ্ক থেকে আরেক ব্যাঙ্কে একই ওজনের সোনার দামে এত ফারাক কেন? গ্রাহকরা কী তাহলে ব্যাঙ্ক থেকে সোনা কিনতে গিয়ে ঠকছেন না? বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সোনার কয়েনের দাম বিভিন্ন - এতে তো গ্রাহকরা আরও বিমূঢ় হতে বাধ্য,' ওই স্বর্ণব্যবসায়ী জানালেন৷
এক ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুমের কর্মী জানালেন, 'কয়েন গলিয়ে গয়না বানাতে গেলে গলানোর খরচ পড়ে৷ পাশাপাশি, রুপো ও তামা মিশিয়ে খাদ তৈরি করতে হয়৷ যাতে গয়নার নকশা আনা যায়৷ এই খরচের জন্য সোনার মূল্যটা কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি, সোনার কয়েনটি কতটা খাঁটি সেটাও যাচাই করতে হয়৷ যতই বিদেশি সার্টিফিকেট থাকুক প্রতিটি দোকান গ্রাহকের থেকে কেনা সোনা যাচাই করে নিতে চান৷ তাই, সোনার বাজার দর যাই থাকুক, ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন কোনও দোকানে বিক্রি করতে গেলে দাম বেশ কিছুটা কম পাওয়া যায়৷'
দীপাবলিতে ঢেলে সোনার কয়েন বিক্রি হয়েছিল বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে৷ পাল্লা দিতে ৭ শতাংশ ডিসকাউন্টে সোনার কয়েন দিচ্ছিল পোস্ট অফিসও৷ তবে, উত্সব ফুরোতে সোনার কয়েনের মোহও কেটে গিয়েছে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে দীপাবলিতে বিক্রি ভালো হলেও তা স্বর্ণব্যবসায়ীদের বিক্রিতে টেক্কা দিতে পারেনি৷
সোনার কয়েন মানুষ কেনে সেটার 'অ্যাসেট ভ্যালু'র জন্য৷ অর্থাত্ , প্রয়োজনে সেই সোনা বিক্রি করে বিপদের সময় হাতে কিছু নগদ আসে৷ কিন্তু, ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস থেকে কেনা সোনার কয়েন নিয়ে গ্রাহককে নগদ দিতে চায় না কোনও স্বর্ণব্যবসায়ীই৷ সেটা বউবাজরের বহু পুরনো দোকান মালিক হোক, বা কোনও ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুম৷ প্রত্যেকেরই বক্তব্য ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন গলিয়ে গয়না বানান, তো ঠিক আছে৷ কিন্তু ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের গোল্ড কয়েনের বদলে নগদ মিলবে না৷
এই ব্যবস্থার জন্য বিপদে পড়েছে ব্যাঙ্কগুলিও৷ যে সোনার কয়েন ব্যাঙ্ক বিক্রি করছে, সেটা গ্রাহকের কাছ থেকে কিনতে পারবে না তারা৷ কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই অনুমতি দেয় না৷ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহককে সোনার কয়েন ও বার গ্রাহকদের কাছ থেকে কিনতে পারে না৷ শুধুমাত্র বিক্রি করতে পারে৷ সুতরাং গ্রাহকদের প্রথম চিন্তা হয়, ব্যাঙ্ক থেকে সোনার কয়েন কিনলে বিক্রি করবেন কোথায়, যেখানে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে৷ অন্যদিকে, স্বর্ণব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সোনার কয়েন গলিয়ে অলঙ্কার গড়ে দেওয়া যাবে৷ এবং তখন কিছু সোনা বাদ যাবে৷ তবে নগদ দেওয়া যাবে না৷
ব্যাঙ্ক কর্তাদের বক্তব্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সোনা বিক্রি করুক৷ কিন্তু কেনা-বেচা এই দুই অপশন খোলা না থাকলে ব্যাঙ্কগুলি সোনার বাজারে কীভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলবে? এ বিষয়ে আরবিআইয়ের বক্তব্য, রাতারাতি ব্যাঙ্ককে সোনা কেনার অধিকার দেওয়া যায় না৷ ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস থেকে সোনার কয়েন কেনার বিষয়ে ক্রেতাদের নিরুত্সাহের আরও একটি কারণ রয়েছে৷ স্বর্ণব্যবসায়ী ও ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুমের চেয়ে ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে ৫ বা ১০ গ্রাম সোনার কয়েনের দাম অনেকটাই বেশি৷ আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের মধ্যে দামের আকাশ পাতাল ফারাক৷ কখনও ৫ গ্রামের ক্ষেত্রে ফারাকটা দাঁড়াচ্ছে ২০০০ টাকা মতো৷ কখনও আবার ১০ গ্রামের ক্ষেত্রে দামের ফারাক হয়ে যাচ্ছে ৪০০০ টাকা মতো৷ এ বিষয়ে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের বক্তব্য, 'আমরা ২৪ ক্যারাট সুইস গোল্ড বিক্রি করি৷ তাই আমাদের দামটা একটু বেশি৷' আরবিআই স্পষ্ট জানিয়েছে, সোনার কয়েনের দাম নির্ধারণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক৷ সুতরাং ব্যাঙ্কদের নির্ধারিত মূল্যের উপর প্রশ্ন করার কেউ নেই৷
নিয়মের ফাঁসে আটকে গিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি, সঙ্গে ক্রেতারাও৷ অধিকাংশেরই বক্তব্য, যে ব্যাঙ্ক সোনা বিক্রি করছে সেই ব্যাঙ্ক সোনা কিনবে না কেন? গোলপার্কের বাসিন্দা পেশায় অধ্যাপিকা মীনা চৌধুরীর বক্তব্য, আমার কাছে ব্যাঙ্কের সার্টিফিকেট রয়েছে৷ আয়কর জমা দিই তার প্রমাণপত্র রয়েছে৷ বাকি যা যা নথি দরকার সোনা বিক্রি করতে গেলে সে সমস্তই রয়েছে৷ তা হলে ব্যাঙ্ক কেন আমার সোনার কয়েন কিনবে না? আমাকে কেন স্বর্ণব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সোনার কয়েনের বদলে কম মূল্যের গয়না নেব৷ যখন এক্সচেঞ্জ অপশন নেই তখন ব্যাঙ্কগুলিকে কেন সোনার বিক্রির অনুমতিই বা দেওয়া হল এ প্রশ্নের কোনও সহজ উত্তর নেই৷ তাই, ব্যাঙ্ক বা পোষ্ট অফিস থেকে সোনা কেনার বদলে নামী সোনার দোকান থেকে কেনা ভালো৷ শুধু হলমার্ক প্রত্যয়িত হলেই হল৷
ব্যাঙ্ক থেকে সোনার কয়েন কিনলে তাই লাভ নেই গ্রাহকদের৷ বাজারের থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে সোনা কিনতে হয়৷ বেশি দাম না হয় হল, ব্যাঙ্ক থেকে একবার ওই কয়েন কিনলে বিক্রি করবেন কোথায়? ব্যাঙ্ক বা পোষ্ট অফিস বিক্রি করা সোনা বা রুপোর কয়েন কেনে না৷ অতএব, যেতে হবে সেই জুয়েলারের কাছে৷ সেখানেও কী ঝামেলা কম? ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন যদি বা সোনার দোকানদার নেন, তার বদলে নগদ টাকা দেবেন না৷ পরিবর্তে, দোকানদারের কাছ থেকে তাঁর তৈরি গয়নাই নিতে হবে৷
কিন্তু কলকাতার পি সি চন্দ্র, সেনকো, অঞ্জলি জুয়েলার্স, তনিশক এরা কেউই ব্যাঙ্কের সোনার কয়েন বা বার নগদের বিনিময়ে কেনে না৷ তবে, তাঁদের দোকান থেকে কেনা কয়েন হলে সেটার বদলে ক্যাশ দেওয়া হতে পারে৷ এ ছাড়া সবই গয়না হিসেবে এক্সচেঞ্জ হয়৷ বউবাজারের গিণি এম্পোরিয়ামের সমর কুমার দে বলেছেন, 'আমরা সোনার কয়েন বিক্রি করতে খুব একটা উত্সাহী নই৷ অলঙ্কার বিক্রিতেই বেশি মনোযোগ দিই৷
তবে সোনার কয়েন বিক্রি হয় না এমন নয়৷ কেউ মেয়ে ছোট থাকাকালীন সোনার কয়েন কেনেন৷ যাতে বড় হয়ে ওই কয়েন থেকে কোনও গয়না তিনি মেয়ের জন্য তৈরি করে দিতে পারেন৷ নগদে লেনদেনের বিষয়ে আমরা আগ্রহী নই৷ সেই জন্য কয়েনের বদলে গয়না তৈরির উপরই বেশি জোর দিই৷' 'ব্যাঙ্করা বিক্রি হয়ে যাওয়া সোনার কয়েন কেনে না৷ তাই, গ্রাহকরা সেই কয়েন আমাদের কাছেই বিক্রি জন্য নিয়ে আসেন৷ আমাদের মতো মধ্যসত্ত্বাভোগী লোকেদের দরকার কী? সরকার তো সোনার চাহিদা কমানোর জন্য অনেক কিছুই করছে৷ কেন ব্যাঙ্কদের বলছে না বিক্রি করা সোনার কয়েন কিনে নিতে?
ব্যাঙ্করা তো বিদেশি মুদ্রা বেচা-কেনা করে৷ ঠিক সেই রকম ভাবে - সোনার কয়েন কিনতে হলে একদাম, বেচতে হলে আরেক,' প্রশ্ন তোলেন এক স্বর্ণব্যবসায়ী৷ সত্যিই তো৷ দেশে সোনার চাহিদা কমাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ ব্যাঙ্কগুলিতে গোল্ড ডিপোজিট প্রকল্প চালু করা, গোল্ড ইটিএফগুলিকে ব্যাঙ্কগুলিতে সোনা জমা রাখতে বলা - এমন অনেক চিন্তা ভাবনাই চলছে৷ কিন্তু, একটা সময় ব্যাঙ্কগুলিকে সোনার কয়েন বিক্রি করার অনুমতি দিলেও, এখন তাদের কেন সেই সোনার কয়েন গ্রাহকদের কাছ থেকে কিনে নিতে বলা হচ্ছে না? 'আর ব্যাঙ্কদেরই দেখুন৷ সবাই তো বলছে আমরা সোনার কয়েন আমদানি করে আনছি৷ তাহলে, এক ব্যাঙ্ক থেকে আরেক ব্যাঙ্কে একই ওজনের সোনার দামে এত ফারাক কেন? গ্রাহকরা কী তাহলে ব্যাঙ্ক থেকে সোনা কিনতে গিয়ে ঠকছেন না? বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সোনার কয়েনের দাম বিভিন্ন - এতে তো গ্রাহকরা আরও বিমূঢ় হতে বাধ্য,' ওই স্বর্ণব্যবসায়ী জানালেন৷
এক ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুমের কর্মী জানালেন, 'কয়েন গলিয়ে গয়না বানাতে গেলে গলানোর খরচ পড়ে৷ পাশাপাশি, রুপো ও তামা মিশিয়ে খাদ তৈরি করতে হয়৷ যাতে গয়নার নকশা আনা যায়৷ এই খরচের জন্য সোনার মূল্যটা কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি, সোনার কয়েনটি কতটা খাঁটি সেটাও যাচাই করতে হয়৷ যতই বিদেশি সার্টিফিকেট থাকুক প্রতিটি দোকান গ্রাহকের থেকে কেনা সোনা যাচাই করে নিতে চান৷ তাই, সোনার বাজার দর যাই থাকুক, ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন কোনও দোকানে বিক্রি করতে গেলে দাম বেশ কিছুটা কম পাওয়া যায়৷'
দীপাবলিতে ঢেলে সোনার কয়েন বিক্রি হয়েছিল বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে৷ পাল্লা দিতে ৭ শতাংশ ডিসকাউন্টে সোনার কয়েন দিচ্ছিল পোস্ট অফিসও৷ তবে, উত্সব ফুরোতে সোনার কয়েনের মোহও কেটে গিয়েছে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে দীপাবলিতে বিক্রি ভালো হলেও তা স্বর্ণব্যবসায়ীদের বিক্রিতে টেক্কা দিতে পারেনি৷
সোনার কয়েন মানুষ কেনে সেটার 'অ্যাসেট ভ্যালু'র জন্য৷ অর্থাত্ , প্রয়োজনে সেই সোনা বিক্রি করে বিপদের সময় হাতে কিছু নগদ আসে৷ কিন্তু, ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস থেকে কেনা সোনার কয়েন নিয়ে গ্রাহককে নগদ দিতে চায় না কোনও স্বর্ণব্যবসায়ীই৷ সেটা বউবাজরের বহু পুরনো দোকান মালিক হোক, বা কোনও ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুম৷ প্রত্যেকেরই বক্তব্য ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন গলিয়ে গয়না বানান, তো ঠিক আছে৷ কিন্তু ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের গোল্ড কয়েনের বদলে নগদ মিলবে না৷
এই ব্যবস্থার জন্য বিপদে পড়েছে ব্যাঙ্কগুলিও৷ যে সোনার কয়েন ব্যাঙ্ক বিক্রি করছে, সেটা গ্রাহকের কাছ থেকে কিনতে পারবে না তারা৷ কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই অনুমতি দেয় না৷ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহককে সোনার কয়েন ও বার গ্রাহকদের কাছ থেকে কিনতে পারে না৷ শুধুমাত্র বিক্রি করতে পারে৷ সুতরাং গ্রাহকদের প্রথম চিন্তা হয়, ব্যাঙ্ক থেকে সোনার কয়েন কিনলে বিক্রি করবেন কোথায়, যেখানে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে৷ অন্যদিকে, স্বর্ণব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সোনার কয়েন গলিয়ে অলঙ্কার গড়ে দেওয়া যাবে৷ এবং তখন কিছু সোনা বাদ যাবে৷ তবে নগদ দেওয়া যাবে না৷
ব্যাঙ্ক কর্তাদের বক্তব্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সোনা বিক্রি করুক৷ কিন্তু কেনা-বেচা এই দুই অপশন খোলা না থাকলে ব্যাঙ্কগুলি সোনার বাজারে কীভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলবে? এ বিষয়ে আরবিআইয়ের বক্তব্য, রাতারাতি ব্যাঙ্ককে সোনা কেনার অধিকার দেওয়া যায় না৷ ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস থেকে সোনার কয়েন কেনার বিষয়ে ক্রেতাদের নিরুত্সাহের আরও একটি কারণ রয়েছে৷ স্বর্ণব্যবসায়ী ও ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুমের চেয়ে ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে ৫ বা ১০ গ্রাম সোনার কয়েনের দাম অনেকটাই বেশি৷ আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের মধ্যে দামের আকাশ পাতাল ফারাক৷ কখনও ৫ গ্রামের ক্ষেত্রে ফারাকটা দাঁড়াচ্ছে ২০০০ টাকা মতো৷ কখনও আবার ১০ গ্রামের ক্ষেত্রে দামের ফারাক হয়ে যাচ্ছে ৪০০০ টাকা মতো৷ এ বিষয়ে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের বক্তব্য, 'আমরা ২৪ ক্যারাট সুইস গোল্ড বিক্রি করি৷ তাই আমাদের দামটা একটু বেশি৷' আরবিআই স্পষ্ট জানিয়েছে, সোনার কয়েনের দাম নির্ধারণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক৷ সুতরাং ব্যাঙ্কদের নির্ধারিত মূল্যের উপর প্রশ্ন করার কেউ নেই৷
নিয়মের ফাঁসে আটকে গিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি, সঙ্গে ক্রেতারাও৷ অধিকাংশেরই বক্তব্য, যে ব্যাঙ্ক সোনা বিক্রি করছে সেই ব্যাঙ্ক সোনা কিনবে না কেন? গোলপার্কের বাসিন্দা পেশায় অধ্যাপিকা মীনা চৌধুরীর বক্তব্য, আমার কাছে ব্যাঙ্কের সার্টিফিকেট রয়েছে৷ আয়কর জমা দিই তার প্রমাণপত্র রয়েছে৷ বাকি যা যা নথি দরকার সোনা বিক্রি করতে গেলে সে সমস্তই রয়েছে৷ তা হলে ব্যাঙ্ক কেন আমার সোনার কয়েন কিনবে না? আমাকে কেন স্বর্ণব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সোনার কয়েনের বদলে কম মূল্যের গয়না নেব৷ যখন এক্সচেঞ্জ অপশন নেই তখন ব্যাঙ্কগুলিকে কেন সোনার বিক্রির অনুমতিই বা দেওয়া হল এ প্রশ্নের কোনও সহজ উত্তর নেই৷ তাই, ব্যাঙ্ক বা পোষ্ট অফিস থেকে সোনা কেনার বদলে নামী সোনার দোকান থেকে কেনা ভালো৷ শুধু হলমার্ক প্রত্যয়িত হলেই হল৷
No comments:
Post a Comment